ঢাকা ০৮:২৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
মানবতাবিরোধী অপরাধে ১৫ সেনা কর্মকর্তা হেফাজতে : সেনা সদর দপ্তর জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা সম্মেলন, বিশ্ব শান্তির নতুন দিগন্তে ভারত ধানের শীষ নিয়ে টানাটানি কেন, প্রশ্ন মির্জা ফখরুলের নোবেল শান্তি পুরস্কার থেকে ট্রাম্পের নাম বাদ কেন? জানালো কমিটি সাহিত্যাঙ্গনে শোকের ছায়া: চলে গেলেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম প্রজননকালীন নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই পদ্মা পারে প্রকাশ্যে ইলিশ বিক্রির হাট! খুলনার দাকোপে বেড়িবাঁধ ভেঙে ৮ গ্রাম প্লাবিত সংকট, ক্ষতির শতকোটি টাকা ফিলিপাইনে ভূমিকম্প ও বিপর্যয়ের  এক বছরের চিত্র অন্তর্বর্তী সরকার কেন যুদ্ধবিমান কিনছে, চীনের ২০টি জে-১০ সিই ক্রয়ে বিতর্ক ১৫ অক্টোবর স্বাক্ষরিত হবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ ঐতিহাসিক দলিলে নেতৃত্ব দেবেন ড. ইউনূস

 দেশে লক্ষাধিক শিশু বিপজ্জনক শ্রমে নিয়োজিত : ক্লেপ

নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা
  • আপডেট সময় : ০৪:৪৮:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫ ২৯১ বার পড়া হয়েছে

 দেশে লক্ষাধিক শিশু বিপজ্জনক শ্রমে নিয়োজিত : ক্লেপ

ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শিশুশ্রম প্রতিরোধে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও দেশে শিশুশ্রম বেড়েছে। বর্তমানে দেশের ৩৫ লক্ষ কর্মজীবী শিশুর মধ্যে এক লক্ষ ৬ হাজার শিশু বিপজ্জনক শ্রমে নিয়োজিত রয়েছে। তবে বিপজ্জনক শিশুশ্রমে শিশুদের সংখ্যা কমলেও সার্বিক শিশুশ্রম বেড়েছে। শিশুশ্রম ২০১৩ সালের ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২২ সালে ৪ দশমিক ৪০ শতাংশে পৌছেছে।

বৃহস্পতিবার ঢাকার  একটি হোটেলে ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিশুশ্রম প্রতিরোধ ও নির্মূল : সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জসমূহ’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে উত্থাপিত মূল প্রবন্ধে এ তথ্য তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ও গবেষক ড. মোহাম্মদ নাজমুজ্জামান ভূইয়া।

আর্ন্তজাতিক ও জাতীয় পর্যায়ের ২১টি উন্নয়ন সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত ‘চাইল্ড লেবার ইলিমিনেশন প্লাটফর্ম (ক্লেপ)’ আয়োজিত সেমিনারে সেমিনারে তিনি জানান, শ্রম আইনে বিপজ্জনক কর্মসংস্থানে শিশুদের নিয়োগ নিষিদ্ধ থাকলেও অসংখ্য শিশু আইনগত সীমার বাইরেও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে।

দেশে ২০১৩ সালে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের হার ছিল ৩ দশমিক ২ শতাংশ, যা ২০২২ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০১৩ সালের তুলনায় বাংলাদেশে ক্ষতিকর কাজে নিযুক্ত শিশুদের অনুপাত স্থিতিশীল থাকলেও শিশুশ্রম কমানো যায়নি। বর্তমানে কৃষি খাতে সর্বোচ্চ ৬১ শতাংশ শিশু শ্রমিক নিযুক্ত রয়েছে।

এরপর গৃহস্থালির কাজসহ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে ২৭ শতাংশ এবং পোশাক, জাহাজ ভাঙাসহ শিল্পখাতে ১৩ শতাংশ শিশু কর্মরত রয়েছে।

সেমিনারে সচিব এ. এইচ. এম সফিকুজ্জামান বলেন, শিশুশ্রম নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে শ্রম আইন সংশোধন করা সম্ভব হবে বলে আশাকরি। আইএলও কনভেনশনের ৮টি ধারায় স্বাক্ষর করেছে সরকার। বাকী দুটো ধারায়ও স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে শিশুশ্রম নিরসনে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলো কোন খাতে কত টাকা ব্যয় করছেন তাও খাতিয়ে দেখা হবে। এ বিষয়ে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোকে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।

সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, শিশুশ্রম কেবল সামাজিক সমস্যা নয়, এটি একটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়, যার সমাধানে মানবিক এবং নীতিগতভাবে জিরো টলারেন্স গ্রহণ করাই হবে মূল চাবিকাঠি। শিশুশ্রমের হার কিছুটা কমলেও কাজ এখনো শেষ হয়নি। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বেশি। যারা শ্রম আইনের বাইরে আছেন। তাই শ্রম সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে আইন সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে। শ্রম আইন বাস্তবায়নে সরকারি দপ্তরগুলোকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে আবদুল হামিদ বলেন, শিশুশ্রম আইনত নিষিদ্ধ, তবুও এটি আমাদের সামনে চলমান চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েছে, যা দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে ক্ষুন্ন করছে। কিছু মানুষের অসহযোগিতার কারণে শিশুশ্রম বন্ধ করা যাচ্ছে না। সরকারি নানা উদ্যোগ অনেক সময় মুখ থুবড়ে পড়ছে। তাই মানবতার বিকাশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে শিশুশ্রম রোধে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। সমন্বিত প্রচেষ্টার শিশুশ্রম নির্মূল হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সেমিনারে শিশুশ্রম প্রতিরোধে  অনানুষ্ঠানিক খাতে শিশুশ্রম নিয়ন্ত্রণে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিতে হবে।  ২০০৮ সালে ভারতীয় সংসদ অসংগঠিত খাতের শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা আইন পাস করে, যা অনানুষ্ঠানিক শ্রমিকদের জীবন, অক্ষমতা, স্বাস্থ্য, বার্ধক্য বীমা ইত্যাদির আওতায় পড়ে। এই আইনের ধারা ১০(১) অনুসারে, একজন অসংগঠিত শ্রমিক ১৪ বছর বয়স পূর্ণ করলেই কেবল সেই আইনের অধীনে নিবন্ধনের জন্য যোগ্য হবেন। বাংলাদেশও এই ধরনের আইন গ্রহণের কথা বিবেচনা করতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

 দেশে লক্ষাধিক শিশু বিপজ্জনক শ্রমে নিয়োজিত : ক্লেপ

আপডেট সময় : ০৪:৪৮:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫

শিশুশ্রম প্রতিরোধে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও দেশে শিশুশ্রম বেড়েছে। বর্তমানে দেশের ৩৫ লক্ষ কর্মজীবী শিশুর মধ্যে এক লক্ষ ৬ হাজার শিশু বিপজ্জনক শ্রমে নিয়োজিত রয়েছে। তবে বিপজ্জনক শিশুশ্রমে শিশুদের সংখ্যা কমলেও সার্বিক শিশুশ্রম বেড়েছে। শিশুশ্রম ২০১৩ সালের ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২২ সালে ৪ দশমিক ৪০ শতাংশে পৌছেছে।

বৃহস্পতিবার ঢাকার  একটি হোটেলে ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিশুশ্রম প্রতিরোধ ও নির্মূল : সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জসমূহ’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে উত্থাপিত মূল প্রবন্ধে এ তথ্য তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ও গবেষক ড. মোহাম্মদ নাজমুজ্জামান ভূইয়া।

আর্ন্তজাতিক ও জাতীয় পর্যায়ের ২১টি উন্নয়ন সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত ‘চাইল্ড লেবার ইলিমিনেশন প্লাটফর্ম (ক্লেপ)’ আয়োজিত সেমিনারে সেমিনারে তিনি জানান, শ্রম আইনে বিপজ্জনক কর্মসংস্থানে শিশুদের নিয়োগ নিষিদ্ধ থাকলেও অসংখ্য শিশু আইনগত সীমার বাইরেও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে।

দেশে ২০১৩ সালে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের হার ছিল ৩ দশমিক ২ শতাংশ, যা ২০২২ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০১৩ সালের তুলনায় বাংলাদেশে ক্ষতিকর কাজে নিযুক্ত শিশুদের অনুপাত স্থিতিশীল থাকলেও শিশুশ্রম কমানো যায়নি। বর্তমানে কৃষি খাতে সর্বোচ্চ ৬১ শতাংশ শিশু শ্রমিক নিযুক্ত রয়েছে।

এরপর গৃহস্থালির কাজসহ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে ২৭ শতাংশ এবং পোশাক, জাহাজ ভাঙাসহ শিল্পখাতে ১৩ শতাংশ শিশু কর্মরত রয়েছে।

সেমিনারে সচিব এ. এইচ. এম সফিকুজ্জামান বলেন, শিশুশ্রম নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে শ্রম আইন সংশোধন করা সম্ভব হবে বলে আশাকরি। আইএলও কনভেনশনের ৮টি ধারায় স্বাক্ষর করেছে সরকার। বাকী দুটো ধারায়ও স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে শিশুশ্রম নিরসনে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলো কোন খাতে কত টাকা ব্যয় করছেন তাও খাতিয়ে দেখা হবে। এ বিষয়ে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোকে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।

সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, শিশুশ্রম কেবল সামাজিক সমস্যা নয়, এটি একটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়, যার সমাধানে মানবিক এবং নীতিগতভাবে জিরো টলারেন্স গ্রহণ করাই হবে মূল চাবিকাঠি। শিশুশ্রমের হার কিছুটা কমলেও কাজ এখনো শেষ হয়নি। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বেশি। যারা শ্রম আইনের বাইরে আছেন। তাই শ্রম সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে আইন সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে। শ্রম আইন বাস্তবায়নে সরকারি দপ্তরগুলোকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে আবদুল হামিদ বলেন, শিশুশ্রম আইনত নিষিদ্ধ, তবুও এটি আমাদের সামনে চলমান চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েছে, যা দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে ক্ষুন্ন করছে। কিছু মানুষের অসহযোগিতার কারণে শিশুশ্রম বন্ধ করা যাচ্ছে না। সরকারি নানা উদ্যোগ অনেক সময় মুখ থুবড়ে পড়ছে। তাই মানবতার বিকাশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে শিশুশ্রম রোধে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। সমন্বিত প্রচেষ্টার শিশুশ্রম নির্মূল হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সেমিনারে শিশুশ্রম প্রতিরোধে  অনানুষ্ঠানিক খাতে শিশুশ্রম নিয়ন্ত্রণে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিতে হবে।  ২০০৮ সালে ভারতীয় সংসদ অসংগঠিত খাতের শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা আইন পাস করে, যা অনানুষ্ঠানিক শ্রমিকদের জীবন, অক্ষমতা, স্বাস্থ্য, বার্ধক্য বীমা ইত্যাদির আওতায় পড়ে। এই আইনের ধারা ১০(১) অনুসারে, একজন অসংগঠিত শ্রমিক ১৪ বছর বয়স পূর্ণ করলেই কেবল সেই আইনের অধীনে নিবন্ধনের জন্য যোগ্য হবেন। বাংলাদেশও এই ধরনের আইন গ্রহণের কথা বিবেচনা করতে পারে।