ঢাকা ০৯:৪০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৩০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢাকাই খাবারকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে চান রন্ধন শিল্পী রিমঝিম

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০১:৪২:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ জুন ২০২৩ ৫১৬ বার পড়া হয়েছে

নিজের তৈরি খাবার হাতে রিমঝিম

ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

অনিরুদ্ধ

৪০০ বছর আগের পুরাতন ঢাকা এখনও জমজমাট। পুরাতন ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাতাসে সুবাস ছড়ায় বৈচিত্র্যময় ঢাকাই খাবার। সেই স্বাদ নিতে দূরদূরান্তের মানুষ এখানে ছুটে আসেন। নানা পদের খাবারের তালিকায় ঢাকাই কাচ্চি, টানা পারোটা, চাপমাংস, বিরিয়ানি, কাবুলি, খিচুড়ি, শিরবিরঞ্জ, হালিম, বাকরখানি রুটি, চালের গুঁড়ার পিঠা, দোলমাজাতীয় তরকারিসহ আরও বাহারী রকমের খাবার। জিবে জল আনা খাবারের জন্য পুরাতন ঢাকার নামযশ প্রাচীণ।

ঢাকার নবাবদের বাবুর্চিদের হাতে তৈরি খাবার মোগল খাবার হিসেবে পরিচিতি পায়। ঢাকার রান্নায় ব্যবহূত অনুষঙ্গ যুক্ত হয়ে দিনে দিনে এই খাবারই ঢাকাই খাবার নামে পুরান ঢাকায় প্রচলিত হয়।
ঢাকাই খাবার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে দেবার উদ্যোগ নিয়েছেন রন্ধনশিল্পী রিমঝিম তথা রোমানা আফরোজ রিমঝিম। এরই মধ্যে ভারতের একটি প্রসিদ্ধ রন্ধন প্রতিযোগীতার বিচারক হিসাবেও আমন্ত্রিত হয়েছেন রিমঝিম।

এই রন্ধন শিল্পী জানালেন, ঢাকার নবাব তথা ঢাকার আদি খাবারকে পরিচিতি করার উদ্যোগ নিয়েছেন। মজাদার ঢাকাই খাবারের স্বাদ নিতে এখনও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসেন অনেকে। তারা ঢাকাই খাবার খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন।

রিমঝিম বিভিন্ন পদের ঢাকাই খাবার তৈরি করে থাকেন। তারমধ্যে ঢাকাই বিরিয়ানী, কাচ্চি, পাক্কি বিরিয়ানী, নান, হালিম, ভুনা খিচুড়ি, বিরিয়ানী, ঢাকাই মোগলাই, চাপ মাংস, পারোটা, পোলাও, খিচুড়ি থেকে শুরু আরও কত রকমের খাবার।

ঢাকাই খাবার তৈরির উদ্যোগের অংশ হিসাবে একটি ‘প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ খুলে সেখানে বেকার নারী এবং শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবেন। নারীকে সাবলম্বি করার তার এই উদ্যোগের বিষয়ে বলেন, আর্থসামাজিক উন্নয়নে নারী সমাজের ভূমিকা রয়েছে। সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের রন্ধন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত করে তাদের অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বি করতে চান রিমঝিম।

ঢাকার খাবারকে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে দিতে কাজ শুরু করেছেন। বাংলাদেশের পাশর্^বর্তী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় ঢাকাই খাবারের ওপর প্রদর্শনী এবং কর্মশালার আয়োজন করবেন। সেখানে বাংলার খাবার বিশেষ করে ঢাকার মুখোরোচক খাবারের স্বাদ দিতে চান রাজ্যবাসীকে।

রিমঝিম বলেন, আগরতলার সাংস্কৃতি, ভাষার সঙ্গে বাংলাদেশের মিল রয়েছে। তাছাড়া ত্রিপুরার বহু বাঙালির স্বজন এখনও বাংলাদেশে বসবাস করছেন। সেক্ষেত্রে ঢাকার খাবারের প্রতি তাদের একটা আলাদা আকর্ষণ রয়েছে। রিমঝিমের বিশ^াস তার হাতের রান্নার স্বাদ একবার যারা নেবেন, তারা অবশ্যই সেই খাবারের কথা দীর্ঘ দিন মনে রাখবেন।

দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করছেন রিমঝিম

রান্নার পাশাপাশি সমাজ সেবায় নিজেকে যুক্ত করেছেন রিমঝিম। তিনি মনে করেন, সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য কিছু করা দরকার। অবহেলিত নারীদের বাদ দিয়ে আমাদের সমাজ সামনে এগিয়ে যেতে পারে না। তাদেরকে রান্নার পাশাপাশি হাতের কাজও শেখাতে চান। করোনাকালীন এবং রমজানে সাধ্যানুযায়ী সুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করে থাকেন। সমাজের অনগ্রসর মানুষগুলোর জীবনে আলো চড়িয়ে দিতে চান রোমানা আফরোজ রিমঝিম।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে রিমঝিম

ঢাকাই খাবার বলে যে খাবার প্রচলিত, সেটা মূলত মোগলাই খাবার হলেও এর রকমভেদ রয়েছে। পারস্যের খাদ্যরীতির সঙ্গে ঢাকার খাদ্যরীতির মিশেল ঘটেছে। রান্নার ঢঙে পরিবর্তন এসেছে। পারস্যের রান্নায় যে মসলা ব্যবহ্্রত হয়, তার পরিবর্তে দেশীয় মসলা যুক্ত হয়েছে। কালক্রমে তৈরি হয়েছে নতুন এক ধারার খাবার। এটাই ঢাকাই খাবার।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

ঢাকাই খাবারকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে চান রন্ধন শিল্পী রিমঝিম

আপডেট সময় : ০১:৪২:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ জুন ২০২৩

অনিরুদ্ধ

৪০০ বছর আগের পুরাতন ঢাকা এখনও জমজমাট। পুরাতন ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাতাসে সুবাস ছড়ায় বৈচিত্র্যময় ঢাকাই খাবার। সেই স্বাদ নিতে দূরদূরান্তের মানুষ এখানে ছুটে আসেন। নানা পদের খাবারের তালিকায় ঢাকাই কাচ্চি, টানা পারোটা, চাপমাংস, বিরিয়ানি, কাবুলি, খিচুড়ি, শিরবিরঞ্জ, হালিম, বাকরখানি রুটি, চালের গুঁড়ার পিঠা, দোলমাজাতীয় তরকারিসহ আরও বাহারী রকমের খাবার। জিবে জল আনা খাবারের জন্য পুরাতন ঢাকার নামযশ প্রাচীণ।

ঢাকার নবাবদের বাবুর্চিদের হাতে তৈরি খাবার মোগল খাবার হিসেবে পরিচিতি পায়। ঢাকার রান্নায় ব্যবহূত অনুষঙ্গ যুক্ত হয়ে দিনে দিনে এই খাবারই ঢাকাই খাবার নামে পুরান ঢাকায় প্রচলিত হয়।
ঢাকাই খাবার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে দেবার উদ্যোগ নিয়েছেন রন্ধনশিল্পী রিমঝিম তথা রোমানা আফরোজ রিমঝিম। এরই মধ্যে ভারতের একটি প্রসিদ্ধ রন্ধন প্রতিযোগীতার বিচারক হিসাবেও আমন্ত্রিত হয়েছেন রিমঝিম।

এই রন্ধন শিল্পী জানালেন, ঢাকার নবাব তথা ঢাকার আদি খাবারকে পরিচিতি করার উদ্যোগ নিয়েছেন। মজাদার ঢাকাই খাবারের স্বাদ নিতে এখনও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসেন অনেকে। তারা ঢাকাই খাবার খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন।

রিমঝিম বিভিন্ন পদের ঢাকাই খাবার তৈরি করে থাকেন। তারমধ্যে ঢাকাই বিরিয়ানী, কাচ্চি, পাক্কি বিরিয়ানী, নান, হালিম, ভুনা খিচুড়ি, বিরিয়ানী, ঢাকাই মোগলাই, চাপ মাংস, পারোটা, পোলাও, খিচুড়ি থেকে শুরু আরও কত রকমের খাবার।

ঢাকাই খাবার তৈরির উদ্যোগের অংশ হিসাবে একটি ‘প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ খুলে সেখানে বেকার নারী এবং শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবেন। নারীকে সাবলম্বি করার তার এই উদ্যোগের বিষয়ে বলেন, আর্থসামাজিক উন্নয়নে নারী সমাজের ভূমিকা রয়েছে। সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের রন্ধন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত করে তাদের অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বি করতে চান রিমঝিম।

ঢাকার খাবারকে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে দিতে কাজ শুরু করেছেন। বাংলাদেশের পাশর্^বর্তী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় ঢাকাই খাবারের ওপর প্রদর্শনী এবং কর্মশালার আয়োজন করবেন। সেখানে বাংলার খাবার বিশেষ করে ঢাকার মুখোরোচক খাবারের স্বাদ দিতে চান রাজ্যবাসীকে।

রিমঝিম বলেন, আগরতলার সাংস্কৃতি, ভাষার সঙ্গে বাংলাদেশের মিল রয়েছে। তাছাড়া ত্রিপুরার বহু বাঙালির স্বজন এখনও বাংলাদেশে বসবাস করছেন। সেক্ষেত্রে ঢাকার খাবারের প্রতি তাদের একটা আলাদা আকর্ষণ রয়েছে। রিমঝিমের বিশ^াস তার হাতের রান্নার স্বাদ একবার যারা নেবেন, তারা অবশ্যই সেই খাবারের কথা দীর্ঘ দিন মনে রাখবেন।

দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করছেন রিমঝিম

রান্নার পাশাপাশি সমাজ সেবায় নিজেকে যুক্ত করেছেন রিমঝিম। তিনি মনে করেন, সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য কিছু করা দরকার। অবহেলিত নারীদের বাদ দিয়ে আমাদের সমাজ সামনে এগিয়ে যেতে পারে না। তাদেরকে রান্নার পাশাপাশি হাতের কাজও শেখাতে চান। করোনাকালীন এবং রমজানে সাধ্যানুযায়ী সুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করে থাকেন। সমাজের অনগ্রসর মানুষগুলোর জীবনে আলো চড়িয়ে দিতে চান রোমানা আফরোজ রিমঝিম।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে রিমঝিম

ঢাকাই খাবার বলে যে খাবার প্রচলিত, সেটা মূলত মোগলাই খাবার হলেও এর রকমভেদ রয়েছে। পারস্যের খাদ্যরীতির সঙ্গে ঢাকার খাদ্যরীতির মিশেল ঘটেছে। রান্নার ঢঙে পরিবর্তন এসেছে। পারস্যের রান্নায় যে মসলা ব্যবহ্্রত হয়, তার পরিবর্তে দেশীয় মসলা যুক্ত হয়েছে। কালক্রমে তৈরি হয়েছে নতুন এক ধারার খাবার। এটাই ঢাকাই খাবার।