গবেষণা : ডেল্টার বিরুদ্ধে ফাইজারের টিকায় অ্যান্টিবডি পাঁচ ভাগের এক ভাগ

- আপডেট সময় : ০৬:৪৮:২৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ জুন ২০২১ ২৭১ বার পড়া হয়েছে
করোনার দুই বছরে পৃথিবীর মানুষ বহু গবেষণা এবং অজানা তথ্যে জানতে পেরেছেন। তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়টি এনে দিয়েছে মানুষের দোর গোড়ায়। যে কোন তথ্য এখন মানুষের দরজায় কড়া নাড়ে। বিজ্ঞানের এই আর্শিবাদকে আমরা সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পেরেছি? এমন প্রশ্নই সামনে চলে আসে।
এখন হাতের রেখা, ভাগ্যফল গনণা, জারফুক, তাবিজ-কবজ, ওঝার ওপর অনেক ক্ষেত্রে নির্ভরশীল হই। এগুলো যে আসলেই কিছুই নয়, করোনা তথা কভিড-১৯ আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।
করোনা ভারাসের শুরুর পর থেকে নানা ধরণ বেড়িয়ে এসেছে বিজ্ঞানিদের গবেষণায়। পৃথিবীতে করোনার মতো একটি ভাইরাসের টিকা এতোটা দ্রুত সময়ে আবিষ্কার এবং উৎপাদনের মধ্য দিয়ে তার প্রয়োগ শুরু হয়েছে, আগে দেখা যায়নি।
এবারের গবেষণা জানা গেল, ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা যে অ্যান্টিবডি তৈরি করে, তা ডেল্টার বিরুদ্ধে সে অনুপাতে করে না। বিখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটের এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ফাইজারের টিকা নেওয়া ব্যক্তির শরীরে করোনার মূল ধরনের বিরুদ্ধে যে মাত্রায় অ্যান্টিবডি তৈরি করে, সেই তুলনায় ভাইরাসটির ডেল্টা ধরনের বিরুদ্ধে পাঁচ ভাগের এক ভাগেরও কম হয়।
গবেষণায় বলা হয়েছে, ফাইজারের দুই ডোজ টিকাগ্রহীতাদের রক্তে নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডির মাত্রা ভাইরাসের মূল ধরনের তুলনায় বি.১.৬১৭.২ (ডেল্টা) ধরনের ক্ষেত্রে পাঁচ ভাগের এক ভাগের চেয়েও কম। যারা মাত্র এক ডোজ নিয়েছেন, তাদের অ্যান্টিবডি রেসপন্স আরও কম।
যুক্তরাজ্য কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি দেখতে পেয়েছে, ফাইজারের টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে আগে যুক্তরাজ্যের কেন্টে প্রথম দেখা দেওয়া করোনাভাইরাসের বি. ১.১.৭ (আলফা) ধরনের বিরুদ্ধে যে মাত্রায় অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছিল, ডেল্টা ধরন বি.১.৬১৭.২ (ভারতীয় ধরন) এর বিরুদ্ধে সেই মাত্রায় হচ্ছে না। এর ভিত্তিতে তারা টিকার দুই ডোজ দেওয়ার সময়ের ব্যবধান কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতথ্য তুলে ধরে এনডিটিভি।
তবে প্রতিটি ধরনের ক্ষেত্রেই বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অ্যান্টিবডির মাত্রা কম হলেও নারী-পুরুষ বা শরীরের ওজনভেদে কোনো তারতম্য দেখা যায়নি।
ফাইজারের টিকার এক ডোজ নেওয়ার পর ৭৯ শতাংশ মানুষের শরীরে ভাইরাসটির মূল ধরনের বিরুদ্ধে নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি রেসপন্স দেখা যায়। সেখানে বি.১.১.৭ ধরনের বিরুদ্ধে তা নেমে আসে ৫০ শতাংশে, বি.১.৬১৭.২ ধরনের বিরুদ্ধে তা কমে আসে ৩২ শতাংশে এবং বি.১.৩৫১ বা বেটা ভেরিয়েন্টের (দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম দেখা দেয়) ক্ষেত্রে তা নেমে আসে ২৫ শতাংশে।
যুক্তরাজ্যের ফ্রান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা ফাইজারের টিকার দুই ডোজ নেওয়া ২৫০ জন স্বাস্থ্যবান ব্যক্তির রক্তে অ্যান্টিবডির মাত্রা বিশ্লেষণ করেন। এই ব্যক্তিদের টিকার দুই ডোজ গ্রহণের মধ্যে সময়ের ব্যবধান ছিল তিন মাস পর্যন্ত। গবেষকরা বলছেন, শুধু অ্যান্টিবডির মাত্রাই টিকার কার্যকারিতার প্রমাণ দেয় না। এ বিষয়ে আরও গবেষণা দরকার। করোনাভাইরাস নিষ্কিয়কারী অ্যান্টিবডির স্বল্প মাত্রাই কভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারে।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও সিনোফার্মের পর তৃতীয় টিকা হিসেবে বাংলাদেশে এসেছে ফাইজারের টিকা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে গঠিত টিকার আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্স থেকে ফাইজারের এক লাখ ৬২০ ডোজ টিকা দেশে আসে দেশটিতে। আগে নিবন্ধনকারী, যারা এখনও কোনো কোম্পানির টিকা পাননি, তাদের ফাইজারের টিকা দেওয়া হবে।