ঢাকা ০৫:৫৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কবে ফিরে পাবো স্পর্শ বঞ্চিত মানুষের দুঃখভোলানো হাসি?

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৪:০৮:৪৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ মে ২০২০ ৫৮৬ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মাঝে আর মাত্র একটি দিন। তারপরই মুসলিম ধর্মাবলম্বি মানুষ উদযাপন করবেন ঈদুল ফিতর। কিন্তু নিরানন্দ ঈদ উযাপনে নাড়ির টানে গ্রামে পৌছানোর পরও স্বজন এবং পরর্শিদের তেমন একটা উৎসাহ নেই। প্রতিবছর বিশেষ দিনটিকে সামনে রেখে গ্রামে পৌছানোর পর স্বজন ও বন্ধুবন্ধরা বুকে জড়িয়ে নিতো পরম মমতায়। যা আজ অতীত। পরিচিতজনদের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত মানুষ। যারাও গিয়েছেন, তাদের দেখে করোনা সংক্রমণের অজানা বয়ে কাপছে গ্রামাঞ্চের মানুষজন।
মিডিয়ার বদৌলতে গ্রামে বসেই সারাদেশের খবর পাচ্ছেন মানুষ। রাজধানী ঢাকায় সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্ত একথা তারা আগে থেকেই জেনে গেছেন। তাই ঢাকা থেকে যারাই ঈদে গ্রামের গিয়েছেন, তাদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছেন তারা। পরিচিতরাও কাছে আসতে চাইছেন না। নিরাবরন গ্রামের সরল মানুগুলোর মুখ। এখন আর পরিচিত কাউকে দেখলেই এগিয়ে যেয়ে বলেন না কেমন আছো ? কবে আসলে? এক মহাতঙ্কে ভুগছেন সহজ-সরল মানুষেরা। কবে ফিরে পাবো এসব মানুষের স্পর্শ ? দুঃখভোলানো হাসি?
করোনা মহামারির পিঠ বেয়ে আসা ঈদ সোমবার বাংলাদেশে উদযাপাতি হবে। ঈদ উপলক্ষে ফি বারও রাজধানী ছেড়েছিলো কোটির উপরে মানুষ। ট্রেন, লঞ্চ ও মহাসড়কে ছিলো মানুষের ঢল। কোন কোন মহাসড়কে ২০ থেকে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হয়েছিলো। ঈদে ট্রেনে, সড়ক ও জলপথে লঞ্চে বাড়ি ফেরা মানুষের ছিল নির্ঘুম প্রতিযোগিতা। অনেকেতো স্টেশনেই রাত কাটিয়ে ভোরের গাড়ি ধরেছেন।
অগুনতি মানুষ যেতো ট্রেনে চড়ে। রেলপথে পথে ট্রেন চলাচলের অস্তিত্ব থাকলেও ট্রেনটিকে মনে হতো একটি বিশাল মানব লরি। লঞ্চেও তাই। কিন্তু এবারে চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। গণপরিবহন, ট্রেন ও জলপথে লঞ্চ বন্ধ। বহু মানুষ এই নিদাল কালে রাজধানী ও আশাপাশ এলাকা ছেড়ে বাড়ি যেতে নারাজ। অনেকে শ শ মাইল পায়ে হেটে গ্রামে যাচ্ছেন। ভাড়ার প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, অটোরিকশা, ব্যাটারি চালিত রিক্সায় করে কয়েক গুণ ভাড়া গুলে ভেঙ্গে ভেঙ্গে বাড়ি ফিরছেন তারা। ফেরিঘাটগুলোয় প্রচন্ড ভীড়। সামাজিক দূরত্ব মানার চেয়ে, এই মুহূর্তে বাড়ি ফেরাটাই মুখ্য হয়ে ওঠেছে।
কারণ একটাই করোনা! অজানা, অচেনা এক ভাইরাস! যা দুনিয়া কাঁপিয়ে তার প্রাধান্য জাহির করে চলেছে। তার ভয়ে বিশে^র সবচেয়ে শক্তিশালীরা আজ পরাভূত। ভয়ে রীতিমত কাঁপছে। কথা বলছে ধরা গলায়। বহুকাল পর দুনিয়ায় জোড়া আধিপত্য বিস্তার করলো কোন ভাইরাস! যার নাম করোনা। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) সংস্কার করা নাম কোভিড-১৯। যার উৎপত্তিস্থল চীনের উবেই প্রদেশ উহানে।
সেখান থেকেই এটি দুনিয়ার দুইশ’র উপরে দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। এটা পরিষ্কার বলা যায়, দ্রুত ছোঁয়াছে এবং মৃত্যু ঘটায় এমন দুনিয়াজোড়া ভাইরাস কোভিড-১৯ প্রথম। এর আগে খ্রীষ্টপূর্ব এবং পরে বিভিন্ন ধরণের ভাইরাস ছড়িয়েছিলো। তবে তা নির্ধারিত কোন অঞ্চলে বা একাধিক দেশে সীমাবদ্ধ ছিল।
তাতে মৃত্যুর সংখ্যা কোভিড-১৯ এর তুলানায় নস্যি। আজ যা বিশেষজ্ঞদের ইতিহাসের পাতায় বন্দী।
কিন্তু করোনা বা কোভিড-১৯ দুর্বল হলে তখন আক্রান্ত ও মৃত্যু ঘটনা কমবে। কিন্তু এর জেরে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা দুনিয়াকে বহন করতে হবে বহু কাল। করোনার থাবায় দারিদ্রতা, কর্মহীন, পিছিয়ে পড়া অর্থনীতি ইত্যাদি স্বাভাবিক গতি ফিরতে কতটা সময় লাগবে তা এখনও বলার সময় আসেনি। কারণ, কোভিড-১৯ মহাপ্রভাব বিস্তার করেই চলেছে। এখনও পর্যন্ত দুনিয়ার বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীরা রাতকে দিন করেও কার্যকর কোন প্রতিষেধ আবিষ্কারে ব্যর্থ হয়েছেন। পৃথিবীতে অনেক বিপদজনক ভাইরাসের প্রতিষেধ নেই। সে ক্ষেত্রে সম্ভব শুধু সচেতনতা। সামাজিক দূরত্ব বা লকডাউন নিশ্চিত করেই মানুষ চলমান মহামারির কবল থেকে রক্ষায় চেষ্টা করেছে। কিন্তু অর্থনীতির চাকা সচল রাখা এবং অতিপ্রয়োজনীয় কাজকর্ম চালিয়ে নিতে লকডাউন কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। যাতে করে বাংলাদেশে বিপত্তি ঘটেছে।
বাংলাদেশের মতো একটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশের জন্য লকডাউন শিথল না করে উপায়ও ছিল না। তবে তা ব্যাপক হারে করেনি সরকার। স্বাস্থ্য বিধি মেনে গামের্ন্ট কারখানা চালু করতে বলা হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে কঠিনভাবে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে কাজ করার নির্দেশনা দেয়া হয়। এ ব্যাপারে সরকারের দায়িত্ব ছিল যথাযথ। করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর জমকালো আয়োজন স্থগিত করা হয়। যেখানে অন্যতম অতিথি হয়ে আসার কথা ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ বিশে^র অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা।
২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পাশাপাশি করোনার বিস্তার রুখতে মাঠে নামেন সেনাবাহিনী। সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় নিয়মিত টহল, ত্রাণ তৎপরতা চালানো অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের মাঝে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার প্রবণতা তেমন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। অনেকে বিভিন্ন অজুহাতে চলাফেরা করছেন। ঈদকে সামনে রেখে সামাজিক দূরত্ব না মেনেই গাদাগাদি করে গ্রামের পথে ছুটছেন। যা নিয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষ এখন আতঙ্ক। বাংলাদেশে করোনারভাইরাসের সামজিক সংক্রমণের কারণে এমন আতঙ্ক বিরাজ করছে গ্রামের মানুষদের মাঝেও। বাংলাদেশে এরই মধ্যে আক্রান্ত ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আর তা হয়েছে মাত্র মাস দুয়েকের মধ্যেই। এটাকে সংকমণের উচ্চমুখী প্রবণতা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া শুক্রবার দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ২৪ জনের। শনিবার কমে ২০ জনের মৃত খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এদিন আক্রান্ত হয়েছে ৩২ হাজার ৭৮ জন। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৪৫২জন।
এমন অবস্থায় ঈদের বাড়ি ফেরা মানুষদের নিয়ে সাধারণ মানুষের আতঙ্ক রয়েছে। এতে করে নতুন নতুন এলাকায় সংক্রমন ছড়িয়ে পরতে পারে। প্রতিবার ঈদের ছুটিতে নাড়ির টানে সপরিবারে গ্রামে ছুটে যান লাখো মানুষ। শহুরে ঘিঞ্জি পরিবেশ ছেড়ে খোলামেলা প্রকৃতির কাছে। যে কয়দিন থাকতেন, সেই সময়টা আনন্দে কাটিয়ে দিতেন পুরানো বন্ধুবান্ধব ছাড়াও স্বজনদের সঙ্গে। তারপর ফিরতেন রাজধানী। এবারে ঈদের চেহারাটা ভিন্ন।
শহর ছেড়ে গ্রামে যাওয়া মানুষদের কাছে পরিচিত জনরাও যেন অপরিচিত। আগের মতো ছুটে এসে বুকে জড়িয়ে ধরছে না। বরং তারা ভীত করোনা সংক্রমন নিয়ে। কিন্তু তাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। করোনা পরিস্থিতি গ্রামের সহচ-সরল মানুষগুলোকে কঠিন করে তুলছে। কবে ফিরে আসবে তাদের সেই সারল্য? কবে অচেনা অজানা মানুষ তাদের আপ্যায়নে মুগ্ধ হবে? আমরা যে তাদের সরলতার স্পর্শ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। কবে দেখতে পাবো সেই মানুষগুলোর দুঃখ ভোলানো হাসি। তা কি আপনি বলতে পারেন?
এ এন খান, ঢাকা

কবে ফিরে পাবো স্পর্শ বঞ্চিত মানুষের দুঃখভোলানো হাসি?

মাঝে আর মাত্র একটি দিন। তারপরই মুসলিম ধর্মাবলম্বি মানুষ উদযাপন করবেন ঈদুল ফিতর। কিন্তু নিরানন্দ ঈদ উযাপনে নাড়ির টানে গ্রামে পৌছানোর পরও স্বজন এবং পরর্শিদের তেমন একটা উৎসাহ নেই। প্রতিবছর বিশেষ দিনটিকে সামনে রেখে গ্রামে পৌছানোর পর স্বজন ও বন্ধুবন্ধরা বুকে জড়িয়ে নিতো পরম মমতায়। যা আজ অতীত। পরিচিতজনদের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত মানুষ। যারাও গিয়েছেন, তাদের দেখে করোনা সংক্রমণের অজানা বয়ে কাপছে গ্রামাঞ্চের মানুষজন।
মিডিয়ার বদৌলতে গ্রামে বসেই সারাদেশের খবর পাচ্ছেন মানুষ। রাজধানী ঢাকায় সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্ত একথা তারা আগে থেকেই জেনে গেছেন। তাই ঢাকা থেকে যারাই ঈদে গ্রামের গিয়েছেন, তাদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছেন তারা। পরিচিতরাও কাছে আসতে চাইছেন না। নিরাবরন গ্রামের সরল মানুগুলোর মুখ। এখন আর পরিচিত কাউকে দেখলেই এগিয়ে যেয়ে বলেন না কেমন আছো ? কবে আসলে? এক মহাতঙ্কে ভুগছেন সহজ-সরল মানুষেরা। কবে ফিরে পাবো এসব মানুষের স্পর্শ ? দুঃখভোলানো হাসি?
করোনা মহামারির পিঠ বেয়ে আসা ঈদ সোমবার বাংলাদেশে উদযাপাতি হবে। ঈদ উপলক্ষে ফি বারও রাজধানী ছেড়েছিলো কোটির উপরে মানুষ। ট্রেন, লঞ্চ ও মহাসড়কে ছিলো মানুষের ঢল। কোন কোন মহাসড়কে ২০ থেকে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হয়েছিলো। ঈদে ট্রেনে, সড়ক ও জলপথে লঞ্চে বাড়ি ফেরা মানুষের ছিল নির্ঘুম প্রতিযোগিতা। অনেকেতো স্টেশনেই রাত কাটিয়ে ভোরের গাড়ি ধরেছেন।
অগুনতি মানুষ যেতো ট্রেনে চড়ে। রেলপথে পথে ট্রেন চলাচলের অস্তিত্ব থাকলেও ট্রেনটিকে মনে হতো একটি বিশাল মানব লরি। লঞ্চেও তাই। কিন্তু এবারে চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। গণপরিবহন, ট্রেন ও জলপথে লঞ্চ বন্ধ। বহু মানুষ এই নিদাল কালে রাজধানী ও আশাপাশ এলাকা ছেড়ে বাড়ি যেতে নারাজ। অনেকে শ শ মাইল পায়ে হেটে গ্রামে যাচ্ছেন। ভাড়ার প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, অটোরিকশা, ব্যাটারি চালিত রিক্সায় করে কয়েক গুণ ভাড়া গুলে ভেঙ্গে ভেঙ্গে বাড়ি ফিরছেন তারা। ফেরিঘাটগুলোয় প্রচন্ড ভীড়। সামাজিক দূরত্ব মানার চেয়ে, এই মুহূর্তে বাড়ি ফেরাটাই মুখ্য হয়ে ওঠেছে।
কারণ একটাই করোনা! অজানা, অচেনা এক ভাইরাস! যা দুনিয়া কাঁপিয়ে তার প্রাধান্য জাহির করে চলেছে। তার ভয়ে বিশে^র সবচেয়ে শক্তিশালীরা আজ পরাভূত। ভয়ে রীতিমত কাঁপছে। কথা বলছে ধরা গলায়। বহুকাল পর দুনিয়ায় জোড়া আধিপত্য বিস্তার করলো কোন ভাইরাস! যার নাম করোনা। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) সংস্কার করা নাম কোভিড-১৯। যার উৎপত্তিস্থল চীনের উবেই প্রদেশ উহানে।
সেখান থেকেই এটি দুনিয়ার দুইশ’র উপরে দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। এটা পরিষ্কার বলা যায়, দ্রুত ছোঁয়াছে এবং মৃত্যু ঘটায় এমন দুনিয়াজোড়া ভাইরাস কোভিড-১৯ প্রথম। এর আগে খ্রীষ্টপূর্ব এবং পরে বিভিন্ন ধরণের ভাইরাস ছড়িয়েছিলো। তবে তা নির্ধারিত কোন অঞ্চলে বা একাধিক দেশে সীমাবদ্ধ ছিল।
তাতে মৃত্যুর সংখ্যা কোভিড-১৯ এর তুলানায় নস্যি। আজ যা বিশেষজ্ঞদের ইতিহাসের পাতায় বন্দী।
কিন্তু করোনা বা কোভিড-১৯ দুর্বল হলে তখন আক্রান্ত ও মৃত্যু ঘটনা কমবে। কিন্তু এর জেরে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা দুনিয়াকে বহন করতে হবে বহু কাল। করোনার থাবায় দারিদ্রতা, কর্মহীন, পিছিয়ে পড়া অর্থনীতি ইত্যাদি স্বাভাবিক গতি ফিরতে কতটা সময় লাগবে তা এখনও বলার সময় আসেনি। কারণ, কোভিড-১৯ মহাপ্রভাব বিস্তার করেই চলেছে। এখনও পর্যন্ত দুনিয়ার বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীরা রাতকে দিন করেও কার্যকর কোন প্রতিষেধ আবিষ্কারে ব্যর্থ হয়েছেন। পৃথিবীতে অনেক বিপদজনক ভাইরাসের প্রতিষেধ নেই। সে ক্ষেত্রে সম্ভব শুধু সচেতনতা। সামাজিক দূরত্ব বা লকডাউন নিশ্চিত করেই মানুষ চলমান মহামারির কবল থেকে রক্ষায় চেষ্টা করেছে। কিন্তু অর্থনীতির চাকা সচল রাখা এবং অতিপ্রয়োজনীয় কাজকর্ম চালিয়ে নিতে লকডাউন কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। যাতে করে বাংলাদেশে বিপত্তি ঘটেছে।
বাংলাদেশের মতো একটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশের জন্য লকডাউন শিথল না করে উপায়ও ছিল না। তবে তা ব্যাপক হারে করেনি সরকার। স্বাস্থ্য বিধি মেনে গামের্ন্ট কারখানা চালু করতে বলা হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে কঠিনভাবে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে কাজ করার নির্দেশনা দেয়া হয়। এ ব্যাপারে সরকারের দায়িত্ব ছিল যথাযথ। করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর জমকালো আয়োজন স্থগিত করা হয়। যেখানে অন্যতম অতিথি হয়ে আসার কথা ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ বিশে^র অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা।
২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পাশাপাশি করোনার বিস্তার রুখতে মাঠে নামেন সেনাবাহিনী। সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় নিয়মিত টহল, ত্রাণ তৎপরতা চালানো অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের মাঝে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার প্রবণতা তেমন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। অনেকে বিভিন্ন অজুহাতে চলাফেরা করছেন। ঈদকে সামনে রেখে সামাজিক দূরত্ব না মেনেই গাদাগাদি করে গ্রামের পথে ছুটছেন। যা নিয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষ এখন আতঙ্ক। বাংলাদেশে করোনারভাইরাসের সামজিক সংক্রমণের কারণে এমন আতঙ্ক বিরাজ করছে গ্রামের মানুষদের মাঝেও। বাংলাদেশে এরই মধ্যে আক্রান্ত ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আর তা হয়েছে মাত্র মাস দুয়েকের মধ্যেই। এটাকে সংকমণের উচ্চমুখী প্রবণতা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া শুক্রবার দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ২৪ জনের। শনিবার কমে ২০ জনের মৃত খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এদিন আক্রান্ত হয়েছে ৩২ হাজার ৭৮ জন। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৪৫২জন।
এমন অবস্থায় ঈদের বাড়ি ফেরা মানুষদের নিয়ে সাধারণ মানুষের আতঙ্ক রয়েছে। এতে করে নতুন নতুন এলাকায় সংক্রমন ছড়িয়ে পরতে পারে। প্রতিবার ঈদের ছুটিতে নাড়ির টানে সপরিবারে গ্রামে ছুটে যান লাখো মানুষ। শহুরে ঘিঞ্জি পরিবেশ ছেড়ে খোলামেলা প্রকৃতির কাছে। যে কয়দিন থাকতেন, সেই সময়টা আনন্দে কাটিয়ে দিতেন পুরানো বন্ধুবান্ধব ছাড়াও স্বজনদের সঙ্গে। তারপর ফিরতেন রাজধানী। এবারে ঈদের চেহারাটা ভিন্ন।
শহর ছেড়ে গ্রামে যাওয়া মানুষদের কাছে পরিচিত জনরাও যেন অপরিচিত। আগের মতো ছুটে এসে বুকে জড়িয়ে ধরছে না। বরং তারা ভীত করোনা সংক্রমন নিয়ে। কিন্তু তাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। করোনা পরিস্থিতি গ্রামের সহচ-সরল মানুষগুলোকে কঠিন করে তুলছে। কবে ফিরে আসবে তাদের সেই সারল্য? কবে অচেনা অজানা মানুষ তাদের আপ্যায়নে মুগ্ধ হবে? আমরা যে তাদের সরলতার স্পর্শ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। কবে দেখতে পাবো সেই মানুষগুলোর দুঃখ ভোলানো হাসি। তা কি আপনি বলতে পারেন?
এ এন খান, ঢাকা

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

কবে ফিরে পাবো স্পর্শ বঞ্চিত মানুষের দুঃখভোলানো হাসি?

আপডেট সময় : ০৪:০৮:৪৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ মে ২০২০

মাঝে আর মাত্র একটি দিন। তারপরই মুসলিম ধর্মাবলম্বি মানুষ উদযাপন করবেন ঈদুল ফিতর। কিন্তু নিরানন্দ ঈদ উযাপনে নাড়ির টানে গ্রামে পৌছানোর পরও স্বজন এবং পরর্শিদের তেমন একটা উৎসাহ নেই। প্রতিবছর বিশেষ দিনটিকে সামনে রেখে গ্রামে পৌছানোর পর স্বজন ও বন্ধুবন্ধরা বুকে জড়িয়ে নিতো পরম মমতায়। যা আজ অতীত। পরিচিতজনদের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত মানুষ। যারাও গিয়েছেন, তাদের দেখে করোনা সংক্রমণের অজানা বয়ে কাপছে গ্রামাঞ্চের মানুষজন।
মিডিয়ার বদৌলতে গ্রামে বসেই সারাদেশের খবর পাচ্ছেন মানুষ। রাজধানী ঢাকায় সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্ত একথা তারা আগে থেকেই জেনে গেছেন। তাই ঢাকা থেকে যারাই ঈদে গ্রামের গিয়েছেন, তাদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছেন তারা। পরিচিতরাও কাছে আসতে চাইছেন না। নিরাবরন গ্রামের সরল মানুগুলোর মুখ। এখন আর পরিচিত কাউকে দেখলেই এগিয়ে যেয়ে বলেন না কেমন আছো ? কবে আসলে? এক মহাতঙ্কে ভুগছেন সহজ-সরল মানুষেরা। কবে ফিরে পাবো এসব মানুষের স্পর্শ ? দুঃখভোলানো হাসি?
করোনা মহামারির পিঠ বেয়ে আসা ঈদ সোমবার বাংলাদেশে উদযাপাতি হবে। ঈদ উপলক্ষে ফি বারও রাজধানী ছেড়েছিলো কোটির উপরে মানুষ। ট্রেন, লঞ্চ ও মহাসড়কে ছিলো মানুষের ঢল। কোন কোন মহাসড়কে ২০ থেকে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হয়েছিলো। ঈদে ট্রেনে, সড়ক ও জলপথে লঞ্চে বাড়ি ফেরা মানুষের ছিল নির্ঘুম প্রতিযোগিতা। অনেকেতো স্টেশনেই রাত কাটিয়ে ভোরের গাড়ি ধরেছেন।
অগুনতি মানুষ যেতো ট্রেনে চড়ে। রেলপথে পথে ট্রেন চলাচলের অস্তিত্ব থাকলেও ট্রেনটিকে মনে হতো একটি বিশাল মানব লরি। লঞ্চেও তাই। কিন্তু এবারে চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। গণপরিবহন, ট্রেন ও জলপথে লঞ্চ বন্ধ। বহু মানুষ এই নিদাল কালে রাজধানী ও আশাপাশ এলাকা ছেড়ে বাড়ি যেতে নারাজ। অনেকে শ শ মাইল পায়ে হেটে গ্রামে যাচ্ছেন। ভাড়ার প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, অটোরিকশা, ব্যাটারি চালিত রিক্সায় করে কয়েক গুণ ভাড়া গুলে ভেঙ্গে ভেঙ্গে বাড়ি ফিরছেন তারা। ফেরিঘাটগুলোয় প্রচন্ড ভীড়। সামাজিক দূরত্ব মানার চেয়ে, এই মুহূর্তে বাড়ি ফেরাটাই মুখ্য হয়ে ওঠেছে।
কারণ একটাই করোনা! অজানা, অচেনা এক ভাইরাস! যা দুনিয়া কাঁপিয়ে তার প্রাধান্য জাহির করে চলেছে। তার ভয়ে বিশে^র সবচেয়ে শক্তিশালীরা আজ পরাভূত। ভয়ে রীতিমত কাঁপছে। কথা বলছে ধরা গলায়। বহুকাল পর দুনিয়ায় জোড়া আধিপত্য বিস্তার করলো কোন ভাইরাস! যার নাম করোনা। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) সংস্কার করা নাম কোভিড-১৯। যার উৎপত্তিস্থল চীনের উবেই প্রদেশ উহানে।
সেখান থেকেই এটি দুনিয়ার দুইশ’র উপরে দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। এটা পরিষ্কার বলা যায়, দ্রুত ছোঁয়াছে এবং মৃত্যু ঘটায় এমন দুনিয়াজোড়া ভাইরাস কোভিড-১৯ প্রথম। এর আগে খ্রীষ্টপূর্ব এবং পরে বিভিন্ন ধরণের ভাইরাস ছড়িয়েছিলো। তবে তা নির্ধারিত কোন অঞ্চলে বা একাধিক দেশে সীমাবদ্ধ ছিল।
তাতে মৃত্যুর সংখ্যা কোভিড-১৯ এর তুলানায় নস্যি। আজ যা বিশেষজ্ঞদের ইতিহাসের পাতায় বন্দী।
কিন্তু করোনা বা কোভিড-১৯ দুর্বল হলে তখন আক্রান্ত ও মৃত্যু ঘটনা কমবে। কিন্তু এর জেরে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা দুনিয়াকে বহন করতে হবে বহু কাল। করোনার থাবায় দারিদ্রতা, কর্মহীন, পিছিয়ে পড়া অর্থনীতি ইত্যাদি স্বাভাবিক গতি ফিরতে কতটা সময় লাগবে তা এখনও বলার সময় আসেনি। কারণ, কোভিড-১৯ মহাপ্রভাব বিস্তার করেই চলেছে। এখনও পর্যন্ত দুনিয়ার বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীরা রাতকে দিন করেও কার্যকর কোন প্রতিষেধ আবিষ্কারে ব্যর্থ হয়েছেন। পৃথিবীতে অনেক বিপদজনক ভাইরাসের প্রতিষেধ নেই। সে ক্ষেত্রে সম্ভব শুধু সচেতনতা। সামাজিক দূরত্ব বা লকডাউন নিশ্চিত করেই মানুষ চলমান মহামারির কবল থেকে রক্ষায় চেষ্টা করেছে। কিন্তু অর্থনীতির চাকা সচল রাখা এবং অতিপ্রয়োজনীয় কাজকর্ম চালিয়ে নিতে লকডাউন কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। যাতে করে বাংলাদেশে বিপত্তি ঘটেছে।
বাংলাদেশের মতো একটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশের জন্য লকডাউন শিথল না করে উপায়ও ছিল না। তবে তা ব্যাপক হারে করেনি সরকার। স্বাস্থ্য বিধি মেনে গামের্ন্ট কারখানা চালু করতে বলা হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে কঠিনভাবে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে কাজ করার নির্দেশনা দেয়া হয়। এ ব্যাপারে সরকারের দায়িত্ব ছিল যথাযথ। করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর জমকালো আয়োজন স্থগিত করা হয়। যেখানে অন্যতম অতিথি হয়ে আসার কথা ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ বিশে^র অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা।
২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পাশাপাশি করোনার বিস্তার রুখতে মাঠে নামেন সেনাবাহিনী। সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় নিয়মিত টহল, ত্রাণ তৎপরতা চালানো অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের মাঝে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার প্রবণতা তেমন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। অনেকে বিভিন্ন অজুহাতে চলাফেরা করছেন। ঈদকে সামনে রেখে সামাজিক দূরত্ব না মেনেই গাদাগাদি করে গ্রামের পথে ছুটছেন। যা নিয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষ এখন আতঙ্ক। বাংলাদেশে করোনারভাইরাসের সামজিক সংক্রমণের কারণে এমন আতঙ্ক বিরাজ করছে গ্রামের মানুষদের মাঝেও। বাংলাদেশে এরই মধ্যে আক্রান্ত ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আর তা হয়েছে মাত্র মাস দুয়েকের মধ্যেই। এটাকে সংকমণের উচ্চমুখী প্রবণতা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া শুক্রবার দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ২৪ জনের। শনিবার কমে ২০ জনের মৃত খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এদিন আক্রান্ত হয়েছে ৩২ হাজার ৭৮ জন। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৪৫২জন।
এমন অবস্থায় ঈদের বাড়ি ফেরা মানুষদের নিয়ে সাধারণ মানুষের আতঙ্ক রয়েছে। এতে করে নতুন নতুন এলাকায় সংক্রমন ছড়িয়ে পরতে পারে। প্রতিবার ঈদের ছুটিতে নাড়ির টানে সপরিবারে গ্রামে ছুটে যান লাখো মানুষ। শহুরে ঘিঞ্জি পরিবেশ ছেড়ে খোলামেলা প্রকৃতির কাছে। যে কয়দিন থাকতেন, সেই সময়টা আনন্দে কাটিয়ে দিতেন পুরানো বন্ধুবান্ধব ছাড়াও স্বজনদের সঙ্গে। তারপর ফিরতেন রাজধানী। এবারে ঈদের চেহারাটা ভিন্ন।
শহর ছেড়ে গ্রামে যাওয়া মানুষদের কাছে পরিচিত জনরাও যেন অপরিচিত। আগের মতো ছুটে এসে বুকে জড়িয়ে ধরছে না। বরং তারা ভীত করোনা সংক্রমন নিয়ে। কিন্তু তাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। করোনা পরিস্থিতি গ্রামের সহচ-সরল মানুষগুলোকে কঠিন করে তুলছে। কবে ফিরে আসবে তাদের সেই সারল্য? কবে অচেনা অজানা মানুষ তাদের আপ্যায়নে মুগ্ধ হবে? আমরা যে তাদের সরলতার স্পর্শ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। কবে দেখতে পাবো সেই মানুষগুলোর দুঃখ ভোলানো হাসি। তা কি আপনি বলতে পারেন?
এ এন খান, ঢাকা

কবে ফিরে পাবো স্পর্শ বঞ্চিত মানুষের দুঃখভোলানো হাসি?

মাঝে আর মাত্র একটি দিন। তারপরই মুসলিম ধর্মাবলম্বি মানুষ উদযাপন করবেন ঈদুল ফিতর। কিন্তু নিরানন্দ ঈদ উযাপনে নাড়ির টানে গ্রামে পৌছানোর পরও স্বজন এবং পরর্শিদের তেমন একটা উৎসাহ নেই। প্রতিবছর বিশেষ দিনটিকে সামনে রেখে গ্রামে পৌছানোর পর স্বজন ও বন্ধুবন্ধরা বুকে জড়িয়ে নিতো পরম মমতায়। যা আজ অতীত। পরিচিতজনদের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত মানুষ। যারাও গিয়েছেন, তাদের দেখে করোনা সংক্রমণের অজানা বয়ে কাপছে গ্রামাঞ্চের মানুষজন।
মিডিয়ার বদৌলতে গ্রামে বসেই সারাদেশের খবর পাচ্ছেন মানুষ। রাজধানী ঢাকায় সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্ত একথা তারা আগে থেকেই জেনে গেছেন। তাই ঢাকা থেকে যারাই ঈদে গ্রামের গিয়েছেন, তাদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছেন তারা। পরিচিতরাও কাছে আসতে চাইছেন না। নিরাবরন গ্রামের সরল মানুগুলোর মুখ। এখন আর পরিচিত কাউকে দেখলেই এগিয়ে যেয়ে বলেন না কেমন আছো ? কবে আসলে? এক মহাতঙ্কে ভুগছেন সহজ-সরল মানুষেরা। কবে ফিরে পাবো এসব মানুষের স্পর্শ ? দুঃখভোলানো হাসি?
করোনা মহামারির পিঠ বেয়ে আসা ঈদ সোমবার বাংলাদেশে উদযাপাতি হবে। ঈদ উপলক্ষে ফি বারও রাজধানী ছেড়েছিলো কোটির উপরে মানুষ। ট্রেন, লঞ্চ ও মহাসড়কে ছিলো মানুষের ঢল। কোন কোন মহাসড়কে ২০ থেকে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হয়েছিলো। ঈদে ট্রেনে, সড়ক ও জলপথে লঞ্চে বাড়ি ফেরা মানুষের ছিল নির্ঘুম প্রতিযোগিতা। অনেকেতো স্টেশনেই রাত কাটিয়ে ভোরের গাড়ি ধরেছেন।
অগুনতি মানুষ যেতো ট্রেনে চড়ে। রেলপথে পথে ট্রেন চলাচলের অস্তিত্ব থাকলেও ট্রেনটিকে মনে হতো একটি বিশাল মানব লরি। লঞ্চেও তাই। কিন্তু এবারে চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। গণপরিবহন, ট্রেন ও জলপথে লঞ্চ বন্ধ। বহু মানুষ এই নিদাল কালে রাজধানী ও আশাপাশ এলাকা ছেড়ে বাড়ি যেতে নারাজ। অনেকে শ শ মাইল পায়ে হেটে গ্রামে যাচ্ছেন। ভাড়ার প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, অটোরিকশা, ব্যাটারি চালিত রিক্সায় করে কয়েক গুণ ভাড়া গুলে ভেঙ্গে ভেঙ্গে বাড়ি ফিরছেন তারা। ফেরিঘাটগুলোয় প্রচন্ড ভীড়। সামাজিক দূরত্ব মানার চেয়ে, এই মুহূর্তে বাড়ি ফেরাটাই মুখ্য হয়ে ওঠেছে।
কারণ একটাই করোনা! অজানা, অচেনা এক ভাইরাস! যা দুনিয়া কাঁপিয়ে তার প্রাধান্য জাহির করে চলেছে। তার ভয়ে বিশে^র সবচেয়ে শক্তিশালীরা আজ পরাভূত। ভয়ে রীতিমত কাঁপছে। কথা বলছে ধরা গলায়। বহুকাল পর দুনিয়ায় জোড়া আধিপত্য বিস্তার করলো কোন ভাইরাস! যার নাম করোনা। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) সংস্কার করা নাম কোভিড-১৯। যার উৎপত্তিস্থল চীনের উবেই প্রদেশ উহানে।
সেখান থেকেই এটি দুনিয়ার দুইশ’র উপরে দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। এটা পরিষ্কার বলা যায়, দ্রুত ছোঁয়াছে এবং মৃত্যু ঘটায় এমন দুনিয়াজোড়া ভাইরাস কোভিড-১৯ প্রথম। এর আগে খ্রীষ্টপূর্ব এবং পরে বিভিন্ন ধরণের ভাইরাস ছড়িয়েছিলো। তবে তা নির্ধারিত কোন অঞ্চলে বা একাধিক দেশে সীমাবদ্ধ ছিল।
তাতে মৃত্যুর সংখ্যা কোভিড-১৯ এর তুলানায় নস্যি। আজ যা বিশেষজ্ঞদের ইতিহাসের পাতায় বন্দী।
কিন্তু করোনা বা কোভিড-১৯ দুর্বল হলে তখন আক্রান্ত ও মৃত্যু ঘটনা কমবে। কিন্তু এর জেরে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা দুনিয়াকে বহন করতে হবে বহু কাল। করোনার থাবায় দারিদ্রতা, কর্মহীন, পিছিয়ে পড়া অর্থনীতি ইত্যাদি স্বাভাবিক গতি ফিরতে কতটা সময় লাগবে তা এখনও বলার সময় আসেনি। কারণ, কোভিড-১৯ মহাপ্রভাব বিস্তার করেই চলেছে। এখনও পর্যন্ত দুনিয়ার বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীরা রাতকে দিন করেও কার্যকর কোন প্রতিষেধ আবিষ্কারে ব্যর্থ হয়েছেন। পৃথিবীতে অনেক বিপদজনক ভাইরাসের প্রতিষেধ নেই। সে ক্ষেত্রে সম্ভব শুধু সচেতনতা। সামাজিক দূরত্ব বা লকডাউন নিশ্চিত করেই মানুষ চলমান মহামারির কবল থেকে রক্ষায় চেষ্টা করেছে। কিন্তু অর্থনীতির চাকা সচল রাখা এবং অতিপ্রয়োজনীয় কাজকর্ম চালিয়ে নিতে লকডাউন কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। যাতে করে বাংলাদেশে বিপত্তি ঘটেছে।
বাংলাদেশের মতো একটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশের জন্য লকডাউন শিথল না করে উপায়ও ছিল না। তবে তা ব্যাপক হারে করেনি সরকার। স্বাস্থ্য বিধি মেনে গামের্ন্ট কারখানা চালু করতে বলা হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে কঠিনভাবে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে কাজ করার নির্দেশনা দেয়া হয়। এ ব্যাপারে সরকারের দায়িত্ব ছিল যথাযথ। করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর জমকালো আয়োজন স্থগিত করা হয়। যেখানে অন্যতম অতিথি হয়ে আসার কথা ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ বিশে^র অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা।
২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পাশাপাশি করোনার বিস্তার রুখতে মাঠে নামেন সেনাবাহিনী। সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় নিয়মিত টহল, ত্রাণ তৎপরতা চালানো অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের মাঝে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার প্রবণতা তেমন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। অনেকে বিভিন্ন অজুহাতে চলাফেরা করছেন। ঈদকে সামনে রেখে সামাজিক দূরত্ব না মেনেই গাদাগাদি করে গ্রামের পথে ছুটছেন। যা নিয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষ এখন আতঙ্ক। বাংলাদেশে করোনারভাইরাসের সামজিক সংক্রমণের কারণে এমন আতঙ্ক বিরাজ করছে গ্রামের মানুষদের মাঝেও। বাংলাদেশে এরই মধ্যে আক্রান্ত ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আর তা হয়েছে মাত্র মাস দুয়েকের মধ্যেই। এটাকে সংকমণের উচ্চমুখী প্রবণতা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া শুক্রবার দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ২৪ জনের। শনিবার কমে ২০ জনের মৃত খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এদিন আক্রান্ত হয়েছে ৩২ হাজার ৭৮ জন। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৪৫২জন।
এমন অবস্থায় ঈদের বাড়ি ফেরা মানুষদের নিয়ে সাধারণ মানুষের আতঙ্ক রয়েছে। এতে করে নতুন নতুন এলাকায় সংক্রমন ছড়িয়ে পরতে পারে। প্রতিবার ঈদের ছুটিতে নাড়ির টানে সপরিবারে গ্রামে ছুটে যান লাখো মানুষ। শহুরে ঘিঞ্জি পরিবেশ ছেড়ে খোলামেলা প্রকৃতির কাছে। যে কয়দিন থাকতেন, সেই সময়টা আনন্দে কাটিয়ে দিতেন পুরানো বন্ধুবান্ধব ছাড়াও স্বজনদের সঙ্গে। তারপর ফিরতেন রাজধানী। এবারে ঈদের চেহারাটা ভিন্ন।
শহর ছেড়ে গ্রামে যাওয়া মানুষদের কাছে পরিচিত জনরাও যেন অপরিচিত। আগের মতো ছুটে এসে বুকে জড়িয়ে ধরছে না। বরং তারা ভীত করোনা সংক্রমন নিয়ে। কিন্তু তাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। করোনা পরিস্থিতি গ্রামের সহচ-সরল মানুষগুলোকে কঠিন করে তুলছে। কবে ফিরে আসবে তাদের সেই সারল্য? কবে অচেনা অজানা মানুষ তাদের আপ্যায়নে মুগ্ধ হবে? আমরা যে তাদের সরলতার স্পর্শ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। কবে দেখতে পাবো সেই মানুষগুলোর দুঃখ ভোলানো হাসি। তা কি আপনি বলতে পারেন?
এ এন খান, ঢাকা