আসছে অপ্রতিদ্বন্দ্বি স্টার লিংক, গ্রামীণ জনপদে সৃষ্টি হবে তরুণ উদ্যোক্তা

- আপডেট সময় : ০৯:৪৯:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫ ৯১ বার পড়া হয়েছে
উন্মুক্ত হবে প্রযুক্তির দুয়ার, গ্রামীণ জনপদে সৃষ্টি হবে তরুণ উদ্যোক্তা
স্টারলিংকের ইন্টারনেটে ডাউনলোড গতি ২৫ থেকে ২২০ এমবিপিএস (মেগাবাইট পার সেকেন্ড)। বেশির ভাগ ব্যবহারকারী ১০০ এমবিপিএসের বেশি গতি পান। স্টারলিংকে আপলোড গতি সাধারণত ৫ থেকে ২০ এমবিপিএসের মধ্যে। ইন্টারনেটের গতি পরীক্ষা ও বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান ওকলার গেল জানুয়ারির তথ্য মতে, বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেটের গড় ডাউনলোড গতি ৪০ এমবিপিএসের কিছু কম। আপলোডের গতি ১৩ এমবিপিএসের মতো। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ডাউনলোড গতি প্রায় ৫১ এমবিপিএস আর আপলোডের ক্ষেত্রে তা প্রায় ৪৯ এমবিপিএস।
তারের মাধ্যমে ইন্টারনেটসেবার দিন শেষ। বাংলাদেশের আসছে স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে দেয়া ইন্টারনেট সেবা।
চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত হিসাবে, স্টারলিংকের ৬ হাজার ৯৯৪টি স্যাটেলাইট স্থাপিত হয়েছে। এসব স্যাটেলাইট পৃথিবী থেকে প্রায় ৩৪২ মাইল (৫৫০ কিলোমিটার) ওপরে কক্ষপথে ঘুরছে।

স্পেসএক্সের স্টারলিংক প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালে এবং ২০১৯ সালে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। বিশ্বের প্রায় ১০০টির বেশি দেশে তাদের কার্যক্রম রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভুটানে প্রথম স্টারলিংকের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
স্টারলিংকের মূল প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের তথ্য অনুযায়ী, ইন্টারনেট-সেবা জিওস্টেশনারি (ভূস্থির উপগ্রহ) থেকে আসে, যা ৩৫ হাজার ৭৮৬ কিলোমিটার ওপর থেকে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে স্থাপিত হাজার হাজার স্যাটেলাইটের একটি সমষ্টি হচ্ছে স্টারলিংক, যা পুরো বিশ্বকেই উচ্চগতির ইন্টারনেট-সেবা দিতে সক্ষম।
বাংলাদেশে বর্তমান যে ইন্টারনেট-সেবা প্রচলিত তা হচ্ছে, সাবমেরিন কেব্লনির্ভর। যা কিনা সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে তারের মাধ্যমে ব্যান্ডউইডথ এনে মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর ও ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডাররা (আইএসপি) মানুষকে ইন্টারনেট-সেবা দিয়ে থাকে।
দ্রুতগতির ইন্টারনেট-সেবাদাতা স্টারলিংককে বাংলাদেশে আনার চেষ্টা করছে সরকার। ১৩ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এবং স্টারলিংকের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের মধ্যে ফোনালাপ হয়েছে।
স্টারলিংক বাংলাদেশে এলে দুর্গম এলাকায় খুব সহজে উচ্চগতির ইন্টারনেট-সেবা পাবে। তাতে করে ইন্টারনেট-সেবার ক্ষেত্রে গ্রাম ও শহরের পার্থক্য ঘুচে যাবে। গ্রামে বসেই উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করে ফ্রিল্যান্সিংসহ ইন্টারনেটভিত্তিক কাজ করতে পারবেন তরুণেরা। দুর্যোগের পর দ্রুত যোগাযোগ প্রতিস্থাপনে বড় ভূমিকা রাখতে পারে স্টারলিংক।
স্টার লিংক আসছে, আইএসপিদের সতর্ক করে বার্তা দিয়ে প্রস্তুতি নিতে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
বাংলাদেশে যেকোনো মূল্যে যুক্তরাষ্ট্রের ইলন মাস্কের স্টার লিংক ইন্টারনেট সেবা নিয়ে আসা হবে জানিয়ে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে বলেছেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে দ্রুতগতির মানসম্পন্ন ও সহজলভ্য ইন্টারনেট প্রাপ্তিতে করণীয় শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
আমরা যেকোনো মূল্যে স্টার লিংক বাংলাদেশে নিয়ে আসবো। এটা আমাদের পলিটিক্যাল প্রমিস। এ প্রমিসের মাধ্যমে আমরা বিশ্বকে দেখাতে চাইবো যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ বান্ধব দেশ। এফডিআইকে ব্র্যান্ডিং করার জন্য আমরা এ কাজটি করব।
দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতাগুলোর চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিশেষ সহকারী বলেন, স্টার লিংক যখন আসবে তখন আরবান এবং রুরালের যে প্রিমিয়ার কাস্টমার সে স্টার লিংকে চলে যাবে। আপনি বলতে পারেন তার প্রাইস অনেক বেশি হবে। তার প্রাইস পাঁচ হাজার টাকা হবে, আমি ৫০০ টাকায় দিচ্ছি।
আপনার সেই আত্মতুষ্টির কি উত্তর? আমার সোসাইটিতে কনজিউমার আছে, এমন কনজিউমার যারা ফ্রিল্যান্সার, যারা ক্ষুদ্রঋণের ব্যবসা করে এনজিও, এন্ট্রাপ্রেনিউর, এসএমই বিজনেসম্যান আরবান এবং রুরাল; তারা কিন্তু বেটার সার্ভিসের জন্য স্টার লিংকে চলে যাবে। সেটা আপনার প্রিমিয়ার কাস্টমার লেভেলকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে ডেফিনেটলি।
এটা মোবাইল এমএনওদেরও ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তাহলে তার বিরুদ্ধে আপনি কীভাবে প্রিপারেশন নেবেন, আমি মনে করি আপনারা কোয়ালিটি অব সার্ভিস ইনশিওর করবেন। সুতরাং স্টার লিংক আসার বিপরীতে আমি যদি দেশীয় ব্যবসাকে সুরক্ষা দিতে চাই তাহলে সবার আগে আমি যে সার্ভিসটা দিচ্ছি এই সার্ভিসটা স্ট্যান্ডার্ড করতে হবে।
ফয়েজ আহমদ বলেন, একটা সময় ছিল, মোবাইল ইন্টারনেট ডমিনেটিং ছিল প্রায় ৯৬-৯৭ শতাংশ। এই চার বছর আগে। এ সময়ের মধ্যে আইএসপি সার্ভিস গ্রো করেছে, কিন্তু আইএসপির সার্ভিস কোয়ালিটি বেটার না হওয়ায় আবার মোবাইলের দিকে টার্ন করেছে। আমরা একটা ট্রানজিশনে আছি, সেই ট্রানজিশনে নতুন করে প্রিমিয়ার কাস্টমার স্টার লিংকের দিকে চলে যাবে।
আয়োজনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির বিশেষ সহকারী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ মাহতাব উদ্দিন, আইআইজিএবির সভাপতি আমিনুল হাকিম, বিডি জবসের সিইও ও বেসিসের সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর, আইএসপিএবির সভাপতি ইমদাদুল হক, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম সিদ্দিক, গ্রামীণফোন লিমিটেডের সিনিয়র ডাইরেক্টর কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত, বাংলালিংকের চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান, রবির রেগুলেশনের ডিরেক্টর শাহ মো. ফজলে খোদা।
বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিকম বিশেষজ্ঞ মোস্তফা হুসাইন।