ঢাকা ০২:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫, ১৪ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

একুশে ফেব্রুয়ারি: কণ্ঠরোধের কানুন ভেঙ্গে মায়ের ভাষা অর্জনের দিন

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৭:০১:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ১০৫ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আমিনুল হক ভূইয়া

একুশে ফেব্রুয়ারি মানেই রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দেওয়ার দিন। শোষকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে মাতৃভাষা রক্ষায় বুলেটের সামনে বুক পেতে দেওয়া বিশ্বের বুকে এক নজিরবিহীন ঘটনা

কণ্ঠরোধের কানুন ভেঙ্গে সেদিন রাজপথ কাঁপিয়ে ছিলো ছাত্র-জনতা। তাদের স্তব্ধ করে দিতে নির্বিাচারে গুলিয়ে চালায় স্বৈরশাষক। মায়ের ভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছিলো সালাম, বরকত, রফিক, জাব্বারসহ অনেকে। রক্ত দিয়ে মাতৃভাষা অর্জনের ইতিহাস নজির গড়েছে বিশ্বমানচিত্রে।

একুশে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর দুঃশাসন ও শোষণের শৃঙ্খল ভেঙে বাঙালি জাতিসত্তা বিনির্মাণের প্রথম সোপান। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে না হতেই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর এই ঘোষণা পরই বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ছাত্র-জনতার আন্দোলন স্ফূলিঙ্গের মতো  ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে।

যার সমাপ্তি ঘটে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারদের প্রাণ উৎসর্গ করার মধ্য দিয়ে।

সময়টা ১৯৫২। সেদিনের বর্বরতা কেমন ছিলো, তা হয়তো আমরা অনেকেই দেখিনি। ইতিহাস আমাদের শিখিয়েছে ভাষা শহিদদের অবনত মস্তকে শ্রদ্ধা জানাতে। ফলে একুশে ফেব্রুয়ারি হচ্ছে ‘সরণি ৫২’। প্রতি বছর এই দিনটিতে ভাষা শহিদদের সম্মান জানাতে বিশ্বজুড়ে পালন করা হয়ে থাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস তথা একুশে ফেব্রুয়ারি।

কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে দাঁড়িয়ে কথা হলো বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক সংগঠক এবং সমাজচিন্তক ফারহানা চৌধুরী বেবীর সঙ্গে। বলেন, ৫২’র ভাষার অধিকারের জন্য সংগঠিত আন্দোলন আমরা দেখতে পাইনি। তবে, ইতিহাস থেকে আমরা যা জানতে পারি তাহলো বর্বরতা। মায়ের ভাষাকে কেড়ে নেবার প্রতিবাদ করায় এখান থেকে কিছুটা দক্ষিণ দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের গেটের পাশে আমতলায় গুলিতে প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন ভাষা শহিদরা।

 

বেবী বলেন,  রক্ত দিয়ে ভাষার অধিকার অর্জনের  পথ পেরিয়ে ২৪’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হওয়া  শ’ শ’ মানুষকে হত্যার ঘটনা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে স্বৈরচারমুক্ত বাংলাদেশে যেন আর কোন স্বৈরশাসক মাথা তুলতে না পারে এটাই আমাদের কাম্য।

এবারে মাতৃভাষার রঙ নির্বাচন করা হয়েছে, কালো, সাদা এবং লাল।

একুশে ফেব্রুয়ারি মানেই রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দেওয়ার দিন। শোষকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে মাতৃভাষা রক্ষায় বুলেটের সামনে বুক পেতে দেওয়া বিশ্বের বুকে এক নজিরবিহীন ঘটনা।

জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারিকে সারাবিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। তাই দিনটি বাঙালি জাতি ও বাংলা ভাষাভাষিদের জন্য গৌরবের।

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা (ইউনেসকো) ১৯৯৯ সালে মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও দিবসটি পালিত হচ্ছে।

১৯৫২ সালের এদিনে শহীদদের শাণিত ধারায় যে আলোকিত পথের উন্মোচন ঘটেছিল, সেই পথ ধরে এসেছিল স্বাধীনতা। আজ আত্মমর্যাদায় সমুন্নত এক মহান জাতি হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর অন্তহীন প্রেরণার নাম একুশে ফেব্রুয়ারি।

প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এই ভাষা আন্দোলন জাতির বীরত্বপূর্ণ ঐতিহ্যের পরিচয় তুলে ধরে। বাঙালির স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিটি অধ্যায়েই জড়িয়ে রয়েছে একুশের প্রেরণা। অমর একুশে উদযাপনে বাঙালির আবেগ হয়ে ওঠে বাঁধনহারা।

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

একুশে ফেব্রুয়ারি: কণ্ঠরোধের কানুন ভেঙ্গে মায়ের ভাষা অর্জনের দিন

আপডেট সময় : ০৭:০১:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

আমিনুল হক ভূইয়া

একুশে ফেব্রুয়ারি মানেই রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দেওয়ার দিন। শোষকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে মাতৃভাষা রক্ষায় বুলেটের সামনে বুক পেতে দেওয়া বিশ্বের বুকে এক নজিরবিহীন ঘটনা

কণ্ঠরোধের কানুন ভেঙ্গে সেদিন রাজপথ কাঁপিয়ে ছিলো ছাত্র-জনতা। তাদের স্তব্ধ করে দিতে নির্বিাচারে গুলিয়ে চালায় স্বৈরশাষক। মায়ের ভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছিলো সালাম, বরকত, রফিক, জাব্বারসহ অনেকে। রক্ত দিয়ে মাতৃভাষা অর্জনের ইতিহাস নজির গড়েছে বিশ্বমানচিত্রে।

একুশে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর দুঃশাসন ও শোষণের শৃঙ্খল ভেঙে বাঙালি জাতিসত্তা বিনির্মাণের প্রথম সোপান। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে না হতেই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর এই ঘোষণা পরই বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ছাত্র-জনতার আন্দোলন স্ফূলিঙ্গের মতো  ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে।

যার সমাপ্তি ঘটে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারদের প্রাণ উৎসর্গ করার মধ্য দিয়ে।

সময়টা ১৯৫২। সেদিনের বর্বরতা কেমন ছিলো, তা হয়তো আমরা অনেকেই দেখিনি। ইতিহাস আমাদের শিখিয়েছে ভাষা শহিদদের অবনত মস্তকে শ্রদ্ধা জানাতে। ফলে একুশে ফেব্রুয়ারি হচ্ছে ‘সরণি ৫২’। প্রতি বছর এই দিনটিতে ভাষা শহিদদের সম্মান জানাতে বিশ্বজুড়ে পালন করা হয়ে থাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস তথা একুশে ফেব্রুয়ারি।

কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে দাঁড়িয়ে কথা হলো বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক সংগঠক এবং সমাজচিন্তক ফারহানা চৌধুরী বেবীর সঙ্গে। বলেন, ৫২’র ভাষার অধিকারের জন্য সংগঠিত আন্দোলন আমরা দেখতে পাইনি। তবে, ইতিহাস থেকে আমরা যা জানতে পারি তাহলো বর্বরতা। মায়ের ভাষাকে কেড়ে নেবার প্রতিবাদ করায় এখান থেকে কিছুটা দক্ষিণ দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের গেটের পাশে আমতলায় গুলিতে প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন ভাষা শহিদরা।

 

বেবী বলেন,  রক্ত দিয়ে ভাষার অধিকার অর্জনের  পথ পেরিয়ে ২৪’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হওয়া  শ’ শ’ মানুষকে হত্যার ঘটনা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে স্বৈরচারমুক্ত বাংলাদেশে যেন আর কোন স্বৈরশাসক মাথা তুলতে না পারে এটাই আমাদের কাম্য।

এবারে মাতৃভাষার রঙ নির্বাচন করা হয়েছে, কালো, সাদা এবং লাল।

একুশে ফেব্রুয়ারি মানেই রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দেওয়ার দিন। শোষকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে মাতৃভাষা রক্ষায় বুলেটের সামনে বুক পেতে দেওয়া বিশ্বের বুকে এক নজিরবিহীন ঘটনা।

জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারিকে সারাবিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। তাই দিনটি বাঙালি জাতি ও বাংলা ভাষাভাষিদের জন্য গৌরবের।

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা (ইউনেসকো) ১৯৯৯ সালে মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও দিবসটি পালিত হচ্ছে।

১৯৫২ সালের এদিনে শহীদদের শাণিত ধারায় যে আলোকিত পথের উন্মোচন ঘটেছিল, সেই পথ ধরে এসেছিল স্বাধীনতা। আজ আত্মমর্যাদায় সমুন্নত এক মহান জাতি হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর অন্তহীন প্রেরণার নাম একুশে ফেব্রুয়ারি।

প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এই ভাষা আন্দোলন জাতির বীরত্বপূর্ণ ঐতিহ্যের পরিচয় তুলে ধরে। বাঙালির স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিটি অধ্যায়েই জড়িয়ে রয়েছে একুশের প্রেরণা। অমর একুশে উদযাপনে বাঙালির আবেগ হয়ে ওঠে বাঁধনহারা।