পুনিত : কন্নড় সিনেমার এক মানবদেবতার বিদায়
- আপডেট সময় : ০৭:৩৫:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২১ ৩৩৩ বার পড়া হয়েছে
‘কন্নড় সিনেমার আকাশচুম্বি জনপ্রিয় অভিনেতার নাম পুনিত, ৩ ভক্তের মৃত্যু, নিজের হাতে গড়া ২৬টি অনাথাশ্রম ও ১৬টি বৃদ্ধাশ্রমের সবাই কাঁদছেন পুনিতের জন্য’
কন্নড় সিনেমার আকাশচুম্বি জনপ্রিয় অভিনেতার নাম পুনিত। অকাল প্রয়াত পুনিত রাজকুমার। তার হঠাৎ মৃত্যুতে এক শোকাবহ পরিবেশ বিরাজ করছে ভারতে। পুনিতের নিজের হাতে গড়া ২৬টি অনাথাশ্রম ও ১৬টি বৃদ্ধাশ্রমের সবাই এখন চোখের জলে বুক ভাসিয়ে চলেছেন। পুনিতের মৃত্যুকে মেনে নিতে পারেননি এক ভক্ত। বেচে নিয়েছেন আত্মহননের পথ। অপর দু’জন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এমন বক্তব্য ওঠে এসেছে ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে।
শুক্রবার জিমে শরীরচর্চা করতে গিয়ে আকস্মাত হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন ৪৬ বছর বয়সী ভারতীয় এই অভিনেতা। সঙ্গে সঙ্গেই স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে ইসিজি করানো হয়। সেখান থেকে স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে ১১টার নাগাদ বেঙ্গালুরুর বিক্রম হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তারা জানান, অচেতন অবস্থায় পুনিতকে হাসপাতালে আনা হয়, পরীক্ষা করে দেখা গেছে হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়েছে।
জানা গিয়েছে, ‘পাওয়ার স্টার’ খ্যাত পুনিত অভিনয়ের বাইরে গানও করতেন। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে খুবই উদার মনের মানুষ ছিলেন। সামজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বাবা কন্নড় সিনেমার ‘ম্যাটিনি আইডল’ রাজকুমারের শুরু করা নানা জনকল্যাণমূলক উদ্যোগ তিনি তত্ত্বাবধান করতেন। এমনকি তিনি বাবার মতো মরণোত্তর চক্ষুদান করেছেন আগেই।

সংবাদমাধ্যম বলছে, কর্ণাটকের বিভিন্ন স্থানে ৪৫টি স্কুলে বিনা বেতনে শিক্ষাদান কার্যক্রম পরিচালনা করতেন পুনিত। প্রায় ১ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থীর ভার ছিল এই অভিনেতার কাঁধে। এছাড়া তার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হতো ২৬টি অনাথাশ্রম, ১৯টি গরুর খামার এবং ১৬টি বৃদ্ধাশ্রম। পুনিতের মৃত্যুতে প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে শোকের মাতম। অনেকেই কাঁদছেন তাদের প্রিয় মানুষটির জন্য। তাদের কাছে পুনিত অভিনেতা ছিলেন না, ছিলেন দেবতার মতো।
পারিশ্রমিকের বেশিরভাগ অর্থই তিনি বিভিন্ন দাতব্য কাজে দান করতেন। বিশেষ করে সিনেমায় গান গেয়ে যে অর্থ তিনি পেতেন, পুরোটাই বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে দান করতেন। তার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে ভারতে চলে গেল আরও তিন প্রাণ।

এছাড়া পুনীতের মৃত্যুশোক সহ্য করতে না পেরে মারুরু গ্রামের বাসিন্দা ৩০ বছর বয়সি এক ব্যক্তি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারান। একইভাবে মৃত্যু হয় শিনডোলি গ্রামের এক বাসিন্দারও। টেলিভিশনে পুনীতের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরে কান্নাকাটি করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। রাত ১১টা নাগাদ হৃদরোগে মৃত্যু হয় তারও।
উল্লেখ্য, শিশুশিল্পী হিসেবে মাত্র পাঁচ বছর বয়সে অভিনয় ক্যারিয়ার শুরু করেন পুনিত। ‘বেট্টাডা হুভু’ সিনেমাটিতে অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পান। ২০০২ সালে ‘আপ্পু’ সিনেমায় নায়ক হিসেবে অভিষেক হয় তার। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একে একে অনেক ব্যবসাসফল সিনেমা উপহার দিয়েছে এই অভিনেতা।

দুইদিন আগে একটি অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন পুনিত। শুক্রবার সকালেও মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারে সক্রিয় ছিলেন। তার মৃত্যুতে সোশ্যাল মিডিয়ায় শোক প্রকাশ করেছেন প্রায় সব তারকাই। পুনিতের ভক্তরা বেশি আবেগতাড়িত হয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে এই আশঙ্কায় কর্ণাটক সরকার বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছে।





















