কোগি রাজ্যের তথ্য কমিশনার কিংসলে ফ্যানও বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, মৃতদের মধ্যে নারী ও পুরুষ উভয়ই রয়েছেন। নৌকার আরোহীরা মূলত ইবাজি জেলা থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন। তাদের গন্তব্য ছিল এডো রাজ্যের ইলুশি বাজার। কিন্তু পথের মাঝেই নৌকাটি ভারসাম্য হারিয়ে নদীতে ডুবে যায়।
নাইজেরিয়ার অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (NIWA) জানিয়েছে, দুর্ঘটনাকবলিত নৌকাটিতে প্রায় ৮০ জন যাত্রী ছিলেন। তাদের মধ্যে প্রায় ৪০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তবে বাকি যাত্রীদের মধ্যে কেউ নিখোঁজ, কেউ আবার ডুবে মারা গেছেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ডেইলি পোস্ট জানিয়েছে, সর্বশেষ পাওয়া তথ্যে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৬ জনে দাঁড়িয়েছে। নিখোঁজদের উদ্ধারে তল্লাশি অভিযান এখনও চলছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, নৌকাটি যাত্রার সময় অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করা ছিল। উপরন্তু, যাত্রীদের মধ্যে কারও জীবন রক্ষাকারী জ্যাকেটও ছিল না। ফলে দুর্ঘটনার পর অধিকাংশ যাত্রী সাঁতার কাটতে না পেরে নদীর স্রোতে ভেসে যান।
নাইজেরিয়ায় নৌকাডুবি নতুন কিছু নয়। দেশটিতে প্রায়ই এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ ধরনের দুর্ঘটনার পেছনে প্রধানত তিনটি কারণ দায়ী—অতিরিক্ত যাত্রী বহন, নৌযানগুলোর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এবং নিরাপত্তা বিধি না মানা। অনেক ক্ষেত্রেই যাত্রীরা লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করেন না, এমনকি নৌকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সরঞ্জামও থাকে না।
গত কয়েক বছরে নাইজেরিয়ার বিভিন্ন প্রদেশে একাধিক ভয়াবহ নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে। শুধু ২০২৩ সালে একাধিক ঘটনায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এ বছরও একাধিক দুর্ঘটনায় বহু প্রাণহানি ঘটেছে। প্রতিবারই তদন্তের ঘোষণা দেওয়া হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সরকারের বিরুদ্ধে।
ইবাজি জেলার এক প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান, নৌকাটি নদীর মাঝপথে হঠাৎ কাত হয়ে যায়। তখনই যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। অনেকেই লাফিয়ে নদীতে নামার চেষ্টা করেন, কিন্তু স্রোতের কারণে তীরে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। উদ্ধার কাজে স্থানীয়রা এগিয়ে এলেও শক্তিশালী স্রোতের কারণে তা কঠিন হয়ে পড়ে।
কোগি রাজ্যের গভর্নর এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন এবং নিহতদের পরিবারকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি একইসাথে নৌ-নিরাপত্তা বিধি মানার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষও এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে জানিয়েছে, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত চলছে।
এ ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর নাইজেরিয়ার নাগরিক সমাজ ও বিভিন্ন সংগঠন আবারও নৌপরিবহন খাতে সংস্কারের দাবি তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়ম-কানুন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন না করলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ভবিষ্যতেও ঘটতেই থাকবে। যাত্রীদের বাধ্যতামূলকভাবে লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার নিশ্চিত করা, নৌযানের যান্ত্রিক সক্ষমতা নিয়মিত পরীক্ষা করা এবং অতিরিক্ত যাত্রী বহন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করলেই কেবল দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব।
নাইজেরিয়ার কোগি রাজ্যের সাম্প্রতিক এই নৌকাডুবি আবারও প্রমাণ করল যে দেশটিতে নৌ-নিরাপত্তা পরিস্থিতি কতটা নাজুক। মাত্র এক রাতেই প্রায় তিন ডজন মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে, নিখোঁজ রয়েছেন আরও অনেকে। যারা জীবিত ফিরতে পেরেছেন তারা আজীবন বহন করবেন সেই ভয়াল স্মৃতি। তাই দেশের নৌপরিবহন খাতে টেকসই সংস্কার ছাড়া প্রাণহানি রোধ সম্ভব নয়।