ঔষধের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক ও ভ্যাট অব্যাহতি ইতিবাচক : ঔষধ শিল্প সমিতি

- আপডেট সময় : ০২:২৭:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫ ৫৯ বার পড়া হয়েছে
২৪-এর জুলাই থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিলের মধ্যে ১৭৭ দশমিক ৪২ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ওষুধ রপ্তানি হয়েছে। ওষুধ শিল্পের এই মাথা উচুঁ অবস্থান যে কোন সময়ের তুলনায় বেশি
৯০ শতাংশ এপিআই আমদানী হয়ে থাকে। এই অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য এপিআই শিল্পের প্রসারে সরকারের শুল্কনীতি সহায়তা করবে
স্যান্ডউইচপ্যানেল ও ল্যাবরেটরি ফার্নিচারে উচ্চ শুল্ক বাধা
চাহিদার ৯৮ শতাংশ ওষুধের জোগান নিজস্ব উৎপাদনে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের ১৫৭টি দেশে উচ্চপ্রযুক্তির এন্টিবায়োটিক থেকে শুরু করে ইনসুলিন, বিভিন্ন রকম টিকা, এন্টিক্যান্সার ড্রাগ, এইচআইভির ওষুধ, বার্ড ফ্লুর ওষুধ চিকিৎসার ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে

আমিনুল হক ভূইয়া
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী ২৪-এর জুলাই থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিলের মধ্যে ১৭৭ দশমিক ৪২ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ওষুধ রপ্তানি হয়েছে। ওষুধ শিল্পের এই মাথা উচুঁ অবস্থান যে কোন সময়ের তুলনায় বেশি। স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৪ বছরে নানা সমস্যা ও সীমাবদ্ধতার মধ্যেও গণগতমানের বিকাশ ঘটিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা উল্লেখযোগ্য অবস্থান কওে নিতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প।
কিন্তু বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় ওষুধ শিল্পের সিংভাগ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব এপিআই নেই। কোন ওষুধের যে রাসায়নিক উপাদানটি মূলত রোগ সাড়ানোর কাজ করে, সেটিকে বলা হয়ে থাকে এপিআই। দ্বিতীয় উপাদানটিকে সহকারি উপাদান বলা হয়। যেমন স্টার্চ, রং বা ফ্লেভার। এপিআইয়ের ফুল ফর্ম একটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট। এটাই ওষুধের মূল ফরমুলা। অথচ বাংলাদেশের প্রায় ৯৫ ভাগ ওষুধের এপিআই বিদেশ থেকে আমদানি করে বিভিন্ন নামে বাজারজাত করা হয়।

এমন পরিস্থিতিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ঔষধ শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক ও কর অব্যাহতির সুবিধা আরও বাড়ানোর প্রস্তাব করার বিষয়টিকে ওষুধ শিল্পের বাধাহীন বিকাশের পথ তরান্বিত করবে বলে মনে করছে, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিটিউক্যালস ইন্ডস্ট্রিজ (বিএপিআই) তথা বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতি। তারা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের এমন সিদ্ধান্তে ঔষধ শিল্প আরও গতিশীল হবে।
ঔষধ শিল্প সমিতি বলছে, ওষুধের এপিআই শিল্পের কাঁচামাল আমদানীতে বিভিন্ন শুল্কছাড় প্রস্তাব করায় ঔষধের এপিআই শিল্পে বিকাশ হবে বিশেষ করে অতি উচ্চমূল্যের ক্যান্সার প্রতিরোধী ঔষধসমূহ বাজারজাতের পথ প্রশস্ত হবে।
বর্তমানে ৯০ শতাংশ এপিআই আমদানী হয়ে থাকে। এই অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য এপিআই শিল্পের প্রসারে সরকারের শুল্কনীতি সহায়তা করবে। একই সাথে স্থানীয়ভাবে বহু এপিআই শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে উচ্চ প্রযুক্তি ও গুণগতমানের ঔষধ সাধারণ মানুষের প্রাপ্তির বিপুল নিশ্চয়তা তৈরি হবে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে দেশের চাহিদার ৯৮ শতাংশ ওষুধের জোগান নিজস্ব উৎপাদনে। শুধু তাই নয়, মেডিন বাংলাদেশের ওষুধ বিশ্বের ১৫৭টি দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।

স্যান্ডউইচপ্যানেল ও ল্যাবরেটরি
ফার্নিচারে উচ্চ শুল্ক বাধা
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ তার বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে সব নাগরিককে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার পরিধি বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন ও দক্ষ জনবল নিয়োগে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতের শূন্য পদ পূরণে চিকিৎসক, সেবিকা, টেকনিশিয়ান, ফার্মাসিস্ট ও স্বাস্থ্য সহকারীদের নিয়োগ ত্বরান্বিত করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্টির সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টার এই বক্তব্য সময়োপযোগী উল্লেখ করে ওষুধ শিল্প সমিতি জানায়, ঔষধ শিল্পে ব্যবহৃত স্যান্ডউইচপ্যানেল ও ল্যাবরেটরি ফার্নিচার সমূহে এখনও উচ্চ শুল্কের আওতায়। অথচ আগে মাত্র ১ শতাংশ হারে ছিল। নতুন ঔষধ শিল্পের প্যানেলের ক্ষেত্রে এই শুল্ক পূর্বের অবস্থানে নিয়ে আসা প্রয়োজন।
সংস্থাটি জানায়, রেফারেল হাসপাতালগুলোর পাশাপাশি ৫০ শয্যার বেশি সব হাসপাতাল স্থাপনে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম আমদানি শুল্ক ও কর হ্রাসের প্রস্তাব করেন অর্থ উপদেষ্টা। ঔষধ শিল্প সমিতি অর্থ উপদেষ্টাকে অভিন্দন জানায় এবং সরকারের এমন উদ্যোগ দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার সম্প্রসারণ হবে এবং রোগ কাতর মানুষ চিকিৎসাসেবার সুফল পাবে।

এবারের বাজেটে সাধারণ ও আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সসহ হাইব্রিড ও ইলেকট্রিক ভেহিক্যালকে ২০৩০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত শর্তসাপেক্ষে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। যা জনগণের স্বাস্থ্য সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করে বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতি।
সরকার এবারের বাজেটে যে সমস্ত ভালো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার জন্য সাধুবাদ জানায় ওষুধ শিল্প সমিতি করে। তারা মনে করেন, যারা এই ভালো উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করবেন বিশেষত রাজস্ব বোর্ড এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তাদেরকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনে স্বচেষ্ট ও আন্তরিক হতে হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে দেওয়া উপরোক্ত সুবিধাসমূহের পাশাপাশি নিম্নলিখিত বিষয়গুলো এবং চূড়ান্ত বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করতে বিবেচনার কথা তুলে ধরে সংস্থাটি।

ওষুধ শিল্প বিকাশের যা করণীয়
১। সর্বশেষ অর্থবছরে ননলিস্টেড কোম্পানিসমূহের জন্য সর্বনিম্ন ট্যাক্সের হার ছিল ২৫ শতাংশ যা এই বাজেটে বৃদ্ধি করে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। কিন্ত সর্বক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধির কারণে প্রায় সমস্ত ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি প্রতিকূল সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এই সময়ে কর্পোরেট ট্যাক্সের হারের বৃদ্ধি ননলিস্টেড ফার্মা কোম্পানির ওপর অতিরিক্ত করের বোঝা তৈরি করবে। এ অবস্থায় কর্পোরেট ট্যাক্সের হার ২৫ শতাংশ রাখার অনুরোধ জানানো হয়।
২। প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তি পর্যায়ে ট্যাক্স ফ্রি লিমিট বাড়ানো হয়নি এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে শর্ত পরিবর্তনের কারণে শিল্পে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ট্যাক্স বৃদ্ধি পাবে। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রকৃত আয় কমে যাবে।
৩. সরকার প্রস্তাবিত বাজেটে কোম্পানিসমূহের জন্য ন্যূনতম কর্পোরেট ট্যাক্সের পরিমাণ মোট বিক্রয় আয়ের ওপর ১ শতাংশ নির্ধারণ করেছে যা পূর্বে ০.৬ শতাংশ ছিল। যেহেতু অধিকাংশ ফার্মা কোম্পানি এখন মুনাফা করতে হিমশিম খাচ্ছে, সেহেতু ন্যূনতম ট্যাক্স বৃদ্ধি ফার্মা কোম্পানিগুলোর সক্ষমতাকে প্রবলভাবে হ্রাস করবে। মুনাফা করা সম্ভব না হলে ট্যাক্স কোম্পানিসমূহকে তাদের মূলধন থেকে প্রদান করতে হবে, যা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।