ছবি সংগ্রহ
‘হিমালয় অঞ্চল দ্রুত ‘সন্ত্রাসী কেন্দ্র’ থেকে একটি প্রাণবন্ত ব্যবসায়িক কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলা, যা একসময় জঙ্গিবাদের কেন্দ্রস্থল ছিল, সম্প্রতি ‘সুশাসন’ সূচকের অধীনে জম্মু–কাশ্মীর–এর সেরা জেলা হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে’
নিউজ ডেস্ক
ভারত অধ্যুষিত জম্মু ও কাশ্মীরে ১০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রকল্প চলমান এবং আরও ৫০ হাজার কোটি টাকার নানামুখী প্রকল্প চালু হওয়ার পথে। ‘সিঙ্গেল উইন্ডো ক্লিয়ারেন্স সিস্টেম’ এই উপত্যকা অঞ্চলে ব্যবসার ধারণাকে আমূল পাল্টে দিয়েছে।
এমন এক সময় ছিল, যখন এই অঞ্চলে কোন প্রকল্প স্থাপন করতে হলে বিভিন্ন বিভাগের ছাড়পত্রের জন্য অফিস থেকে অফিসে দৌড়াতে হতো। এখন তা অতীত। নতুন এই জম্মু ও কাশ্মীরে, তরুণ-তরুণীরা নিজ উদ্যোগে কাজ শুরু করতে চাইলে, তাদের স্বপ্ন পূরণে সম্ভাব্য সকল ধরনের সহায়তার দ্বার উন্মুক্ত।
সময়টা ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট। এই অঞ্চলের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার সিদ্ধান্তের ঘোষণার পর দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত হয়েছে। ফলে এই অঞ্চলের তরুণরা এখন আর চাকরির পেছনে দৌড়োয় না। তাদের কেই প্রাইভেট সেক্টরগুলোতে কাজ করছে, না হয় নিজেরাই হয়ে উঠছে উদ্যোক্তা।
২ বছরে ৩৩ হাজার আবেদন অনুমোদন
জম্মু-কাশ্মীরের উদ্যোক্তারা তাদের ইউনিট স্থাপনের অনুমতি পেয়েছে, তাদের জন্য আসছে নতুন শিল্প এস্টেট। গত দুই বছরে ১ হাজার ৮৭৯ জন আবেদনকারীর পক্ষে ইস্যুকৃত লেটার অফ ইনটেন্টসহ ৩ হাজার ৩০০টিরও বেশি আবেদন অনুমোদন করা হয়েছে। যার মধ্যে ২৬০ জন আবেদনকারীর পক্ষে ইজারা চুক্তিও সম্পাদিত হয়েছে।
১১১টি শিল্প এস্টেটে এখন পর্যন্ত ৯ হাজার ৮৬৯ কানাল জমি সম্ভাব্য ইউনিট হোল্ডারদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। এই ইউনিট হোল্ডাররা তাদের ইজারা বকেয়া হিসাবে সরকারী কোষাগারে ২১৭ কোটি টাকা জমাও দিয়েছেন।
জুম্মু-কাশ্মীরে এখন বিনিয়োগের পরিবেশ পরিবর্তিত হয়েছে এবং হাজার হাজার উদীয়মান উদ্যোক্তারা তাদের ধারণাকে কাজে লাগাচ্ছেন। অথচ এসব যুবকরা ২০১৯ সাল অবধি জানত না তাদের ভবিষ্যত কী।
এসব যুবকরাই এখন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং রোল মডেল হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছেন। জম্মু ও কাশ্মীরের বাইরে থেকে যে বিনিয়োগ আসছে তা এই অঞ্চলের শিল্পখাতকে আরও সমৃদ্ধ করছে।
অনুচ্ছেদ ৩৭০ প্রত্যাহার করায় সেই সমস্ত বিধানের অবসান ঘটেছে, যা হিমালয় অঞ্চলে স্থাবর সম্পত্তি ক্রয় করতে বহিরাগতদের আগে বাঁধা ছিল। বিনিয়োগকারীদের প্রণোদনা দেওয়ায় অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান এখন জম্মু ও কাশ্মীরের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে।
কর্পোরেট হাউজের নজর এখন জুম্মু-কাশ্মীরের ঘিরে। গত ৭০ বছরে প্রথমবারের মতো ভারতের শীর্ষ কর্পোরেট হাউজগুলো জুম্মু-কাশ্মীরকে নতুন একটি ব্যবসায়িক গন্তব্য হিসেবে দেখছে। অনিশ্চিত নিরাপত্তা পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার কারণে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কেউ এখনে একটি পয়সাও বিনিয়োগ করতে চাননি। বর্তমানে সেই পরিস্থিতির অমূল পরিবর্তন হয়েছে। যার ফলে অনেক উদ্যোক্তা তাদের নিরাপদ ব্যবসার জায়গা হিসাবে এই অঞ্চলকে আদর্শ মনে করছেন।
সাবেক শাসকরা বিগত সাত দশক ধরে জম্মু ও কাশ্মীরকে সমস্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত রেখেছিলেন। ৩৭০ ধারার আড়ালে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সবাইকে হিমালয় অঞ্চল থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন। তাদের এই চক্রান্ত এখন প্রকাশ্যে এসে দাঁড়িয়েছে। জনগণ বুঝতে পেরেছে, তথাকথিত নেতারা তাদের জন্য কোন পথ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং তারা ছিল স্লোগান সর্বস্ব। এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ বুঝতে পেরেছে, অনুচ্ছেদ ৩৭০ একটি প্রতিবন্ধকতা ছাড়া আর কিছুই ছিল না, যেটি হিমালয় অঞ্চলকে উন্নত হতে দেয়নি।
প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মতে জুম্মু-কাশ্মীরের সরকার চলতি বছরের এপ্রিল-আগস্ট পর্যন্ত ২০ হাজার কোটি টাকার নতুন বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছে। নতুন ‘ল্যান্ড ব্যাঙ্ক’ তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেউ এই প্রস্তাবগুলো গ্রহণ করা হবে।
শিল্প বিনিয়োগের জন্য সরকার কর্তৃক ২৫ হাজার কানাল রাষ্ট্রীয় জমির উপর তৈরি করা ‘ল্যান্ড ব্যাংক’ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের উৎসাহজনক প্রতিক্রিয়ার কারণে প্রায় সম্পন্ন হয়ে গেছে।
শিল্প স্থাপনের পাশাপাশি জম্মু-কাশ্মীরে ৪,৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে মেডি-সিটি স্থাপনের জন্য ২০টি প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। মেডি-সিটিগুলিতে বেসরকারি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকবে এবং জম্মু ও কাশ্মীরে এমবিবিএস-এর আসন ৯০০ করা হবে।
১৯৪৭-২০১৯ সাল পর্যন্ত জম্মু-কাশ্মীরে ব্যক্তিগত বিনিয়োগ ছিল ১৫ হাজার কোটি টাকা, যা গত দুই বছরে বৃদ্ধি পেয়ে ৬০ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। আগামী মাসগুলোতে এর পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেতে চলেছে।
এক সময়ের সন্ত্রাসের ভূমি ‘ পুলওয়ামা জেলা’ এখন সেরা
হিমালয় অঞ্চল দ্রুত ‘সন্ত্রাসী কেন্দ্র’ থেকে একটি প্রাণবন্ত ব্যবসায়িক কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলা, যা একসময় জঙ্গিবাদের কেন্দ্রস্থল ছিল, সম্প্রতি ‘সুশাসন’ সূচকের অধীনে জম্মু-কাশ্মীর-এর সেরা জেলা হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে।
২০টি জেলা থেকে প্রতিযোগিতায় এটি সেরা জেলা নির্বাচিত হয়েছে। সুশানের জন্য এটি সম্ভব হয়েছে। এখানে কৃষিখাত, শিল্পখাত, মানব সম্পদ উন্নয়ন, জনস্বাস্থ্য, জনসাধারণের অবকাঠামো ও উপযোগিতা, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, সামাজিক কল্যাণ ও উন্নয়ন, বিচার বিভাগ, জননিরাপত্তা পরিবেশ এবং নাগরিক কেন্দ্রিক শাসন ইত্যা পুলওয়ামাকে প্রথম স্থানে তুলে এনেছে।