ঢাকা ০৫:৪০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চারুকলায় বন্দী মঙ্গল শোভাযাত্রা!

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:০৮:১১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ এপ্রিল ২০২১ ২৬৯ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

করোনার অতিমারির কারণে চারুকলায় সীমিত পরিসরেই থাকছে মঙ্গল শোভাযাত্রা : ছবি সংগ্রহ

এএইচ ঋদ্ধিমান, ঢাকা

পহেলা বৈশাখে এবারে মঙ্গলশোভা যাত্রা হচ্সীছে না।  ক’দিন আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সে সময় উপাচার্য বৈঠক করে  মঙ্গল শোভাযাত্রায় মাত্র শ’ খানেক লোক নিয়ে চারুকলা চত্বরেই সীমাবদ্ধ রাখার  নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো। রবিবার রাতে ফের তা জানিয়ে দিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন।

এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার থিম নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘কাল ভয়ঙ্করের বেশে এবার ঐ আসে সুন্দর’।

মহামারি বাঙালির জীবন থেকে সকল উৎসব-পার্বন কেড়ে নিয়েছে! বসন্ত, নবান্ন উৎসব হয়নি। বারোনি স্নান করতেও বারণ। দুর্গোৎসব দীপাবলিতে নিষেধাজ্ঞা। দোলপূর্ণিমাও কেড়ে নেবার পর সর্বশেষ বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাকও কেড়ে নিল। দুনিয়া কবে মুক্তি পাবে অভিশপ্ত করোনার গ্রাস থেকে?

সুস্মিতার কণ্ঠে আবেগের পরিবর্তে উৎকণ্ঠা। কলকাতা থেকে কল করে জানালো চারিদিকে কামড় বসিয়েছে মারণ ভাইরাস। কয়েকজন আত্মীয়ও আক্রান্তর হয়েছেন। চেনামুখগুলোর সঙ্গে নিত্য শুভেচ্ছা বিনিময় হারিয়ে গিয়েছে। আমরা খুব ভয়ে আছি দাদা। সাবধানে থাকবেন। কি যে করি! আর ভাবতে পারছেন সুস্মিতা। অফিসের রোস্টার হয়নি তার। নিত্য চলাচল করতে গিয়ে বুকের ভেতরটা কাঁপে। কখন যে কি হয়! আপনি খুব সাবধানে থাকবেন দাদা।

আর ভাবতে পারছে না। দরদমাখা কণ্ঠ তার উৎকণ্ঠায় কাঁপছে। প্রাণবন্ত মানুষটাকে খুব হতাশাগ্রস্ত মনে হলো।  অভয় দিয়ে বললাম, আমাদের সবাইকে সাবধান হতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মেনে চলছে হবে। এর বেশিতো আমাদের হাতে নেই!

এমনি হাজারো সুস্মিতার উৎকণ্ঠিত কন্ঠস্বর শুনতে পাবার পরও নির্বিকার আমরা। কেন এতোটা উদাসিনতা?

পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উৎসব। এদিন ‘এসো হে বৈশাখ এসো ’ শতকন্ঠে এই গানটি দিয়েই পহেলা বৈশাখের প্রথম আলোকে স্বাগত জানানো হয়। ঢাকার ঐতিহাসিক রমনা বটমূলে ১৯৬৫ সাল থেকে অনুষ্ঠানটি করে  আসছে ছায়ানট। বৈশাখের এটিই প্রধান আয়োজন হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। এছাড়া গোটা ঢাকা শহরটাই পহেলা বৈশাখের মঞ্চে রূপ নেয়।

আর এই চারুকলার মঙ্গলশোযাত্রা! সেতো কালের স্বাক্ষী। পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজনটা শুরু হয়ে যায় মাস দু’য়েক আগে থেকেই। চারুকলার শিক্ষার্থীরা নানা ধরণের শিল্প তৈরি কাজে ব্যস্ত থাকেন পালা করে।

মঙ্গলশোযাত্রায় কত লোকের সমাগম ঘটে। তা বলা মুশকিল। এ কথায় অগুনতি। ঢাক, ঢোল, বাঁশি, লক্ষিপেঁজা থেকে শুরু করে  দেশজাতির মঙ্গল কামনায় যতরকমের নির্দশন রয়েছে তার সবই থাকে মঙ্গলশোভা যাত্রায়। আর সেই শোভাযাত্রাও এবারে চারদেয়ালে বন্দি!

কর্তপক্ষ জানালেন, করোনার কারণে সব আয়োজনেই জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে যেহেতু এটি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছর, সেহেতু যদি আমরা কিছুই না করি, তবে স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে। তাই সীমিত পরিসরে হলেও মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করবে কর্তৃপক্ষ।

অধ্যাপক নিসার হোসেন আরও বলেন, শোভাযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ চত্বরেই সীমাবদ্ধ থাকবে, বাইরে বেরুবে না এবং প্রবেশ সংরক্ষিত থাকবে। এক্ষেত্রে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। আমাদের চারুকলা অনুষদের চত্বর অনেক বড়, আশা করি, আমরা নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনেই সব সম্পন্ন করতে পারব।

এদিকে চারুকলা অনুষদ ঘুরে দেখা গেছে, সীমিত পরিসরে চলছে মঙ্গল শোভাযাত্রা কার্যক্রমের প্রস্তুতি।   তৈরি হচ্ছে মুখোশ। আঁকা হচ্ছে বিভিন্ন আল্পনা। আর চারুকলার বাইরের প্রাচীরও রাঙানো হয়েছে বিভিন্ন রঙের আল্পনায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

চারুকলায় বন্দী মঙ্গল শোভাযাত্রা!

আপডেট সময় : ০৯:০৮:১১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ এপ্রিল ২০২১

করোনার অতিমারির কারণে চারুকলায় সীমিত পরিসরেই থাকছে মঙ্গল শোভাযাত্রা : ছবি সংগ্রহ

এএইচ ঋদ্ধিমান, ঢাকা

পহেলা বৈশাখে এবারে মঙ্গলশোভা যাত্রা হচ্সীছে না।  ক’দিন আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সে সময় উপাচার্য বৈঠক করে  মঙ্গল শোভাযাত্রায় মাত্র শ’ খানেক লোক নিয়ে চারুকলা চত্বরেই সীমাবদ্ধ রাখার  নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো। রবিবার রাতে ফের তা জানিয়ে দিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন।

এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার থিম নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘কাল ভয়ঙ্করের বেশে এবার ঐ আসে সুন্দর’।

মহামারি বাঙালির জীবন থেকে সকল উৎসব-পার্বন কেড়ে নিয়েছে! বসন্ত, নবান্ন উৎসব হয়নি। বারোনি স্নান করতেও বারণ। দুর্গোৎসব দীপাবলিতে নিষেধাজ্ঞা। দোলপূর্ণিমাও কেড়ে নেবার পর সর্বশেষ বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাকও কেড়ে নিল। দুনিয়া কবে মুক্তি পাবে অভিশপ্ত করোনার গ্রাস থেকে?

সুস্মিতার কণ্ঠে আবেগের পরিবর্তে উৎকণ্ঠা। কলকাতা থেকে কল করে জানালো চারিদিকে কামড় বসিয়েছে মারণ ভাইরাস। কয়েকজন আত্মীয়ও আক্রান্তর হয়েছেন। চেনামুখগুলোর সঙ্গে নিত্য শুভেচ্ছা বিনিময় হারিয়ে গিয়েছে। আমরা খুব ভয়ে আছি দাদা। সাবধানে থাকবেন। কি যে করি! আর ভাবতে পারছেন সুস্মিতা। অফিসের রোস্টার হয়নি তার। নিত্য চলাচল করতে গিয়ে বুকের ভেতরটা কাঁপে। কখন যে কি হয়! আপনি খুব সাবধানে থাকবেন দাদা।

আর ভাবতে পারছে না। দরদমাখা কণ্ঠ তার উৎকণ্ঠায় কাঁপছে। প্রাণবন্ত মানুষটাকে খুব হতাশাগ্রস্ত মনে হলো।  অভয় দিয়ে বললাম, আমাদের সবাইকে সাবধান হতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মেনে চলছে হবে। এর বেশিতো আমাদের হাতে নেই!

এমনি হাজারো সুস্মিতার উৎকণ্ঠিত কন্ঠস্বর শুনতে পাবার পরও নির্বিকার আমরা। কেন এতোটা উদাসিনতা?

পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উৎসব। এদিন ‘এসো হে বৈশাখ এসো ’ শতকন্ঠে এই গানটি দিয়েই পহেলা বৈশাখের প্রথম আলোকে স্বাগত জানানো হয়। ঢাকার ঐতিহাসিক রমনা বটমূলে ১৯৬৫ সাল থেকে অনুষ্ঠানটি করে  আসছে ছায়ানট। বৈশাখের এটিই প্রধান আয়োজন হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। এছাড়া গোটা ঢাকা শহরটাই পহেলা বৈশাখের মঞ্চে রূপ নেয়।

আর এই চারুকলার মঙ্গলশোযাত্রা! সেতো কালের স্বাক্ষী। পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজনটা শুরু হয়ে যায় মাস দু’য়েক আগে থেকেই। চারুকলার শিক্ষার্থীরা নানা ধরণের শিল্প তৈরি কাজে ব্যস্ত থাকেন পালা করে।

মঙ্গলশোযাত্রায় কত লোকের সমাগম ঘটে। তা বলা মুশকিল। এ কথায় অগুনতি। ঢাক, ঢোল, বাঁশি, লক্ষিপেঁজা থেকে শুরু করে  দেশজাতির মঙ্গল কামনায় যতরকমের নির্দশন রয়েছে তার সবই থাকে মঙ্গলশোভা যাত্রায়। আর সেই শোভাযাত্রাও এবারে চারদেয়ালে বন্দি!

কর্তপক্ষ জানালেন, করোনার কারণে সব আয়োজনেই জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে যেহেতু এটি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছর, সেহেতু যদি আমরা কিছুই না করি, তবে স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে। তাই সীমিত পরিসরে হলেও মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করবে কর্তৃপক্ষ।

অধ্যাপক নিসার হোসেন আরও বলেন, শোভাযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ চত্বরেই সীমাবদ্ধ থাকবে, বাইরে বেরুবে না এবং প্রবেশ সংরক্ষিত থাকবে। এক্ষেত্রে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। আমাদের চারুকলা অনুষদের চত্বর অনেক বড়, আশা করি, আমরা নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনেই সব সম্পন্ন করতে পারব।

এদিকে চারুকলা অনুষদ ঘুরে দেখা গেছে, সীমিত পরিসরে চলছে মঙ্গল শোভাযাত্রা কার্যক্রমের প্রস্তুতি।   তৈরি হচ্ছে মুখোশ। আঁকা হচ্ছে বিভিন্ন আল্পনা। আর চারুকলার বাইরের প্রাচীরও রাঙানো হয়েছে বিভিন্ন রঙের আল্পনায়।