কবি নজরুলের জন্মদিবসকে ‘আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি দিবস’ ঘোষণার দাবি
- আপডেট সময় : ০৭:৪৬:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ মে ২০২৩ ১৬২ বার পড়া হয়েছে
অনিরুদ্ধ
‘মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই
যেন গোর থেকে মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই’
বাংলাদেশের জাতীয় কবি, সাম্যের কবি, মানুষের কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার কবিতায় এমন আকুতি জানিয়েছিলেন। সেই আকুতি আক্ষরে অক্ষরে পালন হয়েছে। কবি আজ চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে আছেন বাংলাদেশের রাজধানীর প্রাণ কেন্দ্র ঢাকা বিদ্যালয়ের কেন্দ্রী মসজিদের সবুজ চত্বরে। চারিদিকে মনোরম পরিবেশ। বহু নজরুল ভক্ত এখানে দু’দণ্ড বসে প্রশান্তি লাভ করেন।
বাঁশীর শ্রদ্ধা
বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই হাজারো মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে কবির সমাধি প্রাঙ্গণ। দুরদূরান্ত থেকে হাজারো মানুষের ছুটে আসা। কেউ কবিতা আবৃত্তি করছেন, কেউ কবির জন্য প্রার্থনা করছেন। সমাধির পাশের মঞ্চে চলছে আলোচনা ও সঙ্গীতা অনুষ্ঠান। এমিন নানা আয়োজনে ঢাকায় জাতীয় কবির ১২৪তম জন্মবার্ষিকী উদপান করা হয়। কবির জন্মদিনটি ‘আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি দিবস’ ঘোষণার জোড়ালো দাবি ওঠে নানা জনের বক্তব্যে। অবস্থা প্রেক্ষিতে মনে হয়েছে, গোটা সমাধি প্রাঙ্গণই যেন একটি নজরুল মঞ্চ। এদিন ফুলে ফুলে ভরে ওঠে কবির সমাধি।
ক্ষমতাসী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নেতৃত্বে কবির সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। খায়রুল কবির খোকনের নেতৃত্বে বিএনপির তরফে কবিকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক সমাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন কবির সমাধিতে পুষ্পার্ঘ দিয়ে শ্রদ্ধানিবেদন করে।
কবির পরিবারের শ্রদ্ধা
নজরুল র্চ্চা কেন্দ্র বাঁশীর প্রতিষ্ঠাতা ড. খালেকউজ্জামান বলেন, কবির ১২৪তম জন্মবার্ষিকী ‘আন্তঃধর্মী সম্প্রীতি’ দিবস হিসাবে পালন করা হচ্ছে। বলতে পারেন, এই উদ্যোগ শুরু হল। ‘আন্তঃধর্মী সম্প্রীতি’ দিবস-এর ঘোষণার জন্য আমরা নানা প্রান্তে ছুটে বেড়াবো। তিনি বলেন, বিদ্রোহী কবি হিসাবে তাকে সীমাবদ্ধ না রেখে ‘মানুষের কবি নজরুল’ বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চাই। তার লেখা বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করে প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হবে। কারণ, বর্তমান সময়ে নজরুল প্রাসঙ্গিক।
কবি নজরুল আমাদের চেতনা। তিনি মানুষের কবি, সাম্যের কবি, মানুষের কবি। সমাজের যেকোন অসঙ্গিতে আমরা আশ্রয় নেই, নজরুলের কাছে। ভালোবাসার কবি আমাদের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে জড়িয়ে রয়েছে বলে বিশ্বাস করেন, বিশিষ্ট নজরুল সঙ্গীত শিল্পী ও লেখক ফরিদা সুলতানা।
নজরুল সঙ্গীত শিল্পী ফরিদা সুলতানা
দীর্ঘ বছর ধরে নজরুল চর্চ কেন্দ্র বাঁশরী টানা ১৪ বছর যাবত নিত্য ভোরে কবির সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে চলেছে। তারা মনে করেন, নজরুল সব সময়ই আমাদের চেতনা। কারণ তিনি সাম্যের কবি, মানুষের কবি।
সকালে কবির পরিবারের তরফে কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসেন কবি নাতনী খিলখিল কাজী। তার আহ্বান বিদ্রোহী কবিতাটি হেরিটেজ হিসাবে পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেবার। খিলখিল বলেন, কবি জীবনভর মানুষের জয়গান করেছেন, সাম্যের কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, মোরা একই বৃন্তে দু’টি ফুল, হিন্দু-মুসলমান।
ড. মনরঞ্জন ঘোষাল
কবির সমাধির পাশের মঞ্চে দাঁড়িয়ে নজরুলের জন্মদিবসকে আন্তঃধর্মী সম্প্রীতি দিবস হিসাবে ঘোষণা দেবার উদ্যত আহ্বান জানান বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীন বাংলা বেতারের কণ্ঠযোদ্ধা একুশে পদক প্রাপ্ত ড. মনরঞ্জন ঘোষাল।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, নজরুলের সাহিত্যকর্মে পরাধীনতা, সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামের বাণী উচ্চারিত হয়েছে। অসামান্য ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী কবি নজরুল ছিলেন অসাম্প্রদায়িক ও জাতীয়তাবোধের মূর্ত প্রতীক। জন্মবার্ষিকীতে কবির স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।