বিচার শেষের আগেই ফাঁসি কার্যকরের অভিযোগ
- আপডেট সময় : ০৮:৩১:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ নভেম্বর ২০২১ ২৯৫ বার পড়া হয়েছে
সকল আইনগত প্রক্রিয়া মেনেই দণ্ড কার্যকর : জেল কর্তৃপক্ষ
বিচার সম্পন্ন হবার আগেই যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই বন্দির ফাঁসি কার্যকরের অভিযোগ ওঠেছে। মোকিম ও ঝড়ু নামের দুই বন্দির আইনজীবীরা এমন অভিযোগ তোলেছেন। এ ক্ষেত্রে কারা কর্তৃপক্ষের নথি বলছে ভিন্ন কথা।
নথি পর্যালোচনা করে দেখা গিয়েছে, দুই আসামির জেল আপিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০১৬ সালে খারিজ করে দেয়। খারিজ আদেশের পর চুয়াডাঙ্গার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুই বন্দির নামে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে পরোয়ানা জারি করেন। এরপর কারা কর্তৃপক্ষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন পাঠান। প্রাণভিক্ষার আবেদন
খারিজে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর কারাগারে পৌঁছায়। তারপরই জেল কোডের বিধান মেনে যশোর কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ একই বছরের ১৬ নভেম্বর দু’জনের ফাঁসি কার্যকর করেন। ফাঁসি কার্যকরের প্রায় চার বছর পর দুই বন্দির ফৌজদারি আপিল শুনানির জন্য আপিল বিভাগের দৈনন্দিন কার্য তালিকায় ওঠে। এ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
এরপরই পুরাতন ফাইলপত্র নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয় যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার ও জেলা প্রশাসনে। বুধবার রাত অবধি চলে এসব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া। ফাঁসি কার্যকরের তথ্য-উপাত্তে দেখা যাচ্ছে, আসামিদের জেল আপিল নিষ্পত্তির পরই নাকচ হয়েছে প্রাণভিক্ষার আবেদন। তারপরই দণ্ড কার্যকর করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।
আইনজীবী আসিফ হাসান বলেন, আপিল নিষ্পত্তির আগেই ফাঁসি কার্যকর ন্যায় বিচারের পরিপন্থী। আমরা শুনানির সময় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে এ বিষয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করবো। তবে কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে আইনজীবীদের কোনো কথা হয়নি বলেও জানান আসিফ হাসান।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারী ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামের মৃত রবকুল মণ্ডলের মেজো ছেলে মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার হোসেনকে ১৯৯৪ সালের ২৮ জুন গ্রামের বাদল সরদারের বাড়িতে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির কতিপয়
চরমপন্থি কুপিয়ে হত্যা করে। ঐদিনই নিহতের ভাই মুক্তিযোদ্ধা অহিম উদ্দিন বাদি হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় ২১ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
দীর্ঘ ১৪ বছর পর ২০০৮ সালের ১৭ এপ্রিল এ হত্যা মামলার রায় ঘোষিত হয়। রায়ে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির দুই আঞ্চলিক নেতা দুর্লভপুরের আব্দুল মোকিম ও একই গ্রামের ঝড়ুসহ ৩ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং দুর্লভপুরের আমিরুল ইসলাম ও একই গ্রামের হিয়াসহ ২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন চুয়াডাঙ্গার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত।
বাকি ১৬ জন আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। পাশাপাশি ফাঁসির আসামিদের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। ডেথ রেফারেন্স ও আপিল নিষ্পত্তি করে ২০১৩ সালের ৮ জুলাই মোকিম ও ঝড়ুর ফাঁসি বহাল রাখে বাকিদের খালাস দেয়া হয়। এরপর
আসামিরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে জেল আপিল দায়ের করেন। ২০১৬ সালের ১৫ নভেম্বর সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের তিন বিচারপতির বেঞ্চ মোকিম ও ঝড়ুর জেল আপিল খারিজ করে দেন।

























