ঢাকা ০৭:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিকল বন্দি ১০ বছর!

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৮:৩৩:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ মে ২০২১ ২১৪ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

অভাবের সংসার। ঠিক মতো খাবার জোটে না। তার মধ্যে তিন সন্তানই মানসিক ভারসাম্যহীন। টাকার অভাবে তাদের সঠিক হয়নি। এ অবস্থায় শিকলবন্দী ১০ বছর!

প্রতিবেশীরা জানান, যেখানে সম্বল হারানো বৃদ্ধ বাবা-মা ঠিক মতো খেতে দিতে পারেনা ৩ সন্তানকে। সেখাসে চিকিৎসা করানোর অর্থ পাবে কোথায়? একারণে দীর্ঘ বছর শিকল বন্দি করে রাখা হয়েছে। এটি এখন ‘পাগলের বাড়ি’ নামে পরিচিত।

ঘটনা বাংলাদেশের নওগাঁর জেলার আত্রাই উপজেলার আহসানগঞ্জ ইউনিয়নের ব্রজপুর গ্রামে। লবা প্রামানিকের বয়স ষাট পেরিয়েছে। স্ত্রী রাইজান মানুষের বাড়ি কাজ করে কখনো চেয়ে চিন্তে স্বামী-সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেন।

সরকারি সহায়তা বলতে শুধুমাত্র ১০ টাকা কেজি দরে চাল ক্রয়ের কার্ড। বয়স্ক ভাতা মেলেনি। দুবেলা দুমুঠো খেয়ে-পড়ে বাঁচতে এবং অসুস্থ সন্তানদের চিকিৎসা করাতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেন।

পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনই মানসিক ভারসাম্যহীন। তারা দীর্ঘ দশ বছর ধরে শিকল বন্দি অবস্থায় জীবন যাপন করছে। স্বাভাবিক অন্য এক ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ার ভয়ে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন। এক মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে।

দরজা-জানালা বিহীন ভাঙ্গা বাড়ি। উঠানে বাশের খুঁটির সঙ্গে শিকল দিয়ে বাধা নার্গিস, সাইফুল ও রোজিনা। তিনজনই মাঝ বয়সী। এদের বিয়ে-সন্তান সবই হয়েছিল। তাদের সন্তানেরা অন্য বাড়িতে থাকার কথা জানায় প্রতিবেশি সাজ্জাদ আলী। চিকিৎসা বলতে তাবিজ-কবজ।

মা রাইজান বেগমের দুঃখ দশ বছর থেকে ছেলে মেয়েদের যুদ্ধ করে চলেছেন। থালায় খাবার দিলে তা ভেঙ্গে ফেলে। পলিথিনের প্যাকেটে করে খেতে দেন। তাদের দেখা শোনা করতে গিয়ে তিনিও মাঝে মধ্যে অসুস্থ হয়ে যান।

স্থানীয় ইউনিয়ন সদস্য আহসান হাবিব কায়েস জানান, ইউনিয়নে আসা সরকারি অনুদানের পাশাপাশি নিজেরাও যখন যা পারেন সাহায্য সহযোগিতা করে থাকেন।

আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখারুল ইসলাম জানান শনিবার তথ্যটি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন। তাদের পরিবারের কি কারণে চিকিৎসাসেবা পাননি বা কোন কোন সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যায় সে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

শিকল বন্দি ১০ বছর!

আপডেট সময় : ০৮:৩৩:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ মে ২০২১

অভাবের সংসার। ঠিক মতো খাবার জোটে না। তার মধ্যে তিন সন্তানই মানসিক ভারসাম্যহীন। টাকার অভাবে তাদের সঠিক হয়নি। এ অবস্থায় শিকলবন্দী ১০ বছর!

প্রতিবেশীরা জানান, যেখানে সম্বল হারানো বৃদ্ধ বাবা-মা ঠিক মতো খেতে দিতে পারেনা ৩ সন্তানকে। সেখাসে চিকিৎসা করানোর অর্থ পাবে কোথায়? একারণে দীর্ঘ বছর শিকল বন্দি করে রাখা হয়েছে। এটি এখন ‘পাগলের বাড়ি’ নামে পরিচিত।

ঘটনা বাংলাদেশের নওগাঁর জেলার আত্রাই উপজেলার আহসানগঞ্জ ইউনিয়নের ব্রজপুর গ্রামে। লবা প্রামানিকের বয়স ষাট পেরিয়েছে। স্ত্রী রাইজান মানুষের বাড়ি কাজ করে কখনো চেয়ে চিন্তে স্বামী-সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেন।

সরকারি সহায়তা বলতে শুধুমাত্র ১০ টাকা কেজি দরে চাল ক্রয়ের কার্ড। বয়স্ক ভাতা মেলেনি। দুবেলা দুমুঠো খেয়ে-পড়ে বাঁচতে এবং অসুস্থ সন্তানদের চিকিৎসা করাতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেন।

পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনই মানসিক ভারসাম্যহীন। তারা দীর্ঘ দশ বছর ধরে শিকল বন্দি অবস্থায় জীবন যাপন করছে। স্বাভাবিক অন্য এক ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ার ভয়ে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন। এক মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে।

দরজা-জানালা বিহীন ভাঙ্গা বাড়ি। উঠানে বাশের খুঁটির সঙ্গে শিকল দিয়ে বাধা নার্গিস, সাইফুল ও রোজিনা। তিনজনই মাঝ বয়সী। এদের বিয়ে-সন্তান সবই হয়েছিল। তাদের সন্তানেরা অন্য বাড়িতে থাকার কথা জানায় প্রতিবেশি সাজ্জাদ আলী। চিকিৎসা বলতে তাবিজ-কবজ।

মা রাইজান বেগমের দুঃখ দশ বছর থেকে ছেলে মেয়েদের যুদ্ধ করে চলেছেন। থালায় খাবার দিলে তা ভেঙ্গে ফেলে। পলিথিনের প্যাকেটে করে খেতে দেন। তাদের দেখা শোনা করতে গিয়ে তিনিও মাঝে মধ্যে অসুস্থ হয়ে যান।

স্থানীয় ইউনিয়ন সদস্য আহসান হাবিব কায়েস জানান, ইউনিয়নে আসা সরকারি অনুদানের পাশাপাশি নিজেরাও যখন যা পারেন সাহায্য সহযোগিতা করে থাকেন।

আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখারুল ইসলাম জানান শনিবার তথ্যটি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন। তাদের পরিবারের কি কারণে চিকিৎসাসেবা পাননি বা কোন কোন সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যায় সে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।