রাজনীকান্ত: দক্ষিণের ‘থালাইভা’ হওয়ার অনন্য পথচলা রূপটানহীন উপস্থিতিতে যার ব্যক্তিত্ব আরও দীপ্ত
- আপডেট সময় : ০৭:৫৪:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৫ বার পড়া হয়েছে
পঁচাত্তর বছরের জীবনে অর্ধশতক জুড়ে রজনীকান্ত যেন এক অবিনাশী অধ্যায়। মারাঠি পরিবারে শিবাজী রাও গায়কোয়াড় নামে জন্ম নেওয়া সেই সাধারণ ছেলেটি আজ দক্ষিণ ভারতের ‘থালাইভা’ গুরু, পথপ্রদর্শক, অনুপ্রেরণা। জীবিকার প্রয়োজনে কুলিগিরি থেকে বাস কন্ডাক্টরের চাকরি, প্রতিটি ধাপেই তিনি তৈরি করেছেন নিজস্ব এক স্টাইল। বিশেষ করে তাঁর টিকিট দেওয়ার ভঙ্গি এতই জনপ্রিয় ছিল যে যাত্রীরা বাসে তাঁর জন্য অপেক্ষা করতেন।
কৈশোর থেকেই নাটক ও অভিনয়ের প্রতি টান ছিল প্রবল। এক বন্ধুর সহযোগিতায় ভর্তি হন মাদ্রাজ ফিল্ম স্কুলে। সেখানেই নজর কাড়েন খ্যাতিমান পরিচালক কে. বালাচন্দরের। তিনিই নতুন নাম দেন—রজনীকান্ত।
১৯৭৫ সালে বালাচন্দরের ‘অপূর্ব রাগাঙ্গল’ দিয়ে তামিল সিনেমায় তাঁর অভিষেক। প্রথম সিনেমাতেই দর্শকের মনে জায়গা করে নেন তিনি। শুরুতে কমল হাসানের সঙ্গে পর্দা ভাগ করলেও খুব দ্রুতই নিজের অভিনয়ের স্বকীয়তায় হয়ে ওঠেন আলাদা।
অত্যাচারিত কৃষক, শ্রমজীবী কিংবা কুলি—প্রতিটি চরিত্রেই রজনীকান্ত এনে দেন নতুন ব্যঞ্জনা। সংলাপ বলার তীক্ষ্ণ ধরন, ক্যামেরার সামনে অনন্য উপস্থিতি এসবই তাঁকে প্রচলিত নিয়মের বাইরে নিয়ে যায়।

পাঁচ দশকের ক্যারিয়ারে তামিল, হিন্দি ও তেলেগু ভাষায় তিনি অভিনয় করেছেন ১৭০টিরও বেশি ছবিতে। দক্ষিণ ভারতে তাঁর সিনেমা মুক্তির দিনে রাজ্যজুড়ে ছুটি ঘোষণার নজিরও রয়েছে। অথচ বাস্তবে তাঁর উপস্থিতি আশ্চর্যরকম সাধারণ—পরচুলা ছাড়া, মেকআপ ছাড়া, সহজ পোশাকে। এই সরলতাই তাঁকে মানুষের আরও কাছে নিয়ে গেছে।
কিছুদিন আগে ‘কুলি’ ছবির ট্রেলার প্রকাশ অনুষ্ঠানে কুলি হিসেবে কাজ করার অপমানের স্মৃতিচারণে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। এক কলেজবন্ধুর কাছ থেকে দুই রুপিতে লাগেজ তোলার নির্দেশ—সেই স্মৃতি আজও তাঁর মনে দাগ কেটে আছে।
ভারতীয় সিনেমায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি পেয়েছেন পদ্মভূষণ (২০০০), পদ্মবিভূষণ (২০১৬) ও দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার (২০১৯)। স্বপ্ন দেখা এক সাধারণ মানুষের জীবন কীভাবে কিংবদন্তিতে রূপ নেয়—রজনীকান্ত তার উজ্জ্বল উদাহরণ।



















