ঢাকা ১১:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনা বিশ্বের নানা প্রান্তে থাকা ২লাখ নাগরিককে ফেরাতে ভারতের অভিযান

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:৪৬:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ মে ২০২০ ৫৩০ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক :  বর্তমান করোনা মহামারি রূপ নিয়েছে। এই সংকটকালে বাংলাদেশসহ দুনিয়ার নানা প্রান্তে হাজার হাজার ভারতীয় আটকা। তাদের ফেরাতে এক বিশাল অভিযান শুরু করেছে ভারত। আকাশ পথ ছাড়াও জলপথে জাহাজে করে দেশে ফিরিয়ে আনতেই কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ভারত। অভিযানের প্রথম ধাপেই দু’লাখের মতো নাগরিককে ফেরানোর পরিকল্পনা রয়েছে। যাকে বলা হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম ইভ্যাকুয়েশন। দেশে ফেরাতে নাগরিকদের কাছ থেকে বিমান মাশুল বেশি নেবার ঘোষণা দিয়েছে।
১৯৯০-এ প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় ভারতের এয়ার ইন্ডিয়া মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজারের মতো ভারতীয়কে ফিরিয়ে এনেছিল। বিশ্বের ইতিহাসে এতোদিন সেটাই বেসামরিক নাগরিকদের বৃহত্তম ইভ্যাকুয়েশন বলে স্বীকৃত। করোনা মহামারি সঙ্কটে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আটকে পড়া অন্তত ৩ লাখ ভারতীয় দেশে ফিরে আসার জন্য দূতাবাসগুলোয় আবেদন করেছেন। এদের একটা বড় অংশকে ফিরিয়ে আনতেই ৭ মে থেকে শুরু হচ্ছে ভারতের এই অভিযান। ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী জানিয়েছেন, বিশেষ ফ্লাইটে ফিরতি নাগরিকদেরই টিকিট কিনতে হবে। পাশাপাশি ফিরে আসার পর ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।
এ ক্ষেত্রে লন্ডন থেকে ভারত আসার ভাড়া হবে ৫০ হাজার রুপি, আমেরিকা থেকে ১ লাখ রুপি কাছাকাছি এবং ঢাকা-দিল্লি বা ঢাকা-শ্রীনগরের ভাড়া হবে ১২ হাজার রুপির মতো।
ভারতীয় নৌবাহিনীর রণতরী আইএনএস ঐরাবত-ও এই অভিযানে অংশ নেবেভারতীয় নৌবাহিনীর তিনটি জাহাজ আইএনএস জলশ্ব, আইএনএস মগর ও আইএনএস শার্দূলকেও এই অভিযানে যুক্ত করা হচ্ছে। এগুলোকে কাজে লাগানো হবে মধ্যপ্রাচ্য ও মালদ্বীপে আটকে পড়া ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে। রণতরীগুলো সোজা সমুদ্রতটের বালিতে গিয়েও ভিড়তে পারে। দেড় মাসেরও বেশি সময় ভারতের আকাশ পথ বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে বিশেষ ফ্লাইট বিদেশে আটকে পড়া ভারতীয়র খুশি। যেমনটি বলছিলেন, সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্রী নুপূর প্যাটেল। তিনি চল্লিশ দিনেরও বেশি সময় অপেক্ষার পর অবশেষে হাই কমিশন থেকে এই বার্তা পেয়ে স্বস্তিবোধ করছেন। সরকারের সহায়তায় আমরা এখন দ্রুত ঘরে ফেরার জন্য প্রার্থনা করছি। ছাত্র-ছাত্রী ও অভিবাসী শ্রমিকরা এতো দামী টিকিট কীভাবে কিনবেন?
আমেরিকায় বহু কলেজ-ইউনিভার্সিটি বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিয়েছে। তারা এয়ার ইন্ডিয়ার বিশেষ ইভ্যাকুয়েশন ফ্লাইটের খবরেও তেমন আশ্বস্ত নন। নর্থ আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ান স্টুডেন্টসের কর্ণধার সুধাংশু কৌশিক জানিয়েছেন, সেখানে বহু ছাত্রছাত্রী খোলা গ্যারেজে রাত কাটাচ্ছেন। তাদের ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। ভারত বা মার্কিন সরকার কেউই তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। যে স্কলারশিপ বা ছুটকো কাজের ভরসায় তারা খরচ চালাতেন, সেটাও বহুদিন বন্ধ। এমন যখন পরিস্থিতি তখন তারা বিমান ভাড়া কিভাবে যোগাবেন?
ভারতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কুরিয়াকোস মধ্যপ্রাচ্যে আটকে পড়া শ্রমিকদের দেশে ফেরানোর জন্য জনস্বার্থ মামলা করেছেন। তিনিও বলছেন, মানুষগুলোর সঞ্চয় গড়ে তোলার কোনও সুযোগই নেই। তারা আয়ের প্রায় পুরোটাই দেশে পাঠিয়ে দেন। আর সেই রেমিট্যান্সে দেশ উপকৃত হয়। আজ যদি ফ্রি-তে টিকিট দেওয়া সম্ভবও না-হয়, অন্তত ভর্তুকি দিয়ে বা প্রচুর ডিসকাউন্ট দিয়ে তাদের ফেরানোর ব্যবস্থা করাটা ভারতের দায়িত্ব। এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে ভারতীয় নাগরিক ফিরতে শুরু করেছেন। এরই মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ব্রিটেন, আমেরিকা, সৌদি, সিঙ্গাপুর, কাতার, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স, বাংলাদেশ, কুয়েত, ওমান ও বাহরাইনে পরিচালনা করা হবে এমন অন্তত ৫০টি ফ্লাইট।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

করোনা বিশ্বের নানা প্রান্তে থাকা ২লাখ নাগরিককে ফেরাতে ভারতের অভিযান

আপডেট সময় : ১২:৪৬:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ মে ২০২০

 

ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক :  বর্তমান করোনা মহামারি রূপ নিয়েছে। এই সংকটকালে বাংলাদেশসহ দুনিয়ার নানা প্রান্তে হাজার হাজার ভারতীয় আটকা। তাদের ফেরাতে এক বিশাল অভিযান শুরু করেছে ভারত। আকাশ পথ ছাড়াও জলপথে জাহাজে করে দেশে ফিরিয়ে আনতেই কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ভারত। অভিযানের প্রথম ধাপেই দু’লাখের মতো নাগরিককে ফেরানোর পরিকল্পনা রয়েছে। যাকে বলা হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম ইভ্যাকুয়েশন। দেশে ফেরাতে নাগরিকদের কাছ থেকে বিমান মাশুল বেশি নেবার ঘোষণা দিয়েছে।
১৯৯০-এ প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় ভারতের এয়ার ইন্ডিয়া মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজারের মতো ভারতীয়কে ফিরিয়ে এনেছিল। বিশ্বের ইতিহাসে এতোদিন সেটাই বেসামরিক নাগরিকদের বৃহত্তম ইভ্যাকুয়েশন বলে স্বীকৃত। করোনা মহামারি সঙ্কটে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আটকে পড়া অন্তত ৩ লাখ ভারতীয় দেশে ফিরে আসার জন্য দূতাবাসগুলোয় আবেদন করেছেন। এদের একটা বড় অংশকে ফিরিয়ে আনতেই ৭ মে থেকে শুরু হচ্ছে ভারতের এই অভিযান। ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী জানিয়েছেন, বিশেষ ফ্লাইটে ফিরতি নাগরিকদেরই টিকিট কিনতে হবে। পাশাপাশি ফিরে আসার পর ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।
এ ক্ষেত্রে লন্ডন থেকে ভারত আসার ভাড়া হবে ৫০ হাজার রুপি, আমেরিকা থেকে ১ লাখ রুপি কাছাকাছি এবং ঢাকা-দিল্লি বা ঢাকা-শ্রীনগরের ভাড়া হবে ১২ হাজার রুপির মতো।
ভারতীয় নৌবাহিনীর রণতরী আইএনএস ঐরাবত-ও এই অভিযানে অংশ নেবেভারতীয় নৌবাহিনীর তিনটি জাহাজ আইএনএস জলশ্ব, আইএনএস মগর ও আইএনএস শার্দূলকেও এই অভিযানে যুক্ত করা হচ্ছে। এগুলোকে কাজে লাগানো হবে মধ্যপ্রাচ্য ও মালদ্বীপে আটকে পড়া ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে। রণতরীগুলো সোজা সমুদ্রতটের বালিতে গিয়েও ভিড়তে পারে। দেড় মাসেরও বেশি সময় ভারতের আকাশ পথ বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে বিশেষ ফ্লাইট বিদেশে আটকে পড়া ভারতীয়র খুশি। যেমনটি বলছিলেন, সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্রী নুপূর প্যাটেল। তিনি চল্লিশ দিনেরও বেশি সময় অপেক্ষার পর অবশেষে হাই কমিশন থেকে এই বার্তা পেয়ে স্বস্তিবোধ করছেন। সরকারের সহায়তায় আমরা এখন দ্রুত ঘরে ফেরার জন্য প্রার্থনা করছি। ছাত্র-ছাত্রী ও অভিবাসী শ্রমিকরা এতো দামী টিকিট কীভাবে কিনবেন?
আমেরিকায় বহু কলেজ-ইউনিভার্সিটি বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিয়েছে। তারা এয়ার ইন্ডিয়ার বিশেষ ইভ্যাকুয়েশন ফ্লাইটের খবরেও তেমন আশ্বস্ত নন। নর্থ আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ান স্টুডেন্টসের কর্ণধার সুধাংশু কৌশিক জানিয়েছেন, সেখানে বহু ছাত্রছাত্রী খোলা গ্যারেজে রাত কাটাচ্ছেন। তাদের ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। ভারত বা মার্কিন সরকার কেউই তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। যে স্কলারশিপ বা ছুটকো কাজের ভরসায় তারা খরচ চালাতেন, সেটাও বহুদিন বন্ধ। এমন যখন পরিস্থিতি তখন তারা বিমান ভাড়া কিভাবে যোগাবেন?
ভারতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কুরিয়াকোস মধ্যপ্রাচ্যে আটকে পড়া শ্রমিকদের দেশে ফেরানোর জন্য জনস্বার্থ মামলা করেছেন। তিনিও বলছেন, মানুষগুলোর সঞ্চয় গড়ে তোলার কোনও সুযোগই নেই। তারা আয়ের প্রায় পুরোটাই দেশে পাঠিয়ে দেন। আর সেই রেমিট্যান্সে দেশ উপকৃত হয়। আজ যদি ফ্রি-তে টিকিট দেওয়া সম্ভবও না-হয়, অন্তত ভর্তুকি দিয়ে বা প্রচুর ডিসকাউন্ট দিয়ে তাদের ফেরানোর ব্যবস্থা করাটা ভারতের দায়িত্ব। এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে ভারতীয় নাগরিক ফিরতে শুরু করেছেন। এরই মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ব্রিটেন, আমেরিকা, সৌদি, সিঙ্গাপুর, কাতার, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স, বাংলাদেশ, কুয়েত, ওমান ও বাহরাইনে পরিচালনা করা হবে এমন অন্তত ৫০টি ফ্লাইট।