ঔষুধ শিল্প বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মুখে কৌশলগত রূপান্তর

- আপডেট সময় : ০৫:৩৪:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ জুন ২০২৫ ১২৫ বার পড়া হয়েছে
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) এর নিয়ম অনুসারে পেটেন্টের ছাড়ের সুবিধা হারানো, বৈশ্বিক বাণিজ্য নীতির পরিবর্তন এবং দেশীয় বাজারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি অন্যতম চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশের ঔষুধ শিল্প বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় অতিক্রম করছে। স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পথে চলতে থাকা সম্ভাবনাময় এই শিল্পের সামনে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ এসেছে। যার মধ্যে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) এর নিয়ম অনুসারে পেটেন্টের ছাড়ের সুবিধা হারানো, বৈশ্বিক বাণিজ্য নীতির পরিবর্তন এবং দেশীয় বাজারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি অন্যতম চ্যালেঞ্জ। এমন অবস্থায় পরিস্থিতি মোকাবিলায় গেলো ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিআইএ) নবাগত কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে।
অভিজ্ঞ পেশাদার এবং নবীন নেতাদের নিয়ে গড়া এই কমিটি ঔষুধ শিল্পের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে টেকসই প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে সক্ষম হবে, এমনটিই আশা করছেন, খাতসংশ্লিষ্টরা।

ডেল্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. জাকির হোসেন নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক। তিনি বাংলাদেশের ঔষুধ গবেষণা ও নিয়মিত উৎপাদন কৌশলগতভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের ঔষুধ শিল্পের গবেষণা ও উন্নয়ন ক্ষেত্র আরও শক্তিশালী হবে, যা এলডিসি সুবিধা হারানোর পরেও শিল্পকে প্রতিযোগিতামূলক রাখতে সহায়ক হবে।
ইউনিমেড ইউনিহেলথ ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান মো. মোসাদ্দেক হোসেন সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্বে এসেছেন। একজন পেশাদার ফার্মাসিস্টদের ব্যবসায়িক এবং বিপণন খাতে একীভূত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন এবং নৈতিক ব্যবসায়িক চর্চার প্রতি আগ্রহী। তার নেতৃত্বে এই খাতে নতুন দিশা আসবে এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার পেটেন্ট সম্পর্কিত নীতি মেনে চলার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে।

সৈয়দ এস. কায়সার কবির, রেনাটা পিএলসি-এর সিইও, বর্তমানে কমিটির সহ-সভাপতি। তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে উল্লেখযোগ্য অবস্থান। তিনি বিশ্ব বাণিজ্য সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য কাজের পাশাপাশি সস্তা ও গুণগতমানের ওষুধের বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান নিশ্চিত করতে চেষ্টা চালাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
মুহাম্মদ হালিমুজ্জামান হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ডিএমডি এবং সিইও, নতুন কমিটির কোষাধ্যক্ষ। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যালস শিল্পকে আন্তর্জাতিক বাজারে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করার জন্য বিভিন্ন কৌশল তৈরি বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বাজারে ওষুধ রপ্তানি আরও গতিশীল হবে।
বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণ দেশের ওষুধ শিল্পের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই উত্তরণের ফলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার পেটেন্ট ছাড়ের সুবিধা আর থাকবে না। ফলে দেশটি এখন থেকে গ্লোবাল ইনটেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রেগুলেশন মেনে চলতে বাধ্য হবে, যা ওষুধের দাম এবং উৎপাদন কৌশল পরিবর্তন করে দিতে পারে।
এই পরিবর্তনকে মোকাবিলায় নতুন কমিটি বিভিন্ন কৌশল নির্ধারণ যার মধ্যে আছে দীর্ঘমেয়াদী ট্রানজিশন পিরিয়ড এবং আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পেটেন্ট সম্পর্কিত নিয়মকানুনের কার্যক্রম নির্ধারণ করা।

এলডিসি সুবিধা হারানোর কারণে বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলোর রপ্তানি বাজারে নতুন চ্যালেঞ্জ মুখমুখি হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পেয়ে থাকে, কিন্তু এলডিসি থেকে উত্তরণের পর এই সুবিধাগুলি কমে গিয়ে রপ্তানি ব্যয় বাড়বে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায়, বাংলাদেশের ঔষুধ কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন বাজার খোঁজা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। মধ্যপ্রাচ্য, ল্যাটিন আমেরিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নতুন বাজার সম্প্রসারণের জন্য কৌশলগত পথে এগুতে হবে।
ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদনে মুন্সিগঞ্জে একটি বিশেষ ওষুধ শিল্প পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। তাতে দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং কাঁচামাল আমদানি নির্ভরতা কমবে। দেশের ঔষুধ কোম্পানিগুলোর আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে গবেষণা ও উন্নয়ন বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন বিনিয়োগ। গবেষণার মাধ্যমে নতুন ধরনের পেটেন্ট করা ঔষুধ তৈরি করাও জরুরি, যাতে শুধু জেনেরিক ওষুধের ওপর নির্ভরতা করতে না হয়।
নতুন কমিটির নেতৃবৃন্দ তাদের অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণে কাজ জোর কদমে কাজ করে যাবেন বলে আশা করছে সংশ্লিষ্টরা। বিপিআইএ’র নেতৃত্বে বাংলাদেশের ঔষুধ শিল্প বৃহৎ পরিসরে বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাবে।