এনইআইআর বাস্তবায়ন না হওয়ায় বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বঞ্চিত সরকার
- আপডেট সময় : ০৯:০৫:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৪ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশে মোবাইল শিল্পে ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ থাকলেও অবৈধ হ্যান্ডসেটের কারণে প্রতিবছর প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এমআইওবি) মনে করে, এনইআইআর ব্যবস্থা কার্যকর হলে অবৈধ ফোনের প্রবেশ রোধ হবে, বিনিয়োগ সুরক্ষিত থাকবে এবং সরকারের রাজস্ব আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।
বাংলাদেশের বাজারের প্রায় ৬০ শতাংশই অবৈধভাবে আমদানি হওয়া মোবাইল ফোন। ফলে সরকার বছরে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
মোবাইল ফোনে নিরাপত্তা জোরদার, অবৈধ হ্যান্ডসেট নিয়ন্ত্রণ এবং সরকারের রাজস্ব বাড়াতে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) অবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এমআইওবি)। সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা এই দাবি জানান।
এমআইওবি এমন সময় এনইআইআরের পক্ষে অবস্থান নিল, যখন মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন। রোববার সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিটিআরসি ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা। ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, দীর্ঘ এক যুগ ধরে আনঅফিসিয়াল বা অনুমোদনবিহীন ফোন প্রকাশ্যেই বিক্রি করেছেন, কখনো বাধা আসেনি; হঠাৎ করে এনইআইআরের সিদ্ধান্ত তাদের ব্যবসাকে বিপদে ফেলছে।
সংবাদ সম্মেলনে এমআইওবির সভাপতি জাকারিয়া শহিদ বলেন, বাংলাদেশের বাজারের প্রায় ৬০ শতাংশ মোবাইল ফোনই অবৈধভাবে দেশে ঢোকে। এতে সরকার প্রতিবছর প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এনইআইআর চালু হলে একই আইএমইআই নম্বর দিয়ে বহু ফোন চালানো, চোরাই বা রিফারবিশড ফোন বিক্রি-এসব ঝুঁকি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসবে।
এমআইওবির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম বিপ্লব জানান, দেশে বর্তমানে ১৮টি হ্যান্ডসেট উৎপাদনকারী কারখানা রয়েছে, যেখানে দেশি-বিদেশি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ হয়েছে। খাতটিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। মাসে ১৫ লাখ স্মার্টফোন এবং ২৫ লাখ ফিচার ফোন উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলেও গ্রে মার্কেটের কারণে ৩০-৪০ শতাংশ সক্ষমতা অব্যবহৃত রয়ে গেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সংগঠনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, এনইআইআর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা; বহু দেশেই এটি সফলভাবে কার্যকর রয়েছে। বাংলাদেশে এটি চালু হলে বৈধ হ্যান্ডসেট বাজার সুসংগঠিত হবে এবং চোরাপথে আমদানি হওয়া নিম্নমানের বা ব্যবহৃত ফোন বাজারে প্রবেশ করতে পারবে না।
সিন্ডিকেটের অভিযোগকে ভিত্তিহীন উল্লেখ করে নেতারা বলেন, দেশে মোবাইল উৎপাদন একটি প্রতিযোগিতামূলক খাত; ১৮টি লাইসেন্সধারী কোম্পানি মুক্ত প্রতিযোগিতার মধ্যেই ব্যবসা করছে। তাই কোনো একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেই।
শাওমি বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার জিয়াউদ্দিন চৌধুরী বলেন, এনইআইআর নিয়ে নানা অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে। এসব ভুল তথ্যের কারণে অনেক ব্যবসায়ী বিভ্রান্ত হচ্ছেন। বাংলাদেশে উৎপাদিত শাওমি ফোনের মান আন্তর্জাতিক মানের সমান, কিন্তু কিছু মহল এ বিষয়ে ভুল ধারণা তৈরি করছে।” তিনি বলেন, অবৈধ ফোন ব্যবহারে গ্রাহকের ব্যক্তিগত ডেটা ও নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ে, যা এনইআইআর বাস্তবায়ন হলে দূর হবে।
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে এনইআইআর কার্যকর হওয়ার কথা। তখন কেবল অনুমোদিত, বৈধভাবে আমদানি বা উৎপাদিত হ্যান্ডসেটই মোবাইল নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে পারবে। তবে দেশের মোবাইল বাজারের বড় অংশ বর্তমানে অনুমোদনহীন ফোনের দখলে থাকায় ব্যবসায়ীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এমআইওবি নেতারা এ অবস্থায় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, এনইআইআর বাস্তবায়ন দৃঢ়ভাবে অব্যাহত রাখা এবং অপতথ্য ছড়িয়ে বাজারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টাকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা।



















