Bharat-Bangladesh Maitri Udyan : ‘ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যান’, মুক্তির আবাহন
- আপডেট সময় : ০৬:১৭:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ জুলাই ২০২২ ৪৫৬ বার পড়া হয়েছে
ছবি সংগ্রহ
‘রাজধানী আগরতলা থেকে ১৩০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে বাংলাদেশের ফেণী সীমান্তের কাছাকাছি ত্রিপুরার চোত্তাখোলায় অবস্থিত ‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যান’। এটি মুক্তিযুদ্ধের স্মারক। উভয় দেশের যোদ্ধাদের আত্মদানের গৌরবগাঁথা পার্কটি ১৯১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবসের দিনে উদ্বোধন করা হয়। মঙ্গলবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত’
গণহত্যা ১৯৭১, শিল্পী হাশেম খান
আমিনুল হক
সদর ফটক পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা গেল বেশ কয়েকজন নির্মাণকর্মীর ব্যস্ততা। কেউ দেয়ালে টেরাকোটা বসানোর কাজে ব্যস্ত, কয়েকজন রাস্তায় ইট বিছিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। আরও সামনে ৫২ ফুট উচ্চতার স্মৃতিসৌধ চট দিয়ে ঢাকা। এর সামনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিশাল ভাস্কর্য আকাশে মাথা তুলে দাড়িয়ে। তখনও কোনটার কাজই পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। ভারত-বাংলাদেশে মৈত্রী উদ্যানের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে জোড় কদমে।

আহত মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে যাচ্ছে সহযোদ্ধা ভারতের এক সেনাসদস্য : পাশে লেখক
বাম দিকে কিছুটা পথ এগিয়ে যেতেই লেকের উপরে নান্দনিক কাঠের সেতু পেরিয়ে অপর প্রান্তে গিয়ে থমকে দাড়াতে হলো। একজন আহত মুক্তিযোদ্ধাকে কাঁধে নিয়ে দীপ্তপদক্ষেপে এগিয়ে যাচ্ছেন একজন ভারতীয় সেনাসদস্য। একহাতে তার অস্ত্র, অপর হাতে যুদ্ধাহত সৈনিককে যতটা সম্ভব দ্রুত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পাশে একজন মুক্তিযোদ্ধা আহত ভারতীয় সৈনিককে কাঁধে বহন করে একইভাবে বহন করে দ্রুত নিরাপদে স্থানের উদ্দেশ্যে ছুটে চলেছেন।

বিজয় ১৯৭১ শিল্পী মাহমুদুল হাসান সোহাগ
এখান থেকে সরে আসতেই চোখে পড়ে গণহত্যার মর্মান্তিক দৃশ্য। এলোমোলো নারী-পুরুষের মরদেহের স্তুপ। পাশে স্বজনদের জন্য আহাজারি করছেন অনেকে। অপর দিকে মুক্তিযোদ্ধাদের কবর। পাশের লেকের সচ্ছজল তাদের শীতলতা এবং সবুজ গাছগাছালি ছায়া দিয়ে যাচ্ছে। পাশেই ব্যাঙ্কার, আর দেখা যাচ্ছে না। দু’চোখ ছাপসা হয়ে আসে। সেখান থেকে সরে এসে উদ্যানের নাম ফলকের পাশে বসে পড়লাম। জলের বোতল খুলে চোখমুখ ধুয়ে নিয়ে জল খেয়ে বসলাম। সঙ্গে থাকা সহকর্মী চন্দন ও মাখন বিস্ময়ে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। সময়টা ১৯১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাস।

নাম ফলকের পাশে বসা লেখক
নাম ফলকটির পাশে বসে ত্রিপুরাবাসীদের প্রতি বার বার কৃতজ্ঞতায় মাথা নত হয়ে আসছিলো। কারণ, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে বর্তমান বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের উপর ঝাপিয়ে পড়েছিলো বর্বর পাকিস্তানী বাহিনী। তারা নির্বিচার হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষন ইত্যাদিতে মেতে ওঠে। তৎকালীন পূর্ববঙ্গের মানুষদের রক্ষায় ভারত সরকার সকল সীমান্ত পথ উন্মুক্ত করে দেয়। সে সময় বাংলাদেশের পাঁজরঘেষা ত্রিপুরার লোকসংখ্যা ১৫ লাখের মতো। বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের মানুষ ত্রিপুরার সকল সীমান্ত পথ দিয়ে সেখানে আশ্রয় নেয়। চরম বিপদগ্রস্ত মানুষের জন্য দু’বাহু বাড়িয়ে বুকে টেনে নেন ত্রিপুরাবাসী। মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান এবং প্রায় ১৬ লাখ মানুষকে আশ্রয় ও মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেয় ভারত সরকার।

মৈত্রী উদ্যানে প্রবেশ করেই দেওয়া দেখা যাবে যা
১৯৭১ সালে ত্রিপুরার ১১টি যুদ্ধ ক্যাম্পের অন্যতম ছিল চোত্তাখোলা। এটি ছিলো মূলত বেস ক্যাম্প। বাংলাদেশী মুক্তিযোদ্ধারা এই বেস ক্যাম্প থেকেই চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও বৃহত্তর নোয়াখালীতে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করেন। আন্তর্জাতিক সীমান্তের নিকটবর্তী এই স্থানটি মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় সৈন্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মারক মৈত্রী উদ্যান’ নির্মাণ দীর্ঘদিনের দাবি ছিলো ত্রিপুরাবাসীর। এরই প্রেক্ষিতে ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ ত্রিপুরার চোত্তাখোলায় ৭ কোটি রুপি ব্যয়ে ২০ হেক্টর জায়গাজুড়ে উদ্যানটি নির্মাণ করা হয়েছে। ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর বাংলাদেশের তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী ডা. দীপু মনি মৈত্রী উদ্যানের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

অস্ত্র কাধে অকুতোভয় ভারতের সেনাবাহিনীর সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা
এখানে রয়েছে, একটি যুদ্ধ জাদুঘর, বেশ কয়েকটি টিলা, সবুজ উপত্যকা, লেক, গাছপালা, ভাস্কর্য, বাংলাদেশী মুক্তিযোদ্ধাদের কবরস্থান, বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ভাস্কর্য। এখানের দেয়ালে রয়েছে টেরাকোটার চিত্রকল্প। তাতে দেখা যায় ভারতের সেনাবাহিনীর নানা কর্মতৎপরতা। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, যুদ্ধ ইত্যাদি নানা বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এখানের টেরাকোটা, ভাস্কর্য সবই বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিল্পীদের সহায়তায় করা হয়েছে। চলবে




















