সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল এই মহাউৎসব। টানা পাঁচ দিনের আনন্দঘন অনুষ্ঠান, আরাধনা ও ভক্তিমূলক আয়োজনে ভরে উঠেছিল মণ্ডপ ও মন্দিরগুলো।
সনাতন ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, বিজয়া দশমীর মূল তাৎপর্য হলো মানুষের মনের অসুরিক প্রবৃত্তি—কাম, ক্রোধ, হিংসা ও লালসা—বিসর্জন দেওয়া। এই নেতিবাচক প্রবৃত্তিগুলোকে ত্যাগ করে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে শান্তি ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠার বার্তাই ছড়িয়ে দেয় দুর্গাপূজা। ভক্তদের বিশ্বাস, দেবী দুর্গা অসুর নিধনের মাধ্যমে শুভ শক্তির জয় এবং অশুভ শক্তির বিনাশের প্রতীক হয়ে মর্ত্যে আসেন।
মহাদশমীতে সিঁদুর খেলায় রঙিন বিদায় বিসর্জনে শেষ ‘শারদ দুর্গোৎসব’
শাস্ত্রীয় মতে, ২০২৫ সালে দেবী দুর্গা হাতির পিঠে মর্ত্যে এসেছেন এবং বিজয়া দশমীতে দোলায় চড়ে কৈলাসে ফিরে যাবেন। বিশ্বাস করা হয়, দেবীর আগমন যদি হাতির পিঠে হয়, তবে তা অত্যন্ত শুভ লক্ষণ। এতে পৃথিবী শস্য-শ্যামলায় ভরে ওঠে এবং সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়।
চলতি বছরে সারা দেশে ৩৩ হাজারেরও অধিক মণ্ডপ ও মন্দিরে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়। কেবল ঢাকা মহানগরীতেই ২৫৮টি মণ্ডপ ও মন্দিরে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। রাজধানীতে এবারের দুর্গোৎসব ছিল অত্যন্ত বর্ণাঢ্য। মণ্ডপগুলোর পাশাপাশি আশেপাশের সড়কগুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়, যা উৎসবের আমেজকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
আজ বিকেলে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য রাজধানীতে শোভাযাত্রা বের হবে। এটি শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে সদরঘাটে গিয়ে শেষ হবে। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ভক্তিমূলক গানের তালে তালে দেবীকে বিদায় জানাবেন।
বিসর্জনে শেষ ‘শারদ দুর্গোৎসব’
বিজয়া দশমীর দিনে বহু মন্দিরে অনুষ্ঠিত হয় দশমী বিহিত পূজা ও দর্পণ বিসর্জন। দর্পণ বিসর্জনে ভক্তরা আয়নায় দেবীর প্রতিফলন দেখে পূজা করেন। এরপর শুরু হয় সিঁদুর খেলা। এ সময়ে বিবাহিত নারীরা দেবীর চরণে সিঁদুর দান করে তা নিজেদের কৌটায় ধারণ করেন সারা বছর ব্যবহারের জন্য। পরে তারা একে অপরের কপাল ও চিবুকে দেবীর চরণ স্পর্শ করা সিঁদুর দিয়ে আশীর্বাদ বিনিময় করেন। এই আচারকে আনন্দ ও শুভ কামনার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।
আজ সন্ধ্যার মধ্যেই প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে পাঁচ দিনের এই মহাউৎসব। তবে পূজা শেষে শুরু হবে ভক্তদের নতুন পথচলা—অশুভকে বিসর্জন দিয়ে শুভ শক্তিকে ধারণ করার প্রত্যয়ে।