করোনার মৌসুম নির্ণয়ে কাজ করছেন গবেষকরা

- আপডেট সময় : ১০:১৮:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫ ৭০ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশে এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত মূলত ইনফ্লুয়েঞ্জা তথা ফ্লু’র প্রাদুর্ভাব বেশি হয়ে থাকে। শ্বাসযন্ত্রের এই রোগটি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস সৃষ্ট সংক্রামক রোগ। এটি জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা, পেশী ব্যথা, ক্লান্তি এবং অন্যান্য উপসর্গের কারণ হতে পারে। তবে, করোনা ভাইরাস কোন মৌসুমে বেশি ছড়ায়, তা নির্ণয়ে কাজ করছেন গবেষকরা। এবছর ইনফ্লুয়েঞ্জা মৌসুমে করোনা ছড়াতে শুরু করেছে। সঙ্গে রয়েছে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ।
তারপরও করোনাই সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, ২০২০ সালে দুনিয়াজুড়ে করোনার যে ব্যাপকতা ছিলো, বর্তমানে সেই আশঙ্কা না থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। জনসমাগমস্থানে যাবার আগে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। বয়স্ক ব্যক্তি যারা দীর্ঘমেয়াদী রোগে ভুগছেন, এমন ব্যক্তিদের সাবধানে থাকতে হবে। করোনা হাতের মাধ্যমে বেশি ছড়ায় বলে কেউ বাইরে থেকে ঘরে প্রবেশ করেই আগে ভালো ভাবে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে।

ইমিরেটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লা বলেন, যদিও করোনায় নিয়ে আতঙ্কিত হবার কিছু নেই, তারপরও স্বাস্থাবিধি মেনে চলতে হবে। হাটবাজার ও জনবহুল স্থানে যাতায়ত করা সময় অবশ্যইা মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। যে কোন সাবান দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড হাত ধুয়ে নিতে হবে। করোনা নতুন কোন রোগ না হলেও সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে এই চিকিৎসা বিজ্ঞানি বলেন, বর্তমান সময়ে ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া রোগটিও ছড়াচ্ছে। বয়স্কদের সাবধানে চলাচল করতে হবে। মসজিদ, ট্রেন-বাস স্ট্যান্ডসহ জনবহুল স্থানে যাতায়ত কালে মাস্ক পড়তে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, স্বাস্থ্য সচেতনতা ছোটখাটো অনেক রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।
করোনা ভাইরাসের শুরুতে এর গতিবিধি, রোগের ধরণ এবং তা প্রতিরোধের উপায় নিসয়ে কাজ করেন ডা. এ এস আলমগীর। এই গবেষক মনে করেন,নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে আতঙ্ক হবার কিছু নেই। এটি মূলত কোন মৌসুমে প্রদুর্ভাব বেশি ছড়াচ্ছে, তা নিয়ে গবেষণা চলছে। মৌসুম নির্ধারণে কম করে হলেও দু’এক বছর দু’য়েক সময় লেগে যেতে পারে। করোনা নিয়ে আমাদের আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। এটি এখন মৌসুমী রোগ হিসাবে পরিণত হচ্ছে। মাস্ক পরা ও হাধোয়াসহ স্বাস্থ্য সচেতনতাই প্রতিরোধ করবে করোনা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, বয়স্ক ও দীর্ঘ মেয়াদী রোগবালাইয়ে ভুগছেন, এমন ব্যক্তিরা করোনা আক্রান্ত হয়ে থাকেন বেশি। আমরা আগেও বলেছি, স্বাস্থ্য সচেতনতা অনেক সংক্রামক রোগ থেকে মুক্ত রাখতে পারে। আমাদের মতো জনবহুল দেশে ঘরের বাইরে বিভিন্ন স্থানে জনসমাগম বেশি। আরও একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা রকমের কর্মসূচি চলছে। যেখানে বহু লোকের সমাগম হয়ে থাকে। এমন অবস্থায় অবশ্য মাস্ক পরতে হবে। বাড়ি ফিরে হাত ধুয়ে নিয়ে হবে।
বাংলাদেশে নানা রকমের সংক্রামক রোগের প্রদুর্ভাব রয়েছে। চিকুনগুনিয়া, টিভি, ডেঙ্গু ইত্যাদি। সেখানে নতুন করে করোনাও ছড়াতেদ শুরু করেছে। এ অবস্থায় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে টিবি হাসপাতালের ডেপুটি ডাইরেক্টর ডা. আয়েশা আখতার বলেন, করোনা নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে দৌড়ঝাপ করার প্রয়োজন নেই। সর্ব প্রথম মান্যতায় নিয়ে হবে স্বাস্থ্যবিািধ। মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, জনবহুল স্থান এড়িয়ে চলা। যদি তা সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে অবশ্য মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

বাংলাদেশে কাশি, গলা ব্যথা, ঠান্ড জ¦র, পেট খারাপের মতো অসুখগুলোর সঙ্গে আমাদের পরিচয় নতুন নয়। যুগ যুগ ধরেই এসব প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে চলতে আমরা অভ্যস্ত। তবে, যেহেতা সময় পাল্টেছে, সেহেতু আমাদেরকে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিৎ। তাহলে করোনাসহ মৌসুমী অনেক রোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব বলে জানালেন, ডা. ফারাহ নাজ আলম। এই চিকিৎসকের মতে করোনা সব সময়ই ছিলো, কিন্তু ২০২০ সালে তার ভয়াবহ চরিত্রের সঙ্গে আমরা পরিচিত হই। বর্তমানে করোনা ততোটা ভঙ্কর নয় এবং এনিয়ে আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন, সুস্থ থাকুন এমনটিই জানান ডা. ফারাহ নাজ আলম।
গবেষকদের পরামর্শ হচ্ছে, জ¦ল হলেই আতঙ্কি না হয়ে চিবিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তবে এই সময় মানুষ যে আতঙ্কিত হচ্ছে না, তা নয়। কারণ, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া না করোনায় আক্রান্ত এসব বিষয়গুলো দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি জটিল রোগে আক্রান্ত বয়স্ক কোন ব্যক্তি, গর্ভবতী নারী এবং যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তারাই বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছেন। ফলে অবহেলা নয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন এবং প্রযোজনে চিকিৎসকের পরামর্শ চিকিৎসা গবেষকদের।