ঢাকা ০৮:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনা কতটা ভয়ঙ্কর ভারতীয় রূপ!

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:৪৫:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ এপ্রিল ২০২১ ২২৫ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক

ভারতে প্রতিনিয়তই আকামমুখো হচ্ছে করোনার শনাক্তের রেকর্ড। ধারণা করা হচ্ছে এর পেছনে দেশটিতে শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন রূপের ভূমিকা রয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত পাওয়া কিছু তথ্য তুলে ধরা হল।

বি.১.৬১৭

এমন নামেই পরিচিত করোনার নতুন ভারতীয় ধরনটি। দেশটিতে দ্রুত সংক্রমণ ছড়ানোর কারণ এটি কীনা সেটি অবশ্য এখনও নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না। তারপরও সম্ভাব্য একটি কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে এই ভ্যারিয়েন্টকে।

কখন থেকে?

গত মার্চে ভারতের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ প্রথম ভ্যারিয়েন্টের কথা জানায়। ভাইরাসের এই ধরনটি দুইবার রূপ বদল করার কথা সেসময় জানিয়েছিলেন কর্মকর্তারা। বিজ্ঞানীদের ধারণা সেটি এখন তৃতীয়বারের মতো রূপ পাল্টেছে। জিনগত উপাত্তের উন্মুক্ত তথ্য ভাণ্ডার জিআইএসএইড-এর (GISAID) তথ্যানুযায়ী ভারতে বিদ্যমান করোনা ভ্যারিয়েন্টের ৬৩ ভাগই এখন বি.১.৬১৭।

কতটা উদ্বেগের?

প্রথম রূপটি (E484Q) অনেকটা ব্রাজিলে ও দক্ষিণ আফ্রিকায় দ্রুত সংক্রমণ ঘটানো ভ্যারিয়েন্টের মতো। দ্বিতীয়টি (L452R), এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় পাওয়া গেছে। এই ধরনটি টিকার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এড়িয়ে যেতে সক্ষম এবং বেশি মারাত্মক বলে মনে করা হচ্ছে। আর তৃতীয় রূপটি (P681R) উচ্চ সংক্রমণপ্রবণ যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্টটির কাছাকাছি।

কতটা ছড়িয়েছে?

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এই ভ্যারিয়েন্টটি মিলেছে। শুধু ভারত নয় এটি ছড়িয়ে পড়েছে অন্য দেশগুলোতেও। জার্মানি, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষও দেশগুলোতে বি.১.৬১৭ শনাক্ত করেছে।

মানবদেহে কী করছে?

একাধিক রূপ বদলের কারণে ভাইরাসটি শরীরে দ্রুত ছড়াতে পারে। বিশেষ করে এর পক্ষে শরীরে এন্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এড়িয়ে যাওয়াও সহজ হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন আগে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এমন ব্যক্তি বা যারা টিকা নিয়েছেন তাদেরও এই ভ্যারিয়েন্টে নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার আশাঙ্ক ¼ রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কী বলছে?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ তালিকায় তথা ভাইরাসটি নজরদারিতে রেখেছে। এখনও সেটি বড় ধরনের উদ্বেগের পর্যায়ে পৌঁছেনি। উদ্বেগের পর্যায়ে পৌঁছালে এটিকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ ঘোষণা করা হতে পারে।

বেশি সংক্রামক নয়?

ভ্যারিয়েন্টটি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যেই রয়েছে মতপার্থক্য। যুক্তরাজ্যের কোভিড-১৯ জেনোমিকস ইনিশিয়েটিভ এর পরিচালক ড. জেফারি ব্যারেট এর মতে গত কয়েক মাসে ভ্যারিয়েন্টটি বেশ ধীর গতিতে ছড়িয়েছে। আর এজন্য তিনি এটিকে যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্ট বি.১.১.৭ এর মতো সংক্রামক নয় বলে মনে করছেন।

উপাত্ত কী বলে?

জিনগত বিশ্লেষণে মহারাষ্ট্রে ৬০ শতাংশের বেশি করোনা আক্রান্তের নমুণায় এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে তারা যত নমুনা পরীক্ষা করেছেন সেটি উপসংহারে পৌঁছানোর মতো যথেষ্ট নয়।

টিকায় কি কাজ হচ্ছে?

অন্তত দুইটি গবেষণা বলছে ভ্যারিয়েন্টের এল৪৫২আর রূপটি অ্যান্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এড়িয়ে যেতে পারে। এর একটি এখনও অপ্রকাশিত এবং অ্যাকাডেমিকভাবে পিআর রিভিউ সম্পন্ন হয়নি।

অতিরঞ্জন হচ্ছে?

অনেকে অবশ্য বলতে চাইছেন ভ্যারিয়েন্টটি নিয়ে বিভিন্ন গবেষণায় যেসব তথ্য আসছে তার মধ্যে অতিরঞ্জন রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের লুইসিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটির মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিয়োনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জেরেমি পি কামিল তাদের একজন। তিনি বলেন, “এমন কোনও নির্ভরযোগ্য গবেষণা নেই যেখানে বলা হয়েছে এল৪৫২ রূপটি সব ধরনের ইমিউনিটি বা অ্যান্টিবডিকে এড়াতে পারে।” সেটি সম্ভব নয় বলেও মত তার। সূত্র: ডয়েচে ভেলে

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

করোনা কতটা ভয়ঙ্কর ভারতীয় রূপ!

আপডেট সময় : ১২:৪৫:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ এপ্রিল ২০২১

ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক

ভারতে প্রতিনিয়তই আকামমুখো হচ্ছে করোনার শনাক্তের রেকর্ড। ধারণা করা হচ্ছে এর পেছনে দেশটিতে শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন রূপের ভূমিকা রয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত পাওয়া কিছু তথ্য তুলে ধরা হল।

বি.১.৬১৭

এমন নামেই পরিচিত করোনার নতুন ভারতীয় ধরনটি। দেশটিতে দ্রুত সংক্রমণ ছড়ানোর কারণ এটি কীনা সেটি অবশ্য এখনও নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না। তারপরও সম্ভাব্য একটি কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে এই ভ্যারিয়েন্টকে।

কখন থেকে?

গত মার্চে ভারতের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ প্রথম ভ্যারিয়েন্টের কথা জানায়। ভাইরাসের এই ধরনটি দুইবার রূপ বদল করার কথা সেসময় জানিয়েছিলেন কর্মকর্তারা। বিজ্ঞানীদের ধারণা সেটি এখন তৃতীয়বারের মতো রূপ পাল্টেছে। জিনগত উপাত্তের উন্মুক্ত তথ্য ভাণ্ডার জিআইএসএইড-এর (GISAID) তথ্যানুযায়ী ভারতে বিদ্যমান করোনা ভ্যারিয়েন্টের ৬৩ ভাগই এখন বি.১.৬১৭।

কতটা উদ্বেগের?

প্রথম রূপটি (E484Q) অনেকটা ব্রাজিলে ও দক্ষিণ আফ্রিকায় দ্রুত সংক্রমণ ঘটানো ভ্যারিয়েন্টের মতো। দ্বিতীয়টি (L452R), এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় পাওয়া গেছে। এই ধরনটি টিকার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এড়িয়ে যেতে সক্ষম এবং বেশি মারাত্মক বলে মনে করা হচ্ছে। আর তৃতীয় রূপটি (P681R) উচ্চ সংক্রমণপ্রবণ যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্টটির কাছাকাছি।

কতটা ছড়িয়েছে?

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এই ভ্যারিয়েন্টটি মিলেছে। শুধু ভারত নয় এটি ছড়িয়ে পড়েছে অন্য দেশগুলোতেও। জার্মানি, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষও দেশগুলোতে বি.১.৬১৭ শনাক্ত করেছে।

মানবদেহে কী করছে?

একাধিক রূপ বদলের কারণে ভাইরাসটি শরীরে দ্রুত ছড়াতে পারে। বিশেষ করে এর পক্ষে শরীরে এন্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এড়িয়ে যাওয়াও সহজ হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন আগে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এমন ব্যক্তি বা যারা টিকা নিয়েছেন তাদেরও এই ভ্যারিয়েন্টে নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার আশাঙ্ক ¼ রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কী বলছে?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ তালিকায় তথা ভাইরাসটি নজরদারিতে রেখেছে। এখনও সেটি বড় ধরনের উদ্বেগের পর্যায়ে পৌঁছেনি। উদ্বেগের পর্যায়ে পৌঁছালে এটিকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ ঘোষণা করা হতে পারে।

বেশি সংক্রামক নয়?

ভ্যারিয়েন্টটি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যেই রয়েছে মতপার্থক্য। যুক্তরাজ্যের কোভিড-১৯ জেনোমিকস ইনিশিয়েটিভ এর পরিচালক ড. জেফারি ব্যারেট এর মতে গত কয়েক মাসে ভ্যারিয়েন্টটি বেশ ধীর গতিতে ছড়িয়েছে। আর এজন্য তিনি এটিকে যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্ট বি.১.১.৭ এর মতো সংক্রামক নয় বলে মনে করছেন।

উপাত্ত কী বলে?

জিনগত বিশ্লেষণে মহারাষ্ট্রে ৬০ শতাংশের বেশি করোনা আক্রান্তের নমুণায় এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে তারা যত নমুনা পরীক্ষা করেছেন সেটি উপসংহারে পৌঁছানোর মতো যথেষ্ট নয়।

টিকায় কি কাজ হচ্ছে?

অন্তত দুইটি গবেষণা বলছে ভ্যারিয়েন্টের এল৪৫২আর রূপটি অ্যান্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এড়িয়ে যেতে পারে। এর একটি এখনও অপ্রকাশিত এবং অ্যাকাডেমিকভাবে পিআর রিভিউ সম্পন্ন হয়নি।

অতিরঞ্জন হচ্ছে?

অনেকে অবশ্য বলতে চাইছেন ভ্যারিয়েন্টটি নিয়ে বিভিন্ন গবেষণায় যেসব তথ্য আসছে তার মধ্যে অতিরঞ্জন রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের লুইসিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটির মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিয়োনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জেরেমি পি কামিল তাদের একজন। তিনি বলেন, “এমন কোনও নির্ভরযোগ্য গবেষণা নেই যেখানে বলা হয়েছে এল৪৫২ রূপটি সব ধরনের ইমিউনিটি বা অ্যান্টিবডিকে এড়াতে পারে।” সেটি সম্ভব নয় বলেও মত তার। সূত্র: ডয়েচে ভেলে