এবারে সাত্ত্বিক পুজায় সীমাবদ্ধ, করোনায় কেড়েছে সার্বজনিন উৎসব
- আপডেট সময় : ০১:৫৮:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ অক্টোবর ২০২০ ৫৩৪ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস রিপোর্ট
এবারে সাত্ত্বিক পুজায় সীমাবদ্ধ করোনায় কেড়েছে সার্বজনিন উৎসব। সনাতন ধর্মমতে এবারে মা আসছেন দোলায় চড়ে। এতে দুর্যোগ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। যাবেন হাতিতে চড়ে। তাতে সুখশান্তি ফিরবে। ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসবেরর মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরুর হচ্ছে বৃহস্পতিবার। করোনাভাইরাসকে সঙ্গী করে দুর্গোৎসবের আয়োজনটা ফিকে হয়ে গেছে। করোনার ছোঁবলে রাত ৯টার পরিবর্তে সন্ধ্যা আরতির পরই বন্ধ হয়ে যাবে মন্দিরের দরজা। আর ঢাকেশ^রী জাতীয় মন্দিরে প্রবেশে এবারেই বাঁশ দিয়ে ৬টি লাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিবার ৫০জন দর্শণার্থী করে প্রবেশ করতে দেয়া হবে। বুধবার মন্দির চত্বরে সাংবাদিক বৈঠকে এমনটিই জানালেন মহানগর সার্বজনিন পুজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ও সাবেক সচিব শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার। জানালেন, অঞ্জলির অনুষ্ঠান একাধিক টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করবে। বাড়িতে বসে অঞ্জলি দিতেই সবাইকে উৎসাহিত করছে পুজা কমিটি। দিন কয়েক আগেও রাত ৯টা পর্যন্ত মন্দির খোলা রাখার কথা বলা হয়েছিলো জানিয়ে শৈলেন্দ্র বাবু বলেন, করোনা দ্বিতীয় ধাক্কা সামলাতে আমাদেরকে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
কিন্তু পঞ্চমীতে ঘট বসার দিনেই লোকেলোকারণ ঢাকার বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির। সবার মুখে মাস্ক। দীর্ঘ লাইন। মূল মন্ডপের সামনে বেশ কিছু সারিতে দুস্থ মানুষের দীর্ঘ লাইন। এখানে কোন ধর্মের বিচার করা হয় না। মানবধর্মকে সামনে রেখেই দুস্থদের বস্ত্রবিতরণ করেন মন্দির কমিটির সভাপতি চিত্তরঞ্জন দাস। দুপুরে মন্দিরের সদর দরজা পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই থমকে যেতে হলো। এত মানুষ। মন্দিরের মঞ্চের সামনে বাংলাদেশের বিশিষ্ট অভিনেত্রী শাহনূর। তিনি পশ্চিমবাংলার বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করেছেন। তার হাত থেকে বস্ত্র নিচ্ছে
শ’ শ’ মানুষ। পাশে চিত্তরঞ্জন বাবু। শাহনূর বলেন, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। বাংলাদেশের মানুষ এই মন্ত্রেই দীক্ষিত। আমরা এটাকে বিশ্বাস করি। তাই বাংলাদেশে শারদীয় দুর্গোৎসব পালন হয়ে আসে সার্বজনিন উৎসব হিসেবে। এই উৎসবে মুসলিম ধর্মের মানুষরাই বেশি যোগদান করে থাকেন। আমরা প্রতি বছর পুজোয় সম্মিলিতভাবে অংশ নেই। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও যথেষ্ট উদার। তিনি সব সময় বলে থাকেন, ধর্মের সঙ্গে উৎসবের কোন মিল নেই। ধর্ম যার যার, উৎসবটা সবার। এবারের পুজায়ও অনুদান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে মাস্ক বিতরণ করতে আসা বিশিষ্ট সমাজসেবী রাহা কাজী বলেন, হিন্দু-মুসলিমের মিলন মেলা হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব। কিন্তু এবারে তার কষ্ট করোনায় উৎসবটা বাদ দিতে হয়েছে। তিনি স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকে পুজোয় অংশ নিতে অনুরোধ জানান। তিনি এও জানালেন, করোনা সত্ত্বেও অনেক ভক্ত মন্দিরে আসবেন। তারা যেন মাস্ক পড়ে মাকে দর্শন করতে পারেন, এজন্য আমরা মাস্ক বিতরণ করছি।
করোনার কারণে সাত্ত্বিক পূজার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় পুজা উদযাপন কমিটি। সন্ধ্যা আরতির পর মন্দির বন্ধ করার বার্তা দেওয়া হয়েছে সারাদেশে। সবটাই করা হচ্ছে করোনা প্রাদুর্ভাব থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য। সভাপতি শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার জানান, জাতীয় মন্দির থেকে সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী পুজার দিন বেলা পৌনে ১১টায় মায়ের পুষ্পাঞ্জলি সরাসরি সম্প্রচার করবে একাধিক টেলিভিশন। সরাসরি মন্দিরে না এসে বাড়ি বসেই যাতে করে অঞ্জলি দেয়া সম্ভব হয়, সেই জন্য ফেসবুক লাইভের ব্যবস্থা থাকবে।
সনাতন বিশ্বাসে, কৈলাসশিখর ছেড়ে পিতৃগৃহে আসা মা দুর্গার অকালবোধন। ভোরের শিউলি ছড়াচ্ছে মোহনীয় গন্ধ। এমন শারদীয় আবহেই শুরু হচ্ছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এবারে বাংলাদেশে ৩০ হাজার ২১৩টি পুজা উদযাপন হবে। এরমধ্যে মহানগরীতে হচ্ছে ২৫৪টি। গতবছরের চেয়ে ৩টি কমেছে। আর সারাদেশে কমেছে প্রায় এক হাজারের মতো। এরমধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক পুজা উদযাপন হচ্ছে চট্টগ্রাম ডিভিশনে ৪ হাজার ১৪২টি। পঞ্চমী তিথিতে শারদীয় বৃষ্টিতে ভিজলো রাজধানী ঢাকা। উৎসবের সঙ্গে বৃষ্টিযোগ নতুন নয়। তীব্র গরমে হাপিত্যেশ করা নগরবাসীর জন্য বিকেলের মুষলধারায় একপশলা বৃষ্টি যেন আশীর্বাদ।
সকাল থেকে আকাশ পরিষ্কার থাকলেও দুপুরের পর হঠাৎ মেঘের আড়ালে মুখ লুকোয় সূর্য। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নামে বৃষ্টি। হঠাৎ মেঘ কালো করে আসা এ বৃষ্টিতে সাধারণ মানুষ কিছুটা ভোগান্তিতে পড়লেও স্বস্তি ফিরেছে রাজধানীজুড়ে।