ইউনূস-তারেক লন্ডন বৈঠক, রাজনীতে সুবাতাস

- আপডেট সময় : ০৯:১৩:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫ ৮৮ বার পড়া হয়েছে
আমিনুল হক, ঢাকা
অবশেষে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ড. ইউনূস-তারেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রায় দেড় ঘন্টা দীর্ঘ এই বৈঠককে প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ ‘নয়া দিগন্ত উন্মোচন হবে বলে আগেই মন্তব্য করেছিলেন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়ী ছাড়াও সাধারণ মানুষের মধ্যেও আগ্রহের কমতি ছিলো না। শুক্রবার লন্ডনে অনুষ্ঠিত হলো কাঙ্খিত ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গণে ঘিরে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছিলো, এই বৈঠক তার অবসান ঘটিয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গণ তথা বাংলাদেশে বিরাজ করছে ‘রাজনৈতিক সুবাস’।
চব্বিশের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে পতন হয় আওয়ামী সরকারের। আন্দোলনকারী ছাত্রদের অনুরোধে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব নেন নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মূলত চব্বিশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর দেশে রাজনৈতিক শূন্যতা দেখা দেয়।
দায়িত্ব নিয়েই সংস্কাওে হাত লাগান ড. ইউনূস। বিচার, নির্বাচন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার কমিশন গঠন করেন। কমিশনগুলো তাদের প্রতিবেদনও পেশ করেন ড. ইউনূসের হাতে।
এরই মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে অন্তর্বর্তী সরকারকে। দশ মাস পর অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব বাড়তে থাকে। এমন অবস্থায় লন্ডন সফরে যান প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। সেখানেই ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
মূলত এই বৈঠকের পরই দেশজুড়ে বয়ে যায় স্বস্তির বৃষ্টি! বৈঠক পরিবর্তি রাজনৈতিক প্রেক্ষপটে ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠককে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। নির্বাচন ঘিরে যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিলো, রাজনৈতিক আকাশের সেই কালোমেঘ কেটে গিয়ে রাজনৈতিক তথা দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হলে তাদের বিনিয়োগ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে বাজার হারানোর ভয়ও থাকে। ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠক এসব অনিশ্চয়তা থেকে দেশের মানুষকে মুক্তি দিয়েছে।

সেই সঙ্গে রাজনৈতিক অস্বস্তি কেটে গেছে। অবশ্য বৈঠকের তারিখ নির্ধারণের পরই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘এই বৈঠক নবদিগন্তের সূচনা করবে’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। বৈঠকে শেষে বিএনপির মধ্যে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে।
তবে, লন্ডনে ইউনূস-তারেক বৈঠকে নাখোস হয়েছে জামায়াতে ইসলাম। শনিবার এক প্রতিক্রিয়ায় দলটির মন্তব্য একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন ড. ইঊনূস। বৈঠকের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এই অভিযোগ করে।
শনিবার দলের আমীর ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের বৈঠকের পর লিখিত বিবৃতিতে বিএনপির নাম উল্লেখ না করে জামায়াতে ইসলামীর অভিযোগ প্রধান উপদেষ্টা বিগত ছয়ই জুন জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন।
তার এই ঘোষণার পর লন্ডনে সফরকালে একটি রাজনৈতি দলের সাথে বৈঠক শেষে বিদেশে যৌথ ব্রিফিং এবং বৈঠকের বিষয় সম্পর্কে যৌথ বিবৃতি প্রদান করা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যত্যয় বলে মনে করে জামায়াত।
এদিকে ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠক ষড়যন্ত্রকারীদের কফিনে শেষ পেরেক বলে মন্তব্য করেন, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার ঐতিহাসিক বৈঠকটি ষড়যন্ত্রকারীদের কফিনে শেষ পেরেক।
শুক্রবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শফিকুল আলম লেখেন, ড. ইউনূস ও দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের নেতার মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকটি ছিল ঐতিহাসিক।
প্রধান উপদেষ্টার যুক্তরাজ্য সফরের অর্জন প্রসঙ্গে প্রেস সচিব বলেন, অধ্যাপক ইউনূস ব্রিটিশ রাজা চার্লসের কাছ থেকে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার গ্রহণ এবং ব্রিটিশ রাজার সঙ্গে একান্তে ৩০ মিনিটের বৈঠক করেছেন।
বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ উল্লেখ করায় সাধুবাদ জানিয়েছেন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, রমজানের আগে নির্বাচনের সময়কে সাধুবাদ জানাই, ইতিবাচকভাবেই দেখছি।