ডিং-ইউনূস বৈঠক বাংলাদেশ চীন সম্পর্ক আরও গভীর

- আপডেট সময় : ০৮:৪৩:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫ ৬৬ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন। সেই সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও গভীর করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে দেশটি।
দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তিতে উভয় দেশ বিনিয়োগ, বাণিজ্য-সাংস্কৃতিক সম্পর্ক এবং জনগণের মধ্যে পারস্পরিক বিনিময় বাড়াতেও একমত দুই দেশ।
চীন বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য আলোচনা শুরু করতে আগ্রহী। তিনি আরও বলেন, তার দেশ মোংলা বন্দরের আধুনিকায়ন এবং দাশেরকান্দি পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পের উন্নয়নেও অর্থায়ন করবে।
বৃহস্পতিবার চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী ডিং শুয়েশিয়াং হাইনানের উপকূলীয় শহরে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন।
চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ডিং চীন সফররত ড. ইউনূসকে বলেন, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আপনার সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করছেন। তিনি আরও বলেন, চীন আশা করে, অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সমৃদ্ধি অর্জন করবে।
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের তরফে ওয়ান-চায়না নীতি মেনে চলার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং বলেন, চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে যোগ দেওয়া প্রথম দক্ষিণ এশীয় দেশ হিসেবে ঢাকা গর্ববোধ করে।
বাংলাদেশ বিভিন্ন উন্নয়ন ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন প্রকল্পে চীনের সহায়তা চেয়েছে এবং চীনা ঋণের সুদের হার তিন শতাংশ থেকে এক-দুই শতাংশে নামিয়ে আনার অনুরোধ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ চীনা অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলোর কমিটমেন্ট ফি মওকুফের আহ্বান জানানো হয় বৈঠকে।
ড. ইউনূস চীনের তৈরি পোশাক কারখানা, বৈদ্যুতিক যানবাহন, হালকা যন্ত্রপাতি, উচ্চ প্রযুক্তির ইলেকট্রনিকস, চিপ উৎপাদন এবং সৌর প্যানেল শিল্প বাংলাদেশে স্থানান্তর সহজ করতে বেইজিংয়ের সহায়তা চান।
উপ-প্রধানমন্ত্রী ডিং শুয়েশিয়াং জানান, ২০২৮ সাল পর্যন্ত চীনে বাংলাদেশি পণ্য শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে, যা বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের দুই বছর পর পর্যন্ত বহাল থাকবে।
উপ-প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, গত বছর চীন বাংলাদেশ থেকে আম রপ্তানির জন্য একটি প্রোটোকল সই করেছে।
চলতি বছরের গ্রীষ্মকাল থেকেই বাংলাদেশ থেকে চীনে আম রপ্তানি শুরু হবে। বেইজিং কাঁঠাল, পেয়ারাসহ বিভিন্ন জলজ পণ্য আমদানি করতেও আগ্রহী, যেন চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ভারসাম্যের বিশাল ব্যবধান কমানো যায়।
চীনা সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আরও বেশি স্কলারশিপ দেবে জানিয়ে উপ-প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরইমধ্যে হাজার হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে।
উপ-প্রধানমন্ত্রী ঢাকার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের জন্য চারটি সমুদ্রগামী জাহাজ কেনার ক্ষেত্রে চীনের অর্থায়নের আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের প্রচেষ্টায় চীন বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে নিয়ে সংলাপ করবে।
ড. ইউনূস চীনের নেতৃত্বের সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, বৃহস্পতিবারের এই বৈঠক ক্রমবর্ধমান বাংলাদেশ-চীন অংশীদারত্বের আরেকটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত করল।
তিনি বলেন, আসুন, আমরা একসঙ্গে কাজ করার সংকল্প নিই, যেন আমাদের দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয় এবং বন্ধুত্ব, সহযোগিতা ও পারস্পরিক অংশীদারত্বের একটি নতুন যুগের সূচনা হয়।
বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা ফওজুল কবির খান, প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান এবং বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।