আঁচল ভেজানো কান্না আর কষ্ট বুকে চেপে বেচে আছে সে

- আপডেট সময় : ০৯:৪৯:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫ ১০৪ বার পড়া হয়েছে
ঢাকার বাইরে অফিসের কর্মী সমন্বয় সভায় আলোচনা করছি। বিষয় বস্তু ছিলো মাদকের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার। পরিচয় পর্বে নতুন কয়েকজন কর্মীর সাথে পরিচয় হলো। এর মধ্যে একজন কর্মীর দিকে দৃষ্টি আমার আটকে গেলো। চোখ ফেরাতে পারছি না। এতো সুন্দর মানুষ হয়! মেয়েটির বয়স অল্প।
বয়স বড় জোর ২৮ বছর হবে। দেখে মনে হয় ইউনিভার্সিটির পড়ুয়া। যেমন গায়ের রং, তেমনি মুখাবয়ব, লম্বা চুল। আলোচনার এক পর্যায়ে দেখি মেয়েটার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। আমি হতবাক। এই টুকু মেয়ের কি এমন দুঃখ!
আলোচনা শেষে যে যার মতো বের হয়ে গেলো। কিন্তু সেই মেয়েটি তখনো বসে। আমি কাছে গিয়ে কাঁধে হাত রাখতেই অঝোরে কেঁদতে থাকলো। এক পর্যায়ে তার কান্না থামলো। মুখ তুলে বললো আপা আপনি এতক্ষণ যা যা বলছেন, সেটা আমার জীবনের গল্প। পাঁচ বছর আগে আমার বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পর বুঝতে পারলাম স্বামী মাদকাসক্ত। অনেক চেষ্টা করলাম ভালো করতে কিন্তু হলো না।

মেয়েটির এমন কথা শুনে চুপ হয়ে গেলেন, নন্দিত নাট্য-সাংস্কৃতিক কর্মী এবং সমাজচিন্তিক কাজী শিলা। যে কিনা মানুষের সুখ-দুঃখের গল্পের সঙ্গে একাকার হয়ে মঞ্চে অভিযান করে যান। সমাজকর্মী হিসাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানো তার পারিবারিক শিক্ষা। খুলনার এই নারী সবার প্রিয় মঞ্চ কর্মী শিলা। চোকেমুখে তার আগামীকে জয় করার স্বপ্ন। মানুষের দুঃখে ব্যথিত হয় তার মন। এ কারণে তিনিই আমাদেও সমাজের শুভবোধের সারথি।
শিলা সেই নারীকে বললো, ছেড়ে যাননি কেন? চেষ্টা করতে করতে পাঁচ বছর কেটে গেছে। দুটো সন্তানও রয়েছে। অনেকবার নিরাময় কেন্দ্রে দিয়েছি। কিছুদিন ভালো থাকে আবার আসক্ত হয়ে পড়ে। ঘরের সব বিক্রি করা শেষ। নেশা না করতে পারলে বাবা-মাসহ আমাকেও মারে। কোথায় যাবো? বাবার বাড়ি চলে গেলে ওদের বোঝা হবো। ধরা গলায় ধীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বললো সেই নারী।

নিজ মা-বাবার কথা চিন্তা বলেন, আমার দুটো সন্তান ওদের গলগ্রহ হবে। আমার জীবন তো শেষ সন্তানদের জীবন যেন নষ্ট না হয় সেই চেষ্টা করছি। হতাশা মুখ শুকিয়ে আসে মেয়েটির। সন্তানদের মানুষ করার জন্য বাধ্য হয়ে চাকুরী নিয়েছি। বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। পরিবারে একজন মাদকাসক্ত থাকলে সেই পরিবার মানসিকভাবে, সামাজিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে পুরোপুরি পঙ্গু হয়ে যায়।
অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিলেন-মানব দরদি এই নাট্যকর্মী।
তার গলায় উচ্চারিত হলো, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ভালো। তাই আসুন আমরা সচেতন হই এবং নিজেদের সন্তানেরা নেশার মরণ ফাঁদ থেকে রক্ষা করি। সকলকে মাদকের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবসের শুভেচ্ছা।