সীমান্তে নজরদারী জোরদার, হাদির হামলাকারীদের ধরিয়ে দিতে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা
- আপডেট সময় : ০২:৪০:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ৭৯ বার পড়া হয়েছে
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও তিনি শঙ্কামুক্ত নন। শুক্রবার রাতে এভারকেয়ারে হাসপাতালে স্থানান্তরের পর সেখানেই আইসিইউতে চিকিৎসাধীন. হাদি। হাদির গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেফতারে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে তার সংগঠন।
পুলিশ বলছে, দোষীদের গ্রেফতারে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে তারা। এদিকে হাদির ওপর সশস্ত্র হামলার ঘটনায় হামলাকারীদের ধরিয়ে দিতে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে সরকার। শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, হাদিকে যারা গুলি করেছে, সেই দুর্বৃত্তরা যাতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারে, সে জন্য সীমান্তজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি জুলাই মাসে লুট হওয়া ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান অভিযান আরও জোরদার করা হচ্ছে। ফ্যাসিস্ট টেরোরিস্টদের দমনে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটি ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ–২’ অবিলম্বে চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও জানান তিনি। এদিকে, গুলিবিদ্ধ ওসমান হাদি বর্তমানে ঢাকার বিশেষায়িত এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসকদের মতে, তাঁর অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন।

এই হামলার ঘটনা ঘিরে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও রাজনৈতিক আলোচনা চলছে। হাদির ওপর হামলার প্রেক্ষাপটে শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির নেতারা অংশ নেন। তারা সবাই একমত পোষণ করে বলেন, হাদির ওপর হামলা জুলাই অভ্যুত্থান ও আসন্ন নির্বাচন নস্যাতের ষড়যন্ত্রের অংশ। এ ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বৈঠকে ড. ইউনূস বলেন, ওসমান হাদির ওপর হামলা পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর ষড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ।
এর পেছনে বিরাট শক্তি কাজ করছে, যাদের লক্ষ্য নির্বাচন বানচাল করা। এই আক্রমণটি খুবই সিম্বলিক। তারা শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়া ভেস্তে দিতে চায়, বলেন তিনি। এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক কর্মীর ছদ্মবেশে যারা একটি বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তৎপর, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, নিজেদের মধ্যে ঐক্য না থাকলে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থাই কার্যকর হবে না। ড. ইউনূস বলেন, ভবিষ্যতের স্বার্থে সবাইকে দায়িত্বশীল ও সংযত থাকতে হবে।
রাজনৈতিক মতভেদ থাকবে, তবে প্রতিহিংসা ও সহিংসতার সংস্কৃতি পরিহার করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। হাদিকে গুলির ঘটনায় জড়িত দুর্বৃত্তরা যাতে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যেতে না পারে, সে লক্ষ্যে বেনাপোল সীমান্তে ব্যাপক নজরদারি ও তল্লাশি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।

সীমান্তজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। যশোরের ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সূত্রে জানা গেছে, ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ প্রায় ৭০ দশমিক ২৭৪ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় কঠোর তল্লাশি ও টহল কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বাড়ানো হয়েছে টহলের সংখ্যা এবং গোয়েন্দা নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সীমান্ত এলাকায় অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। যেসব স্থানে এখনো কাঁটাতারের বেড়া নেই, সেসব সীমান্ত বিশেষভাবে সিলগালা করা হয়েছে, যাতে কোনোভাবেই অপরাধীরা সীমান্ত অতিক্রম করতে না পারে।
বিজিবি সূত্র জানিয়েছে, সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও যানবাহনের ওপর বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে এবং সীমান্তবর্তী এলাকায় দিন-রাত যৌথভাবে টহল পরিচালনা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই কঠোর নজরদারি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে বিজিবি। ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী জানান, ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত আসামিরা যাতে কোনোভাবেই সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে পালাতে না পারে সেজন্য বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। সীমান্তের প্রতিটি পয়েন্টে তল্লাশি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।



















