অতীতের ভুলের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন জামায়াত আমির শফিকুর রহমান

- আপডেট সময় : ০১:৩৩:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫ ২২ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান দলটির প্রতিষ্ঠার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সব ভুলের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। বুধবার (২২ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এই ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
সভায় জামায়াত আমির বলেন, “১৯৪৭ সাল থেকে আজকের দিন পর্যন্ত আমাদের দ্বারা যারা যে জায়গায় কষ্ট পেয়েছেন, আমরা বিনাশর্তে তাদের কাছে মাফ চাই। এটা রাজনৈতিক বক্তব্য নয়, এটা আমাদের নৈতিক দায়বদ্ধতা।” তিনি আরও বলেন, “এই এপোলজি আমরা আগে কমপক্ষে তিনবার জানিয়েছি। অধ্যাপক গোলাম আযম, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এবং আমিও ক্ষমা চেয়েছি। এমনকি সম্প্রতি এ টি এম আজহার জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পরও আমি বলেছি—আমাদের দ্বারা কেউ কষ্ট পেলে আমরা তার কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।”
ডা. শফিকুর রহমান স্বীকার করেন, জামায়াত ইসলাম ইতিহাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার ভাষায়, “আমরা ভুল করিনি বলব কীভাবে? আমাদের ১০০টি সিদ্ধান্তের মধ্যে ৯৯টি সঠিক হলেও একটি বেঠিক হতে পারে। সেই একটি ভুল সিদ্ধান্তেও জাতির ক্ষতি হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে যদি আমার সিদ্ধান্তে বা দলের সিদ্ধান্তে দেশের ক্ষতি হয়ে থাকে, তবে মাফ চাইতে আমার কোনো দ্বিধা নেই।”
তিনি বলেন, “আমরা চাই, এই জাতি অতীতের ভুলগুলো ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাক। আমাদের অতীত থেকে শিক্ষা নিতে হবে, পরস্পরের প্রতি সহনশীল হতে হবে।”
নির্বাচন প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, “আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে গণভোট আয়োজন করা জরুরি। পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ইস্যুতে জনগণের মতামত নেওয়া উচিত।” তিনি আশা প্রকাশ করেন, ফেব্রুয়ারির রোজার আগেই নির্বাচনী প্রস্তুতি শেষ হবে এবং নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা থাকবে না।
সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে শফিকুর রহমান বলেন, “জামায়াত ইসলাম ক্ষমতায় এলে সংবিধান অনুযায়ী সবার মৌলিক ও ধর্মীয় অধিকার নিশ্চিত করা হবে। কোনো নাগরিক তার ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে হয়রানির শিকার হবে না। আমরা বিশ্বাস করি, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হলে সবাই নিরাপদে থাকবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা অতীতের ভুল স্বীকার করছি, কারণ একটি জাতি তখনই শক্তিশালী হয় যখন তারা নিজেদের ভুলের দায় নিতে পারে। আমাদের এই ক্ষমা প্রার্থনা আত্মসমালোচনার অংশ, যাতে ভবিষ্যতে আমরা আরও সচেতনভাবে দেশের কল্যাণে কাজ করতে পারি।”
বিশ্লেষকদের মতে, জামায়াত আমিরের এই ক্ষমা প্রার্থনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষত এমন সময়ে, যখন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া চলছে, এই পদক্ষেপ নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।