ঢাকা ১০:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

করোনাকালেও রেকর্ড গড়লো মোংলা বন্দর

ভয়েস রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : ০৯:৫০:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুন ২০২১ ২৩৮ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাগেরহাট জেলার মোংলায় পশুর নদীর তীরে বন্দরটি প্রতিষ্ঠার ৭০ বছরে অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে চলতি অর্থ বছরের ১ মাস বাকি থাকতেই ৯১৩টি বাণিজ্যিক জাহাজ ভিড়েছে  বন্দরে। যেখানে গত অর্থ বছরে বন্দরে জাহাজ ভিড়েছিল ৯১২টি। চলতি অর্থ বছরে কার্গো হ্যান্ডেলিং’এ ১২.৬৫ লাখ মেট্রিক টন পণ্যসহ কনটেইনার হ্যান্ডেলিং করেছে ৩৯ হাজার ৭৭৭ টিইউজ। সব মিলিয়ে চলতি অর্থ বছরে খালাস হবে ৩ কোটি ৬৩ লাখ মেট্রিক টন ও ৩৪০ কোটি রাজস্ব আয়ের  আশা বন্দর কর্তৃপক্ষের।

মোংলা বন্দরের ইতিহাস

পৃথিবীর প্রায় ৯০ শতাংশ পণ্য নৌপথে পরিবাহিত হয়ে থাকে। যে কোন দেশের আন্তর্জাতিক বানিজ্য সম্প্রসারন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমুদ্র বন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। মোংলা বন্দর বাংলাদেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর। দেশটির দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে তথা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে মোংলার ভূমিকা ব্যাপক। বন্দরের ইতিহাস বলছে, ১৯৫০ সালে ১১ ডিসেম্বর বৃটিশ বাণিজ্যিক জাহাজ The City of Lyons  সুন্দরবনের মধ্যে পশুর নদীর জয়মনিরগোল নামক স্থানে নোঙ্গর করে। যা ছিল মোংলা বন্দর প্রতিষ্ঠার শুভ সুচনা।

পরবর্তীতে ১৯৫১ সালের ৭ মার্চ জয়মনির গোল থেকে ১৪ মাইল উজানে চালনা নামক স্থানে মোংলা বন্দর স্থানান্তরিত হয়ে আসে ১৯৫৪ সালে। এরপর স্যার ক্লাইভ এংনিস পশুর ও শিবসা নদী জরিপ শেষে তার রিপোর্টে বন্দরটিকে চালনা থেকে সরিয়ে মোংলায় স্থানান্তরের প্রস্তাব করেন। চালনা থেকে প্রায় ১০ মাইলভাটিতে নদীর নাব্যতাও বেশি থাকায় মোংলা নদী এবং পশুর নদীর মিলন স্থলে ১৯৫৪ সালের ২০ জুন মোংলা বন্দর সরিয়ে আনা হয়। বন্দর স্থাপনের পর জনশূন্য লোকালয় মুখরিত হয়ে ওঠে। মোংলা হচ্ছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় আন্তর্জাাতিক সমুদ্র বন্দর।

বর্তমান করোনা বিশ্বে অর্থনীতিতে ধস নেমেছে, ঠিক সেই সময় উল্টো চিত্র মিললো মোংলায়। চলতি অর্থ বছরের অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে ৯১৩টি বাণিজ্যিক জাহাজ ভিড়েছে বন্দরে। হাতে গোনা আর ৮৭টি জাহাজ ভিড়লেই ১ হাজার জাহাজ নোঙরে ইতিহাস গড়বে মোংলা। বন্দর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি প্রত্যাশা করেই জানালেন, প্রতিষ্ঠার ৭০ বছরের মধ্যে বাণিজ্যিক জাহাজ আগমনে সব রেকর্ডই যে ভেঙ্গে তা কিন্তু নয়, রীতিমত পণ্য ওঠানাম ও রাজস্ব আদায়েও রেকর্ড গড়েছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, পন্য ওঠানাম ও রাজস্ব আদায়েও ফি বছরের চেয়ে ৩৩৮ কোটি টাকার রেকর্ড।

বন্দর কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়, চলতি অর্থ বছরের প্রথম ছয় মাসে মোংলা বন্দরে জাহাজ ভিড়েছে ৫১৯টি। ১১ মাসে ভিড়ে ৯১৩টি। অথছ ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে মোংলায় ভিড়েছিলো ৯১২টি। করোনারকালেও ১১ মাসেই গড়েছে নতুন রেকর্ড। আর চলতি জুন মাসে আর মাত্র ৮৭টি জাহাজ ভিড়লেই হাজারের মাইলফলক স্পর্শ করবে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বলেন, সরকারের ভিশন বাস্তবায়নে মোংলাকে আধুনিক বন্দরে রুপান্তর করতে আউটার বার ও বন্দরের পশুর চ্যানেলে ড্রেজিং, ওয়াটার টিট্রমেন্ট প্লান্ট স্থাপন, কনটেইনার ইয়ার্ড সংস্কার ও ভ্যাসেল ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের উন্নয়নসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এতে করে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা কয়েকগুন বেড়েছে গিয়েছে।

করোনার সংক্রমণের কারণে বিশ্বের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে স্থবিরতা নেমে আসলেও মোংলা বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। করোনার ধাক্কা সামলিয়ে এ বন্দরের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে করনীয় সবকিছুই করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ ২৪ ঘণ্টা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুল্লী, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামাল ও ঢাকা মেট্রোরেলের কোচসহ বড়-বড় মেগা প্রকল্পের মালামাল মোংলা বন্দরে খালাস হচ্ছে। বন্দর ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েই চজলেছে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

করোনাকালেও রেকর্ড গড়লো মোংলা বন্দর

আপডেট সময় : ০৯:৫০:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুন ২০২১

বাগেরহাট জেলার মোংলায় পশুর নদীর তীরে বন্দরটি প্রতিষ্ঠার ৭০ বছরে অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে চলতি অর্থ বছরের ১ মাস বাকি থাকতেই ৯১৩টি বাণিজ্যিক জাহাজ ভিড়েছে  বন্দরে। যেখানে গত অর্থ বছরে বন্দরে জাহাজ ভিড়েছিল ৯১২টি। চলতি অর্থ বছরে কার্গো হ্যান্ডেলিং’এ ১২.৬৫ লাখ মেট্রিক টন পণ্যসহ কনটেইনার হ্যান্ডেলিং করেছে ৩৯ হাজার ৭৭৭ টিইউজ। সব মিলিয়ে চলতি অর্থ বছরে খালাস হবে ৩ কোটি ৬৩ লাখ মেট্রিক টন ও ৩৪০ কোটি রাজস্ব আয়ের  আশা বন্দর কর্তৃপক্ষের।

মোংলা বন্দরের ইতিহাস

পৃথিবীর প্রায় ৯০ শতাংশ পণ্য নৌপথে পরিবাহিত হয়ে থাকে। যে কোন দেশের আন্তর্জাতিক বানিজ্য সম্প্রসারন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমুদ্র বন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। মোংলা বন্দর বাংলাদেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর। দেশটির দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে তথা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে মোংলার ভূমিকা ব্যাপক। বন্দরের ইতিহাস বলছে, ১৯৫০ সালে ১১ ডিসেম্বর বৃটিশ বাণিজ্যিক জাহাজ The City of Lyons  সুন্দরবনের মধ্যে পশুর নদীর জয়মনিরগোল নামক স্থানে নোঙ্গর করে। যা ছিল মোংলা বন্দর প্রতিষ্ঠার শুভ সুচনা।

পরবর্তীতে ১৯৫১ সালের ৭ মার্চ জয়মনির গোল থেকে ১৪ মাইল উজানে চালনা নামক স্থানে মোংলা বন্দর স্থানান্তরিত হয়ে আসে ১৯৫৪ সালে। এরপর স্যার ক্লাইভ এংনিস পশুর ও শিবসা নদী জরিপ শেষে তার রিপোর্টে বন্দরটিকে চালনা থেকে সরিয়ে মোংলায় স্থানান্তরের প্রস্তাব করেন। চালনা থেকে প্রায় ১০ মাইলভাটিতে নদীর নাব্যতাও বেশি থাকায় মোংলা নদী এবং পশুর নদীর মিলন স্থলে ১৯৫৪ সালের ২০ জুন মোংলা বন্দর সরিয়ে আনা হয়। বন্দর স্থাপনের পর জনশূন্য লোকালয় মুখরিত হয়ে ওঠে। মোংলা হচ্ছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় আন্তর্জাাতিক সমুদ্র বন্দর।

বর্তমান করোনা বিশ্বে অর্থনীতিতে ধস নেমেছে, ঠিক সেই সময় উল্টো চিত্র মিললো মোংলায়। চলতি অর্থ বছরের অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে ৯১৩টি বাণিজ্যিক জাহাজ ভিড়েছে বন্দরে। হাতে গোনা আর ৮৭টি জাহাজ ভিড়লেই ১ হাজার জাহাজ নোঙরে ইতিহাস গড়বে মোংলা। বন্দর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি প্রত্যাশা করেই জানালেন, প্রতিষ্ঠার ৭০ বছরের মধ্যে বাণিজ্যিক জাহাজ আগমনে সব রেকর্ডই যে ভেঙ্গে তা কিন্তু নয়, রীতিমত পণ্য ওঠানাম ও রাজস্ব আদায়েও রেকর্ড গড়েছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, পন্য ওঠানাম ও রাজস্ব আদায়েও ফি বছরের চেয়ে ৩৩৮ কোটি টাকার রেকর্ড।

বন্দর কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়, চলতি অর্থ বছরের প্রথম ছয় মাসে মোংলা বন্দরে জাহাজ ভিড়েছে ৫১৯টি। ১১ মাসে ভিড়ে ৯১৩টি। অথছ ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে মোংলায় ভিড়েছিলো ৯১২টি। করোনারকালেও ১১ মাসেই গড়েছে নতুন রেকর্ড। আর চলতি জুন মাসে আর মাত্র ৮৭টি জাহাজ ভিড়লেই হাজারের মাইলফলক স্পর্শ করবে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বলেন, সরকারের ভিশন বাস্তবায়নে মোংলাকে আধুনিক বন্দরে রুপান্তর করতে আউটার বার ও বন্দরের পশুর চ্যানেলে ড্রেজিং, ওয়াটার টিট্রমেন্ট প্লান্ট স্থাপন, কনটেইনার ইয়ার্ড সংস্কার ও ভ্যাসেল ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের উন্নয়নসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এতে করে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা কয়েকগুন বেড়েছে গিয়েছে।

করোনার সংক্রমণের কারণে বিশ্বের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে স্থবিরতা নেমে আসলেও মোংলা বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। করোনার ধাক্কা সামলিয়ে এ বন্দরের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে করনীয় সবকিছুই করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ ২৪ ঘণ্টা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুল্লী, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামাল ও ঢাকা মেট্রোরেলের কোচসহ বড়-বড় মেগা প্রকল্পের মালামাল মোংলা বন্দরে খালাস হচ্ছে। বন্দর ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েই চজলেছে।