বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটি আর মোবাইল সিমব্যবহারকারী ১৫ কোটি
- আপডেট সময় : ০৩:২৮:৫৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর ২০২০ ৪৬৪ বার পড়া হয়েছে
‘তথ্যপ্রযুক্তির সহজলভ্যতার সুযোগ নিয়ে যে সমস্ত অনলাইন বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের পরিবর্তে ব্যক্তিস্বার্থে তথা গুজবের সঙ্গে যুক্ত এবং সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে, এমন সব অনলাইন পোর্টালের বিরুদ্ধে আসছে বছরে আইনগত ব্যবস্থা নেবে সরকার’ তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ
আমিনুল হক, ঢাকা
পঞ্চাশ বছর বয়সী বাংলাদেশ আজকের অবস্থায় ছিল না। এমন অল্প সময়ে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের উত্থান অনেক গবেষকদের দৃষ্টিতে মিরাকল। কেননা, দেশটির জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে যখন স্বাধীকারের ডাক দেন, তখন আজকের এই আলোকিত দেশটি ছিল ‘কুপিবাতি ও হ্যারিকেনের’ আলোর দেশ। কৃষিভিত্তিক দেশটির সাড়ে সাতকোটি জনসংখ্যার মধ্যে শিক্ষার হার ছিল হাতে গোণা। কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণীর মানুষের সংখ্যাই ছিল বেশি। কারণ, পশ্চিম পাকিস্তান নামক যে দেশটির একাংশ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছিল, সেখানের মানুষ ছিল বঞ্চিত-নিপীড়িত। লাঞ্ছনাকে কর্মফল ভাবতো সহজ-সরল বাঙালি। এই বঞ্চিত-নিপীড়িত মানুষগুলোর সামনে আলোর দুয়ার খুলে দিলেন এক দেবদূত ‘নাম তার শেখ মুজিবুর রহমান’। বঙ্গের বন্ধু হয়ে ‘কামান, বন্দুকের নলের সামনে দিয়ে’ বীর দর্পে আলোর রশ্মি হাতে এক গণনায়কের আগমন। সেই আলোয় আজ আলোকিত বাংলাদেশ!
২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন শুরু হলো, তখন বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল ৪০ লক্ষ। আর বর্তমান সংখ্যাটা ১১ কোটির বেশি। একই সময়ে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৪ কোটি, বর্তমানে ১৭ কোটি মানুষের দেশে সাড়ে ১৫ কোটির মত মোবাইল সিম ব্যবহারকারী। সেসময় বিদ্যুতের উৎপাদন সাকুল্যে ছিল ৩,৪০০ মেগাওয়াট। লোডশেডিংয়ে থাকতে হতো শহরে গড়ে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা এবং গ্রামে ২৪ ঘন্টা। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা প্রায় ৩০ হাজার মেগাওয়াট। ইচ্ছে করলে বিদ্যুৎ ও খাদ্য রপ্তানি করা সম্ভব। শুধু তাই নয়, লাঙ্গল-জোয়ালের দেশটি আজ ‘জলের তলা থেকে মহাকাশ জয়’ করেছে। উন্মত্ত পদ্মায় উড়ছে ‘উন্নয়নের শঙ্কচিল’। হচ্ছে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে জোরকদমে এগিয়ে চলছে বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ। নির্মাণ হচ্ছে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর এবং বে-টার্মিনাল। নান্দনিক মেরিনড্রাইভ। এর ফলে বাংলাদেশ পরিণত হবে ‘দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক হাব’ হিসাবে।
বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের এই অমূল পরিবর্তন এসেছে ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শীর নেতৃত্বে’।
অথচ ২০০৮ সালের নির্বাচনে আগে আওয়ামী লীগ ‘যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের শ্লোগান দিয়েছিল’, তখন অনেকে হাস্যরস করেছেন। আর আজ ডিজিটাল প্রযুক্তির কারণে আমরা প্রতিবছর কয়েক মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। ২০০৯ সালে যেখানে হাতেগোনা কয়েকটি অনলাইন ছিল। সংখ্যাটি কিন্তু আজ অনেক। সে কারণে অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। ড. হাছান আরও বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির সহজলভ্যতার সুযোগ নিয়ে যে সমস্ত অনলাইন বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের ‘পরিবর্তে ব্যক্তিস্বার্থে তথা গুজবের সঙ্গে যুক্ত এবং সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে’, এমন সব অনলাইন পোর্টাল চিহ্নিত করে, তাদের বিরুদ্ধে আসছে বছরে আইনগত ব্যবস্থা নেবে সরকার।
২৬ নভেম্বর রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে সংগঠনটির অনলাইন জার্নাল ‘রিপোর্টার্স ভয়েস’ উদ্বোধন ও ডিআরইউ সদস্য লেখক সম্মাননা ২০২০ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা তুলে ধরেন। ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে, এ বছরের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমটি যতদূর সম্ভবেএগিয়ে নেওয়া। আর অনলাইন নিউজ পোর্টাল রেজিস্ট্রেশনের কার্যক্রমটি এগিয়ে যাওয়ার পরই আইনগত ব্যবস্থা শুরু হবে। এই সংবাদমাধ্যমটি সমাজের চাহিদার পাশাপাশি একইভাবে সাংবাদিক সমাজেরও চাহিদা। যে অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো সত্যিকার অর্থে ‘সংবাদ পরিবেশনে কার্যক্রম পরিচালনা না করে ভিন্ন উদ্দেশ্যে কাজ তা পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত, সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এটি যে শুধু বাংলাদেশের বেলায় আমরা উদ্যোগ নিয়েছি তা নয়। এটিই বিশ্বপ্রেক্ষাপট। উন্নত দেশগুলোতে এক্ষেত্রে অনেক শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভবপর হয়েছে। যেটি বাংলাদেশে এখনো এখানে পুরোপুরি সম্ভব হয়নি। আরও একটি বিষয় লক্ষ করা যায় ‘সর্বশেষ সংবাদ পরিবেশনের প্রতিযোগিতা থেকে অনেক ক্ষেত্রে ভুল সংবাদ এবং অসত্য তথ্য পরিবেশিত হয়’। আবার অনেক বেশি ক্লিক পাওয়ার জন্য দেয়া হেডিং এর সঙ্গে ভেতরের সংবাদের মিল খুঁজে পাওয়া যায় না।
বিশেষ করে যে অনলাইনগুলোতে কোনো অনুষ্ঠান চলাকালীন সংবাদ পরিবেশনের ক্ষমতা রিপোর্টারকে দেয়া থাকে, সেখানে অনেক অনিচ্ছাকৃত ভুল দেখতে পাওয়া যায়। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এটা কমিয়ে আনা সম্ভব। এবিষয়ে পিআইবি’র সঙ্গে যুক্ত হয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়ে থাকে, যা সত্যিই প্রয়োজনীয়।
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আরও একটি বিষয় লক্ষ করা যায়, যে কেউ একজন অনলাইন পোর্টাল খুলে যাকে তাকে সাংবাদিকের কার্ড দিয়ে দিলো। তিনি আসলে প্রকৃতপক্ষে সাংবাদিক নন, সেই কার্ডটির জন্যই সাংবাদিক সেজেছেন। এগুলোকে বন্ধ করার জন্য রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন ও ফোরামগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। কিছু কিছু ‘সাংবাদিক নামধারী’র জন্য পুরো সাংবাদিক সমাজের বদনাম হতে পারে। এসময় তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, আদালতে অনেক সময় ভুয়া উকিল ধরা পড়ে। আইনজীবী সমিতিই কিন্তু ভুয়া উকিল খুঁজে বের করে। এক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ফোরামগুলো উদ্যোগী হলে সরকার তাদের পাশে থাকবে এবং সহায়তা করবে।