কুয়েতে যেতে কোন শ্রমিককে গুণতে হবে আট লাখ টাকা!

- আপডেট সময় : ১১:৪৯:৫৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫ ৪৮ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশের শ্রমিকরা ১৯৭০ এর দশকে প্রথম মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়া শুরু করে। মূলত, ১৯৭০ এর দশকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে তেল শিল্পের উন্নতির কারণে সেখানে কাজের সুযোগ তৈরি হয় এবং সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিকরা যেতে শুরু করে।
এই সময়ে, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, কুয়েত এবং বাহরাইনের মতো দেশগুলোতে বাংলাদেশী কর্মীরা যেতে শুরু করে। তাদের এই যাত্রা সহজ ছিল না। অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে তাদের। তবে, তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
কুয়েত বাংলাদেশিদের জন্য আকর্ষণীয় শ্রমবাজার। এই শ্রমবাজারটি ঘিরে রয়েছে, সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট-প্রতারক গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীর খপ্পরে পড়ে বহু তরুণ-যুবক তাদের ঘরবাড়ি খুইয়েছেন।

নিয়ম অনুযায়ী যেখানে সার্ভিস চার্চ হিসাবে অল্প কিছু টাকা ব্যয় হবার কথা, সেখানে সিন্ডিকেট গোষ্ঠীর খপ্পরে পড়ে আট লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করছেন। তারপর কূয়েতে পৌছে বুঝতে পারেন, তারা চরম ভুল করে ফেলেছেন।
ধার-দেনা ছাড়াও অনেকেই ইদানিং সমিতি, এনজিও থেকে সুদে ঢাকা নিয়ে দালালের মাধ্যমে ছয় থেকে আট লাখ টাকা ব্যয় করে কূয়েত পৌছে অনেকেই এখন অফসোস করছেন।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েতে ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে বেশ জটিল ছিল। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যানুযায়ী, ২০০৭ সালে কুয়েতের ভিসা দেওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
সে বছর বাংলাদেশ থেকে মাত্র ৪ হাজার ২১২ জন কুয়েতে পাড়ি জমান। এরপর ২০০৮ সালে ৩১৯ জন, ২০০৯ সালে ১০ জন, ২০১০ সালে ৪৮ জন, ২০১১ সালে ২৯ জন, ২০১২ সালে দুজন এবং ২০১৩ সালে ছয়জন কুয়েতে যান।

সবশেষ ২০২৪ সালে ৩৩ হাজার ৩১ জন বাংলাদেশ থেকে কুয়েতে যান। আর এ বছর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাড়ি দিয়েছেন ৪ হাজার ৯৬২ জন।
এরপর দেশটিতে ভিসা কার্যক্রম কিছুটা শিথিল হলে ধীরে ধীরে অল্পবিস্তর বাংলাদেশি সেখানে যাওয়া শুরু করেন। এমন জটিল পরিস্থিতির মধ্যেই সেদেশে ভিসা দালালরা খরচ কয়েক গুণ বাড়িয়ে নেন।
কুয়েত প্রবাসী ব্যবসায়ী ও কমিউনিটি নেতা শফিকুল ইসলাম বাবুল সম্প্রতি একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ২০০৭ সাল থেকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশিদের জন্য কুয়েতের ভিসা পাওয়া যাচ্ছিল না। সেক্ষেত্রে বিশেষ অনুমোদন নিয়ে ভিসা পেতে হত বাংলাদেশি নাগরিকদের। ভিসা বিক্রেতারা এমন অজুহাতে ভিসার দাম কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়।
এরপর এক যুগের বেশি সময় ধরে বিশেষ অনুমোদন নিয়েই বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা পাওয়া যাচ্ছিল। যদিও এটি ছিল সীমিত ক্যাটাগরির ভিসা। সে সময় আহলি ভিসা তথা কুয়েতের সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধাযুক্ত কাজের ভিসা একেবারেই পাওয়া যায়নি।

জয়পুরহাট জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোশাররফ হোসেন সংবাদমাধ্যমটিকে জানান, পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলো, যেমন সৌদি আরব, কাতার, ওমান, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কুয়েত এই ছয় দেশে শ্রমিক ভিসায় যাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ১৫ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা।
বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের (বোয়েসেল) মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি বিদেশে পাঠানোর খরচ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে।
সাধারণত এটি রিক্রুটিং এজেন্সির ফি, ভিসা প্রসেসিং ফি, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও উড়োজাহাজ ভাড়ার মত বিষয়গুলোর ওপর নির্ভর করে।