ঢাকা ০৮:০৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গুপ্তচর যখন আপনার নিত্যসঙ্গী !

ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১১:৫৯:২২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ জুলাই ২০২১ ৩০৩ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ইসরায়েলের হার্জলিয়ায় এনএসও গ্রুপের অফিসের সামনে ফোন হাতে এক নারী। ছবি বিবিসি ও সংগৃহীত

বিজ্ঞানের বদৌলতে মঙ্গলগ্রহ যখন হাতের মুঠোয়, তখন আধুনিক বৈদ্যুতিক স্মার্ট একটি পকেটে রাখার যন্ত্র দিয়ে আপনার সকল তথ্য নিয়ে নেওয়াতো মামুলি ব্যাপার! সেই ক্ষেত্রে বলা চলে, আপনি গুপ্তচর আপনার নিত্যসঙ্গী এবং বর্তমান তথ্য-প্রযুক্তির যুগে তা ছাড়া চলেই না!

এমন অবস্থায় যখন জীবনব্যবস্থা, তখন ইচ্ছে মাফিক কারো ব্যক্তিগত বা প্রয়োজনীয় তথ্য বেহাত হওয়া আটকানো যায় না। বলা হয়ে থাকে এক্ষেত্রে আপনার পকেটে গুপ্তচর ঢোকানোর জন্য একটা স্মার্ট ফোন, একটি ম্যাসেজ এবং একটি ক্লিকই যথেষ্ট।

নিজের ব্যক্তিগত অডিও, ভিডিও, ছবি সকল কিছুই সুর সুর করে পৌঁছে যাবে গুপ্তচর নেতাদের কাছে।

আপনার ফোন থেকে আপনি যত মেসেজ বা ছবি পাঠান, কিংবা রিসিভ করুন, পেগাসাস তা কপি করে গোপনে পাচার করে। পাঠিয়ে দেয় নির্দিষ্ট জায়গায়। এই স্পাইওয়্যারটি আপনার

অগোচরে ফোনের কথাবার্তা রেকর্ড করতে পারে, এমনকি ফোনের ক্যামেরা ব্যবহার করে গোপনে আপনার ভিডিও রেকর্ড করতে পারে।

বিবিসি বলছে, পেগাসাস ফোন হ্যাকিং: ইসরায়েলি প্রযুক্তি দিয়ে বিশ্ব জুড়ে রাজনীতিক, সাংবাদিক, আইনজীবীদের ওপর গোপন নজরদারি চালাচ্ছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার কর্মী, রাজনীতিক, সাংবাদিক এবং আইনজীবীদের ফোনের ওপর গোপনে নজরদারি করতে ইসরায়েলের একটি প্রতিষ্ঠান সরকারগুলোর কাছে একটি ফোন স্পাইওয়্যার বিক্রি করেছে বলে সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যাচ্ছে।

ইসরায়েলি কোম্পানি এনএসও গ্রুপের এই স্পাইওয়্যার কিনেছে যেসব ক্রেতা তারা ৫০ হাজার ফোনের ওপর গোপনে নজরদারী চালিয়েছে বলে খবরে বলা হচ্ছে।

এই তালিকা এবং এর ওপর তদন্তের প্রতিবেদনটি সারা বিশ্বের কিছু প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।

লন্ডনের দ্যা গার্ডিয়ানসহ ১৬টি সংবাদমাধ্যম একযোগে এই তদন্তের ফলাফল প্রকাশ করেছে।
তবে মোট কয়টি দেশে কতগুলো ফোন হ্যাক করা হয়েছে তা এখনও পরিষ্কার নয়।

আইওএস কিংবা অ্যান্ড্রয়েড-কোন ফোনই পেগাসাসের হাত ফসকে যেতে পারে না। ছবিতে ইসরায়েলে এনএসও গ্রুপের সদর দফতর।

আইওএস কিংবা অ্যান্ড্রয়েড -কোন ফোনই পেগাসাসের হাত থেকে নিস্তার পায় না।

ম্যালওয়্যারটি বিক্রি করেছে যে ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান সেটি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা বলছে, মানবাধিকার রেকর্ড ভাল এমন দেশের সামরিক বাহিনী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং গোয়েন্দা বিভাগের কাছে তারা এই সফটওয়্যার বিক্রি করেছে।

পেগাসাস নামে এই স্পাইওয়্যারটি সম্পর্কে ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্যা গার্ডিয়ান, ল্য মোঁদ এবং আরও ১৪টি সংবাদমাধ্যমে বিস্তারিত প্রকাশিত হয়েছে।

ভারতের নিউজ পোর্টাল দ্য ওয়্যার এই হ্যাকিংয়ের তালিকায় সে দেশের অন্তত ৩০০ রাজনীতিক, সাংবাদিক, অধিকার কর্মী, বিজ্ঞানীর নাম রয়েছে বলে জানিয়েছে।

তালিকায় এই পোর্টালের দু’জন প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিকের নামও রয়েছে বলে দ্য ওয়্যার জানাচ্ছে।

কাদের লক্ষ্য করে এই হ্যাকিং

সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগজির হত্যার কিছুদিনের মধ্যে তার বাগদত্তা হাতিশ চেংগিজ ফোনও পেগাসাস দিয়ে হ্যাক করা হয়।

সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগজির হত্যার কিছুদিনের মধ্যে তার বাগদত্তা হাতিশ চেংগিজের ফোনও পেগাসাস দিয়ে হ্যাক করা হয়।

পূর্ণাঙ্গ তালিকাটি এখনও প্রকাশ করা হয়নি। তবে এই তদন্তের সঙ্গে জড়িত সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, বিশ্বের ৫০টি দেশে অন্তত ১০০০ জনের নাম তারা জানতে পেরেছে।

এদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, অধিকার কর্মী এবং আরব দেশের রাজপরিবারের কয়েকজন সদস্য।

সিএনএন, আল জাজিরা এবং নিউইয়র্ক টাইমসসহ ১৮০ জনেরও বেশি সাংবাদিকের নাম এই তালিকায় রয়েছে।

এই অবৈধ নজরদারির ঘটনা বেশিরভাগ ঘটেছে মূলত ১০টি দেশে-ভারত, আজারবাইজান, বাহরাইন, হাংগেরি, কাজাখস্তান, মেক্সিকো, রোয়ান্ডা, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত।

তদন্তের অংশ হিসেবে যখন এসব দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, তখন তাদের মুখপাত্ররা পেগাসাস ব্যবহার এবং অবৈধভাবে নজরদারি চালানোর কথা অস্বীকার করেন।

পেগাসাস ব্যবহার করে কোন্ কোন্ দেশে কাদের ফোন হ্যাক করা হয়েছে তার বিস্তারিত তালিকা আগামী কয়েকদিনের মধ্যে প্রকাশ করা হবে বলে জানা যাচ্ছে।

পেগাসাস কীভাবে কাজ করে?

ব্রিটিশ দৈনিক দ্যা গার্ডিয়ান বলছে, পেগাসাস সম্ভবত কোন বেসরকারি কোম্পানির তৈরি সবচেয়ে শক্তিশালী স্পাইওয়্যার।আইওএস বা অ্যান্ড্রয়েড-চালিত ফোনের ওপর গোপনে নজরদারি চালানোর ক্ষমতা এই ম্যালওয়্যারটির রয়েছে।

দ্যা গার্ডিয়ানের এক বিস্তারিত রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, পেগাসাস যদি কোনভাবে একবার আপনার ফোনের মধ্যে ঢুকে যেতে পারে, তাহলে আপনার অজান্তে ম্যালওয়্যারটি আপনার ফোনকে ২৪ ঘণ্টার এক নজরদারির যন্ত্রে পরিণত করার ক্ষমতা রাখে।

আপনার ফোন থেকে আপনি যত মেসেজ বা ছবি পাঠান, কিংবা রিসিভ করুন, পেগাসাস তা কপি করে গোপনে পাচার করে পাঠিয়ে দেয় নির্দিষ্ট জায়গায়।

এই স্পাইওয়্যারটি আপনার অগোচরে ফোনের কথাবার্তা রেকর্ড করতে পারে, এমনকি ফোনের ক্যামেরা ব্যবহার করে গোপনে আপনার ভিডিও রেকর্ড করতে পারে।

আপনি কোথায় আছেন, কোথায় গিয়েছিলেন, অথবা কার কার সঙ্গে দেখা করেছেন, পেগাসাস সে সম্পর্কেও জানতে পারে বলে মনে করা হয়।

দ্যা গার্ডিয়ান জানাচ্ছে, ২০১৬ সালে গবেষকরা পেগাসাসের সবচেয়ে প্রথম ভার্সনটির কথা জানতে পারেন। সে সময় কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির ফোনে টেক্সট মেসেজ বা ইমেইলে পাঠানো হতো, যাতে থাকতো একটি লিংক।

সেই লিংকে ক্লিক করলেই পেগাসাস ফোনের নিয়ন্ত্রণ দখল করে নিতো। অবশ্য এরপর এনএসও গ্রুপ এই স্পাইওয়্যারের ক্ষমতাকে আরও বহুগুণ শক্তিশালী করেছে।

পকেটেই ডিজিটাল গুপ্তচর!

এই অনুসন্ধান নতুন একটি প্রশ্ন সামনে এনেছে। তা হলো ইসরাইলের সরকারই এনএসও গ্রুপের সঙ্গে জড়িত। প্রতিষ্ঠাতা নিভ, সালেভ এবং ওমরির নাম অনুসারেই গ্রুপের নাম। লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকা কোম্পানির ভেতরের একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, কোম্পানির

নীতিমালা স্টেট সিক্রেট (রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা)। তবে কোম্পানিকে একটা নিয়ম মেনে চলতে হয় যাকে ‘গোল্ডেনরুল’ বলা হয়। তা হলো যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং ইসরাইলে এটা ব্যবহার করা যায় না।

২০১১ সালে মেক্সিকো পেগাসাস স্পাইওয়্যার সর্বপ্রথম ক্রয় করে। এনএসও জানিয়েছে, ৪০টি দেশের ৬০টি সরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের ক্রেতা। ইতিমধ্যে সফটওয়্যারটির অপব্যবহার হয়েছে কি না তা জানতে ইসরাইল সরকার একটি তদন্ত কমিশনও গঠন করেছে। যদিও এনএসও সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

কতটা খরচ হয় গুপ্তচরবৃত্তিতে

২০১৬ সালে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছিল, এনএসও গ্রুপ পেগাসাস সফটওয়্যারের মূল্য নিয়ে থাকে ৫ লাখ ডলার। ওয়াশিংটন পোস্ট, লন্ডনের দ্য গার্ডিয়ান, ফ্রান্সের ল্য মঁদ, সাংবাদিকদের

সংগঠন ফরবিডেন স্টোরিস এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিশ্বের প্রথমসারির ১৭টি মিডিয়ার যৌথ অনুসন্ধানে পেগাসাস নিয়ে তথ্য বেরিয়ে এসেছে। একটি স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে

একজন মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতায় এত বড় হস্তক্ষেপ হয়তো আর কারো দ্বারা সম্ভব নয়। অনুসন্ধানী কর্মসূচির নাম ছিল ‘পেগাসাস প্রজেক্ট’।

স্পাইওয়্যার সফটওয়্যার ঢোকানো হয়েছে কিনা তা জানতে অ্যামনেস্টি ৬৭টি ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষা করেছে। এর মাধ্যমে ৩৭টি পজিটিভ এসেছে। তবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনো স্পষ্ট নয়।

যে ১৪ জন রাষ্ট্র এবং সরকার প্রধান পেগাসাসের টার্গেট হয়েছেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে আছে তিন জন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট-ফ্রান্সের ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ, দক্ষিণ আফ্রিকার সিরিল রামাফোসা এবং ইরাকের বারহাম সালিহ। ১০ জন প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে তিন জন এখনও ক্ষমতায়।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, মিসরের মোস্তফা মাদব উলি এবং মরক্কোর সাদ-এদিন আলওথমানি। টার্গেট হয়েছেন মরক্কোর রাজা ষষ্ঠ মোহামেদ।

৩৪টি দেশের ৬০০ সরকারি কর্মকর্তা এবং রাজনীতিকের ফোন নম্বর রয়েছে। এছাড়া আরব রাজ পরিবারের সদস্য, ৬৪ কোম্পানি কর্মকর্তা, ১৮৯ সাংবাদিক এবং ৮৫ মানবাধিকার কর্মীরাও রয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

গুপ্তচর যখন আপনার নিত্যসঙ্গী !

আপডেট সময় : ১১:৫৯:২২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ জুলাই ২০২১

ইসরায়েলের হার্জলিয়ায় এনএসও গ্রুপের অফিসের সামনে ফোন হাতে এক নারী। ছবি বিবিসি ও সংগৃহীত

বিজ্ঞানের বদৌলতে মঙ্গলগ্রহ যখন হাতের মুঠোয়, তখন আধুনিক বৈদ্যুতিক স্মার্ট একটি পকেটে রাখার যন্ত্র দিয়ে আপনার সকল তথ্য নিয়ে নেওয়াতো মামুলি ব্যাপার! সেই ক্ষেত্রে বলা চলে, আপনি গুপ্তচর আপনার নিত্যসঙ্গী এবং বর্তমান তথ্য-প্রযুক্তির যুগে তা ছাড়া চলেই না!

এমন অবস্থায় যখন জীবনব্যবস্থা, তখন ইচ্ছে মাফিক কারো ব্যক্তিগত বা প্রয়োজনীয় তথ্য বেহাত হওয়া আটকানো যায় না। বলা হয়ে থাকে এক্ষেত্রে আপনার পকেটে গুপ্তচর ঢোকানোর জন্য একটা স্মার্ট ফোন, একটি ম্যাসেজ এবং একটি ক্লিকই যথেষ্ট।

নিজের ব্যক্তিগত অডিও, ভিডিও, ছবি সকল কিছুই সুর সুর করে পৌঁছে যাবে গুপ্তচর নেতাদের কাছে।

আপনার ফোন থেকে আপনি যত মেসেজ বা ছবি পাঠান, কিংবা রিসিভ করুন, পেগাসাস তা কপি করে গোপনে পাচার করে। পাঠিয়ে দেয় নির্দিষ্ট জায়গায়। এই স্পাইওয়্যারটি আপনার

অগোচরে ফোনের কথাবার্তা রেকর্ড করতে পারে, এমনকি ফোনের ক্যামেরা ব্যবহার করে গোপনে আপনার ভিডিও রেকর্ড করতে পারে।

বিবিসি বলছে, পেগাসাস ফোন হ্যাকিং: ইসরায়েলি প্রযুক্তি দিয়ে বিশ্ব জুড়ে রাজনীতিক, সাংবাদিক, আইনজীবীদের ওপর গোপন নজরদারি চালাচ্ছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার কর্মী, রাজনীতিক, সাংবাদিক এবং আইনজীবীদের ফোনের ওপর গোপনে নজরদারি করতে ইসরায়েলের একটি প্রতিষ্ঠান সরকারগুলোর কাছে একটি ফোন স্পাইওয়্যার বিক্রি করেছে বলে সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যাচ্ছে।

ইসরায়েলি কোম্পানি এনএসও গ্রুপের এই স্পাইওয়্যার কিনেছে যেসব ক্রেতা তারা ৫০ হাজার ফোনের ওপর গোপনে নজরদারী চালিয়েছে বলে খবরে বলা হচ্ছে।

এই তালিকা এবং এর ওপর তদন্তের প্রতিবেদনটি সারা বিশ্বের কিছু প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।

লন্ডনের দ্যা গার্ডিয়ানসহ ১৬টি সংবাদমাধ্যম একযোগে এই তদন্তের ফলাফল প্রকাশ করেছে।
তবে মোট কয়টি দেশে কতগুলো ফোন হ্যাক করা হয়েছে তা এখনও পরিষ্কার নয়।

আইওএস কিংবা অ্যান্ড্রয়েড-কোন ফোনই পেগাসাসের হাত ফসকে যেতে পারে না। ছবিতে ইসরায়েলে এনএসও গ্রুপের সদর দফতর।

আইওএস কিংবা অ্যান্ড্রয়েড -কোন ফোনই পেগাসাসের হাত থেকে নিস্তার পায় না।

ম্যালওয়্যারটি বিক্রি করেছে যে ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান সেটি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা বলছে, মানবাধিকার রেকর্ড ভাল এমন দেশের সামরিক বাহিনী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং গোয়েন্দা বিভাগের কাছে তারা এই সফটওয়্যার বিক্রি করেছে।

পেগাসাস নামে এই স্পাইওয়্যারটি সম্পর্কে ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্যা গার্ডিয়ান, ল্য মোঁদ এবং আরও ১৪টি সংবাদমাধ্যমে বিস্তারিত প্রকাশিত হয়েছে।

ভারতের নিউজ পোর্টাল দ্য ওয়্যার এই হ্যাকিংয়ের তালিকায় সে দেশের অন্তত ৩০০ রাজনীতিক, সাংবাদিক, অধিকার কর্মী, বিজ্ঞানীর নাম রয়েছে বলে জানিয়েছে।

তালিকায় এই পোর্টালের দু’জন প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিকের নামও রয়েছে বলে দ্য ওয়্যার জানাচ্ছে।

কাদের লক্ষ্য করে এই হ্যাকিং

সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগজির হত্যার কিছুদিনের মধ্যে তার বাগদত্তা হাতিশ চেংগিজ ফোনও পেগাসাস দিয়ে হ্যাক করা হয়।

সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগজির হত্যার কিছুদিনের মধ্যে তার বাগদত্তা হাতিশ চেংগিজের ফোনও পেগাসাস দিয়ে হ্যাক করা হয়।

পূর্ণাঙ্গ তালিকাটি এখনও প্রকাশ করা হয়নি। তবে এই তদন্তের সঙ্গে জড়িত সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, বিশ্বের ৫০টি দেশে অন্তত ১০০০ জনের নাম তারা জানতে পেরেছে।

এদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, অধিকার কর্মী এবং আরব দেশের রাজপরিবারের কয়েকজন সদস্য।

সিএনএন, আল জাজিরা এবং নিউইয়র্ক টাইমসসহ ১৮০ জনেরও বেশি সাংবাদিকের নাম এই তালিকায় রয়েছে।

এই অবৈধ নজরদারির ঘটনা বেশিরভাগ ঘটেছে মূলত ১০টি দেশে-ভারত, আজারবাইজান, বাহরাইন, হাংগেরি, কাজাখস্তান, মেক্সিকো, রোয়ান্ডা, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত।

তদন্তের অংশ হিসেবে যখন এসব দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, তখন তাদের মুখপাত্ররা পেগাসাস ব্যবহার এবং অবৈধভাবে নজরদারি চালানোর কথা অস্বীকার করেন।

পেগাসাস ব্যবহার করে কোন্ কোন্ দেশে কাদের ফোন হ্যাক করা হয়েছে তার বিস্তারিত তালিকা আগামী কয়েকদিনের মধ্যে প্রকাশ করা হবে বলে জানা যাচ্ছে।

পেগাসাস কীভাবে কাজ করে?

ব্রিটিশ দৈনিক দ্যা গার্ডিয়ান বলছে, পেগাসাস সম্ভবত কোন বেসরকারি কোম্পানির তৈরি সবচেয়ে শক্তিশালী স্পাইওয়্যার।আইওএস বা অ্যান্ড্রয়েড-চালিত ফোনের ওপর গোপনে নজরদারি চালানোর ক্ষমতা এই ম্যালওয়্যারটির রয়েছে।

দ্যা গার্ডিয়ানের এক বিস্তারিত রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, পেগাসাস যদি কোনভাবে একবার আপনার ফোনের মধ্যে ঢুকে যেতে পারে, তাহলে আপনার অজান্তে ম্যালওয়্যারটি আপনার ফোনকে ২৪ ঘণ্টার এক নজরদারির যন্ত্রে পরিণত করার ক্ষমতা রাখে।

আপনার ফোন থেকে আপনি যত মেসেজ বা ছবি পাঠান, কিংবা রিসিভ করুন, পেগাসাস তা কপি করে গোপনে পাচার করে পাঠিয়ে দেয় নির্দিষ্ট জায়গায়।

এই স্পাইওয়্যারটি আপনার অগোচরে ফোনের কথাবার্তা রেকর্ড করতে পারে, এমনকি ফোনের ক্যামেরা ব্যবহার করে গোপনে আপনার ভিডিও রেকর্ড করতে পারে।

আপনি কোথায় আছেন, কোথায় গিয়েছিলেন, অথবা কার কার সঙ্গে দেখা করেছেন, পেগাসাস সে সম্পর্কেও জানতে পারে বলে মনে করা হয়।

দ্যা গার্ডিয়ান জানাচ্ছে, ২০১৬ সালে গবেষকরা পেগাসাসের সবচেয়ে প্রথম ভার্সনটির কথা জানতে পারেন। সে সময় কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির ফোনে টেক্সট মেসেজ বা ইমেইলে পাঠানো হতো, যাতে থাকতো একটি লিংক।

সেই লিংকে ক্লিক করলেই পেগাসাস ফোনের নিয়ন্ত্রণ দখল করে নিতো। অবশ্য এরপর এনএসও গ্রুপ এই স্পাইওয়্যারের ক্ষমতাকে আরও বহুগুণ শক্তিশালী করেছে।

পকেটেই ডিজিটাল গুপ্তচর!

এই অনুসন্ধান নতুন একটি প্রশ্ন সামনে এনেছে। তা হলো ইসরাইলের সরকারই এনএসও গ্রুপের সঙ্গে জড়িত। প্রতিষ্ঠাতা নিভ, সালেভ এবং ওমরির নাম অনুসারেই গ্রুপের নাম। লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকা কোম্পানির ভেতরের একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, কোম্পানির

নীতিমালা স্টেট সিক্রেট (রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা)। তবে কোম্পানিকে একটা নিয়ম মেনে চলতে হয় যাকে ‘গোল্ডেনরুল’ বলা হয়। তা হলো যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং ইসরাইলে এটা ব্যবহার করা যায় না।

২০১১ সালে মেক্সিকো পেগাসাস স্পাইওয়্যার সর্বপ্রথম ক্রয় করে। এনএসও জানিয়েছে, ৪০টি দেশের ৬০টি সরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের ক্রেতা। ইতিমধ্যে সফটওয়্যারটির অপব্যবহার হয়েছে কি না তা জানতে ইসরাইল সরকার একটি তদন্ত কমিশনও গঠন করেছে। যদিও এনএসও সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

কতটা খরচ হয় গুপ্তচরবৃত্তিতে

২০১৬ সালে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছিল, এনএসও গ্রুপ পেগাসাস সফটওয়্যারের মূল্য নিয়ে থাকে ৫ লাখ ডলার। ওয়াশিংটন পোস্ট, লন্ডনের দ্য গার্ডিয়ান, ফ্রান্সের ল্য মঁদ, সাংবাদিকদের

সংগঠন ফরবিডেন স্টোরিস এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিশ্বের প্রথমসারির ১৭টি মিডিয়ার যৌথ অনুসন্ধানে পেগাসাস নিয়ে তথ্য বেরিয়ে এসেছে। একটি স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে

একজন মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতায় এত বড় হস্তক্ষেপ হয়তো আর কারো দ্বারা সম্ভব নয়। অনুসন্ধানী কর্মসূচির নাম ছিল ‘পেগাসাস প্রজেক্ট’।

স্পাইওয়্যার সফটওয়্যার ঢোকানো হয়েছে কিনা তা জানতে অ্যামনেস্টি ৬৭টি ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষা করেছে। এর মাধ্যমে ৩৭টি পজিটিভ এসেছে। তবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনো স্পষ্ট নয়।

যে ১৪ জন রাষ্ট্র এবং সরকার প্রধান পেগাসাসের টার্গেট হয়েছেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে আছে তিন জন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট-ফ্রান্সের ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ, দক্ষিণ আফ্রিকার সিরিল রামাফোসা এবং ইরাকের বারহাম সালিহ। ১০ জন প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে তিন জন এখনও ক্ষমতায়।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, মিসরের মোস্তফা মাদব উলি এবং মরক্কোর সাদ-এদিন আলওথমানি। টার্গেট হয়েছেন মরক্কোর রাজা ষষ্ঠ মোহামেদ।

৩৪টি দেশের ৬০০ সরকারি কর্মকর্তা এবং রাজনীতিকের ফোন নম্বর রয়েছে। এছাড়া আরব রাজ পরিবারের সদস্য, ৬৪ কোম্পানি কর্মকর্তা, ১৮৯ সাংবাদিক এবং ৮৫ মানবাধিকার কর্মীরাও রয়েছেন।