আজীবন দায়মুক্তি পেলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান, ক্ষমতার ভারসাম্যে বড় পরিবর্তন
- আপডেট সময় : ১০:৪৭:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫ ৫০ বার পড়া হয়েছে
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে গ্রেফতার ও বিচার থেকে আজীবন দায়মুক্তি এবং অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রদানের পক্ষে ভোট দিয়েছে দেশটির পার্লামেন্ট। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের মাধ্যমে সংবিধানের ২৭তম সংশোধনী আইনে পরিণত হয়, যা দেশটির সামরিক-বেসামরিক ক্ষমতার ভারসাম্যে বড় পরিবর্তন আনবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এই সংশোধনীর মাধ্যমে সেনাপ্রধান এখন শুধু স্থলবাহিনী নয়, নৌ ও বিমানবাহিনীরও তত্ত্বাবধানে থাকবেন। তার ফিল্ড মার্শাল পদবি আজীবন বহাল থাকবে এবং অবসর পরবর্তী সময়েও রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে দায়িত্ব পেতে পারেন। সমর্থকরা বলছেন, এতে সামরিক কমান্ড কাঠামো আরও স্পষ্ট হবে এবং আধুনিক যুদ্ধের প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখা সম্ভব হবে। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের মতে, এটি একটি বৃহত্তর প্রতিরক্ষা সংস্কারের অংশ।
তবে সমালোচকদের মতে, এই সংশোধনী পাকিস্তানকে হাইব্রিড শাসনব্যবস্থা থেকে আরও একধাপ দূরে ঠেলে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের উইলসন সেন্টারের বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, পাকিস্তান এখন পোস্ট-হাইব্রিড সিস্টেমে প্রবেশ করেছে, যেখানে বেসামরিক-সামরিক সম্পর্ক সম্পূর্ণভাবে ভারসাম্যহীন। মানবাধিকার কর্মী মুনিজা জাহাঙ্গীর মনে করেন, এমন সময়ে এই ক্ষমতা বাড়ানো হলো যখন উল্টো তাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন ছিল।
এই সংশোধনীর আরেক বড় পরিবর্তন বিচার বিভাগকে কেন্দ্র করে। নতুন ফেডারেল সাংবিধানিক আদালত (FCC) গঠনের মাধ্যমে সাংবিধানিক মামলার এখতিয়ার সুপ্রিম কোর্ট থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আদালতের প্রধান বিচারপতি ও বিচারকদের নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি, যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করবে বলে মনে করছেন অনেক আইনজীবী।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আতহার মিনাল্লাহ ও বিচারপতি মনসুর আলী শাহ ইতোমধ্যে পদত্যাগ করেছেন। তারা অভিযোগ করেছেন, ২৭তম সংশোধনী সুপ্রিম কোর্টকে দুর্বল এবং বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের অধীনস্ত করে ফেলেছে। নতুন আইনে বিচারকদের তাদের সম্মতি ছাড়াই এক আদালত থেকে অন্য আদালতে বদলি করা যাবে, যা সরকারের চাপ প্রয়োগের একটি উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।
সমালোচকরা বলছেন, এই সংশোধনী পাকিস্তানে সামরিক প্রভাব আরও গভীর করবে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে। বিশ্লেষক আরিফা নূরের মতে, এটি স্পষ্টতই কর্তৃত্ববাদের দিকে আরেক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। ইতিমধ্যে ২৮তম সংশোধনী নিয়েও আলোচনা চলছে, যা দেশটির গণতান্ত্রিক কাঠামো ভবিষ্যতে আরও সংকুচিত করতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সূত্র বিবিসি




















