রাজনৈতিক কারণে দেশে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না: অর্থ উপদেষ্টা
- আপডেট সময় : ০৫:৪৮:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫ ১৫৯ বার পড়া হয়েছে
দেশে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণেই চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এবং এর ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, একই ব্যক্তি যখন রাজনীতি ও ব্যবসা দুই ক্ষেত্রেই সক্রিয় থাকেন, তখন বাজারে প্রতিযোগিতা ব্যাহত হয় এবং চাঁদাবাজির সংস্কৃতি দৃঢ় হয়। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে পণ্যমূল্যের ওপর, যার বোঝা বহন করছে সাধারণ মানুষ।
চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেটে পণ্যমূল্যের চাপ : অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “চাঁদাবাজি এখন ব্যবসার অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যবসায়ীরা নিরাপদ পরিবেশে ব্যবসা করতে পারছেন না। পরিবহন থেকে পাইকারি ও খুচরা বাজার পর্যন্ত নানা ধাপে চাঁদা দিতে হচ্ছে। এই অতিরিক্ত খরচ শেষ পর্যন্ত ভোক্তার ওপর চাপানো হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। অনেকে রাজনীতির ছত্রছায়ায় থেকে ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকায় বাজারে মনোপলি গড়ে উঠছে। এতে সিন্ডিকেট শক্তিশালী হচ্ছে এবং একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ইচ্ছামতো দাম বাড়ানো হচ্ছে।

সরকার পরিবর্তনের পর চাঁদাবাজির প্রবণতা বৃদ্ধি: সালেহউদ্দিন আহমেদ উল্লেখ করেন, গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকে দেশে চাঁদাবাজির প্রবণতা আরও বেড়েছে। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন মহল বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
মুদ্রাস্ফীতি ও জনগণের কষ্ট : অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এতটাই বেড়েছে যে নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। বহু পরিবার মাসের পর মাস পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিত। অনেকেই এখন দিনে তিনবেলার খাবারও জোগাড় করতে পারছে না।”
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য তুলে ধরে তিনি জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশে। এটি গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। শুধু খাদ্যপণ্য নয়, অখাদ্য পণ্যের ক্ষেত্রেও মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
নির্বাচনের সময় পরিস্থিতি আরও সংকটময় হতে পারে: আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে মুদ্রাস্ফীতি আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় সাধারণ মানুষের হাতে টাকা আসবে, ফলে বাজারে চাহিদা বাড়বে। চাহিদা বাড়ার সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা দাম আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে সাধারণ ভোক্তার ভোগান্তি চরমে পৌঁছাতে পারে।
যদিও বর্তমান পরিস্থিতি উদ্বেগজনক, অর্থ উপদেষ্টা আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে আগামী বছরের জুন নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। এজন্য তিনি কয়েকটি করণীয় তুলে ধরেন: বাজার ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা: সরকারি নজরদারি ও নিয়মিত বাজার মনিটরিং নিশ্চিত করতে হবে।

সিন্ডিকেট ভাঙা: কয়েকজন ব্যবসায়ীর হাতে বাজার নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করতে হবে।
রাজনীতি থেকে অর্থনীতিকে আলাদা রাখা: রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে ব্যবসা পরিচালনা নিশ্চিত করা জরুরি।
চাঁদাবাজি দমন: আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে নিরপেক্ষভাবে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি: নতুন উদ্যোক্তাদের বাজারে অংশগ্রহণের সুযোগ বাড়াতে হবে।
সাধারণ ভোক্তারা বলছেন, নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ না করলে তাদের জীবনযাত্রা আরও কঠিন হয়ে পড়বে। প্রতিদিনের বাজার খরচ মেটাতে গিয়ে তারা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় কমাতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক পরিবার শিশুদের পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিত করছে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের বক্তব্য আবারও স্পষ্ট করে দিল, চাঁদাবাজি, সিন্ডিকেট ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ কঠিন হবে। তবে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া গেলে আগামী বছর নাগাদ পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে। তাই অর্থনীতিকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা এবং বাজারে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা এখন সময়ের দাবি।




















