ঈদের লম্বা ছুটিতে ঢাকা ছেড়ে যাবে দেড় কোটি মানুষ

- আপডেট সময় : ০৯:৩১:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫ ৬৭ বার পড়া হয়েছে
ঈদুল আযাহায় ১ কোটি ৪০ লাখ থেকে দেড়কোটি মানুষ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করবে। এরমধ্যে ঢাকা ছাড়বে ১ কোটি ১০ লাখ ও ঢাকার আশেপাশে জেলা থেকে যাতায়ত করবে আরও ৩০ লাখ। লম্বা ছুটিতে দেড়কোটি মানুষ নগর-মহানগর ছেড়ে শিকড়ের টানে ছুটে যাবেন প্রিয়জনদের কাছে। তারা ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেবেন। এবারে পবিত্র ঈদুল আজহায় ১০ দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য টানা ১০ দিনের ছুটি উপভোগ করতে ১৭ ও ২৪ মে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবার অফিস করতে হয়েছে। এর আগে ঈদুল ফিতরে ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত ৯ দিন ছুটি ছিল।
পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি ৫ জুন থেকে শুরু হয়ে টানা ১০ দিন ছুটির পর শেষ হবে ১৪ জুন। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের ৬ মে বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। বিশ্বে ইন্দুনেশিয়ায় ঈদে সবচেয়ে বেশি মানুষ রাজধানী ছেড়ে যায়। এর পরের স্থানটিই হচ্ছে বাংলাদেশ। নাড়ির টানে ঈদ যাত্রায় মহাসড়কে মানবঢল খুবই স্বাভাবিক।
ঈদযাত্রায় দুর্ভোগ হবে না, এটা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চিন্তা যায় না। অথচ গত ঈদুল ফিতরে সেটা প্রমাণিত হয়েছে। সড়ক-নৌ ও রেলপথ কোথাও দুর্ভোগ ছিলো না। লাখ লাখ মানুষ স্বস্তিতে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে ঢাকা এবং দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাড়ি ফিরেছেন।
ঈদুল আযাহায় ৫ জুন থেকে চাকুরিজীবীরা ঢাকা ছাড়তে শুরু করবেন। সে অনুযায়ী ৫-৬ দুই দিন প্রচন্ড চাপ পড়বে সড়ক-মহাসড়কে। বিপুল যাত্রীর চাপ সামাল দিতে সড়ক, রেল, নৌ পথের যানবাহনের সক্ষমতা নেই। ঈদুল আযহায় সড়কের পাশে পশুরহাট ও পশুবাহী ট্রাক চলাচলের কারনে যানজট লেগেই থাকে। একারণে যানবাহনের গতি কিছুটা কমে আসবে।
দুই দিনে ঢাকা থেকে ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ গ্রামের বাড়ি পাঠাতে রাস্তায় ভয়াবহ দুর্ভোগ তৈরীর আশঙ্কা করছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, বিগত ২৫ বছরের মধ্যে বিদায়ী পবিত্র ঈদুল ফিতরে স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রার পেছনে মূলত তিনটি কারণ ছিল, এরমধ্যে ১। ঈদের আগে ৪ দিনের লম্বা ছুটি ২। সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক ফেডারেশনের প্রভাবশালী মাফিয়া নেতারা পালিয়ে যাওয়ায় সড়কে মাস্তানিতন্ত্রের অবসান হয়েছে, যা মাঠ পর্যায়ে বড় বড় ব্যান্ডের গাড়িগুলোর কর্মকর্তা ও চালকদের আচরণে প্রকাশ পেয়েছে, ৩। সেনাবাহিনী নিরলস মাঠে থাকায় বিআরটিএ, ভোক্তা অধিদপ্তরসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সমন্বিত আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট সক্রিয় ছিল।
এ কারণে মানুষ ভোগান্তিমুক্ত যাতায়াত নিশ্চিত করা গেছে। এই কারণে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী ২০২৪ সালের ঈদুল ফিতরের তুলনায় ২০২৫ সালের ঈদুল ফিতরে সড়ক দুর্ঘটনা ২১.০৫ শতাংশ, নিহত ২০.৮৮ শতাংশ, আহত ৪০.৯১ শতাংশ কমেছিল। যা অন্তর্বর্তী সরকারের বড় অর্জন হিসেবে নানা মহলের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। এবারের ঈদের লম্বা ছুটি বিন্যাস করে ঈদের আগে ৩ ও ৪ জুন ২ দিন ছুটি নিশ্চিত করা গেলে সড়ক দুর্ঘটনা, প্রাণহানি, যাতায়াতের ভোগান্তি কমানো সক্ষম হবে। কিন্তু সরকারের কোন সমীক্ষা না থাকায় বিষয়টি আমলে নিলেন না।
এদিকে সিডিউল বিপর্যয় ঘটে ট্রেন যাত্রায়। মঙ্গলবার ঈদযাত্রার চতুর্থ দিনে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে আছে ঘরমুখো মানুষের ভিড়। সকাল থেকে সবগুলো ট্রেন কোন বিলম্ব ছাড়াই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ছেড়ে গেছে। প্রতিটি ট্রেনই ছিলো যাত্রীতে ঠাঁসা। গত শনিবার থেকে শুরু হয়েছে ঈদযাত্রার ট্রেন চলাচল। পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে কেউ ফিরছেন নিজ গ্রামে, কেউবা এসেছেন প্রিয়জনকে বিদায় জানাতে। ঘরমুখো মানুষের সুবিধার্থে চলছে অতিরিক্ত পাঁচ জোড়া বিশেষ ট্রেন। চলবে আগের মতোই আন্তঃনগর ট্রেনগুলোও, তবে ঈদের সময় বাতিল থাকবে সেগুলোর সাপ্তাহিক বন্ধ। অনেকের পরিবার আগেভাগেই চলে যায়। ঢাকায় কোরবানির পশু সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে চলছে তিনটি ক্যাটল স্পেশাল ট্রেন।