ঢাকা ০১:৩০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
অশান্ত মেঘনা তীর: ভোলায় বিএনপি-বিজেপি সংঘর্ষে আহত ৫০ আজ থেকেই বন্ধ হচ্ছে একনামে ১০টির বেশি সিম, বিটিআরসির অভিযান অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে এসএমই খাতকে রূপান্তরের সরকারি উদ্যোগ গণভোট নয়, এখন দরকার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার : বিএনপি মহাসচিব শিশুদের হাতে মোবাইল না দিতে আহ্বান বাসস চেয়ারম্যানের গণভোটের সিদ্ধান্ত প্রধান উপদেষ্টার, নির্বাচন ১৫ ফেব্রুয়ারির আগেই দিনমজুরের নামে ২৫০ কোটি টাকার ঋণ, নেপথ্যে সাবেক মন্ত্রীপরিবার নভেম্বরে গণভোট চায় ৮ দল, জুলাই সনদে আইনি ভিত্তির দাবিতে স্মারকলিপি গুম কমিশন গঠন স্থগিত, শক্তিশালী মানবাধিকার কমিশনই নেবে দায়িত্ব রেজিমেন্ট অব আর্টিলারি ও আর্মি এয়ার ডিফেন্স কোরের অধিনায়ক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

দিনমজুরের নামে ২৫০ কোটি টাকার ঋণ, নেপথ্যে সাবেক মন্ত্রীপরিবার

ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৪:৫৬:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫ ৩২ বার পড়া হয়েছে

দিনমজুরের নামে ২৫০ কোটি টাকার ঋণ, নেপথ্যে সাবেক মন্ত্রীপরিবার

ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দিনমজুরদের নামে শত কোটি টাকার ঋণ কীভাবে অনুমোদন পেল, তার ব্যাখ্যা দিতে এখন হিমশিম খাচ্ছে ইউসিবি। এদিকে পাহাড়ের দরিদ্র গ্রামগুলোয় আতঙ্ক আর অবিশ্বাস, মানুষ বলছে, এখন কেউ সাহায্যের কথা বললেও ভয় লাগে

চট্টগ্রাম ও পার্বত্য অঞ্চলের হতদরিদ্র মানুষদের নামে জালিয়াতির মাধ্যমে ২৫০ কোটি টাকারও বেশি ঋণ নেওয়া হয়েছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) থেকে। অভিযোগ উঠেছে, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর পরিবার ও ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত।

২০২৩ সাল থেকে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি, কক্সবাজারের ঈদগড় ও গর্জনিয়া ইউনিয়নের ২২ জন নারী-পুরুষ ইউসিবি ব্যাংক থেকে ঋণ পরিশোধের নোটিশ পেতে থাকেন। তাঁরা সবাই দিনমজুর, ভূমিহীন ও অশিক্ষিত। ব্যাংকের নোটিশে তাঁদের নামে ৬ কোটি থেকে ১৩ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দেখানো হয়। অথচ এঁদের কেউ কোনো ব্যাংক হিসাব পর্যন্ত খুলেননি।

করোনাকালে স্থানীয় দালালেরা আর্থিক ও খাদ্যসহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে। পরে চট্টগ্রামের পটিয়া সাবরেজিস্ট্রি অফিসের পাশে একটি দোকানে নিয়ে গিয়ে ২০-৩০ হাজার টাকা দিয়ে ইংরেজিতে লেখা নথিতে স্বাক্ষর ও টিপসই নেওয়া হয়। সেই নথিতেই তাঁদের নামে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে ইউসিবি ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়।

বান্দরবানের হলদ্যাশিয়া গ্রামের দিনমজুর মোহাম্মদ আয়ুবের নামে নেওয়া হয়েছে ৬ কোটি ১২ লাখ টাকার ঋণ। তিনি বলেন, জীবনে এক লাখ টাকাও দেখিনি, অথচ আমার নামে ব্যাংকের নোটিশ আসছে কোটি টাকায়। একই গ্রামের ফরিদুল আলমের নামে নেওয়া হয়েছে ১০ কোটি ৮২ লাখ টাকা। নোটিশে তাঁকে ইউনিক এন্টারপ্রাইজ-এর মালিক দেখানো হয়, অথচ তিনি বাঁশের বেড়া বানিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।

রামুর ঈদগড়ের নুরুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী মায়মুনা আক্তারের নামে ঋণ দেখানো হয়েছে ১৩ কোটি টাকার। তাঁদেরও কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নেই। নুরুল ইসলাম বলেন, অর্থসহায়তার কথা বলে এনআইডি নিয়েছিল। এখন বুঝতে পারছি প্রতারণার শিকার হয়েছি।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, এসব মানুষ এখন ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন। ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম বলেন, দিনমজুররা ইউপি অফিসে এসে কাঁদছে। তারা জানেই না, কিভাবে ব্যাংকের গ্রাহক হলো।

 জানা গেছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ইউসিবি ব্যাংক ছিল সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর পরিবারের নিয়ন্ত্রণে। তাঁর স্ত্রী রুখমিলা জামান ছিলেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং ছোট ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনি নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান। তাঁদের নির্দেশেই নামে-বেনামে প্রতিষ্ঠান খুলে ঋণ অনুমোদন করা হতো। ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা এই জালিয়াতির সহযোগী ছিলেন।

পটিয়া ও আশপাশের এলাকায় বসবাসকারী মোস্তাফিজুর রহমান, মো. শাহজাহান ও নুরুল আনোয়ার নামের তিন ব্যক্তি পরিবারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তাঁরা দালাল হিসেবে হতদরিদ্রদের কাছ থেকে এনআইডি সংগ্রহের দায়িত্বে ছিলেন। এখন সবাই আত্মগোপনে।

সরকার পরিবর্তনের পর থেকে সাইফুজ্জামান পরিবার ও তাঁদের ঘনিষ্ঠ ব্যাংক কর্মকর্তারা পলাতক। ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্যে পরিবারটির কিছু সম্পদ জব্দ করা হয়েছে বলে  খবর পাওয়া গেছে।

ইউসিবি ব্যাংকের প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা জীশান কিংশুক হক জানান, এই অনিয়মগুলো ঘটেছে পূর্ববর্তী পরিচালনা পর্ষদের সময়ে। বর্তমান কর্তৃপক্ষ আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে যাঁদের নামে ঋণ নেওয়া হয়েছে, তাঁরা যদি সামান্য টাকাও পেয়ে থাকেন, আইন তাঁদেরও ছাড় দেবে না।

এই ঘটনার পর চট্টগ্রাম অঞ্চলে ব্যাংকিং খাতের ওপর নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। দিনমজুরদের নামে শত কোটি টাকার ঋণ কীভাবে অনুমোদন পেল, তার ব্যাখ্যা দিতে এখন হিমশিম খাচ্ছে ইউসিবি। এদিকে পাহাড়ের দরিদ্র গ্রামগুলোয় আতঙ্ক আর অবিশ্বাস, মানুষ বলছে, এখন কেউ সাহায্যের কথা বললেও ভয় লাগে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

দিনমজুরের নামে ২৫০ কোটি টাকার ঋণ, নেপথ্যে সাবেক মন্ত্রীপরিবার

আপডেট সময় : ০৪:৫৬:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫

দিনমজুরদের নামে শত কোটি টাকার ঋণ কীভাবে অনুমোদন পেল, তার ব্যাখ্যা দিতে এখন হিমশিম খাচ্ছে ইউসিবি। এদিকে পাহাড়ের দরিদ্র গ্রামগুলোয় আতঙ্ক আর অবিশ্বাস, মানুষ বলছে, এখন কেউ সাহায্যের কথা বললেও ভয় লাগে

চট্টগ্রাম ও পার্বত্য অঞ্চলের হতদরিদ্র মানুষদের নামে জালিয়াতির মাধ্যমে ২৫০ কোটি টাকারও বেশি ঋণ নেওয়া হয়েছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) থেকে। অভিযোগ উঠেছে, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর পরিবার ও ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত।

২০২৩ সাল থেকে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি, কক্সবাজারের ঈদগড় ও গর্জনিয়া ইউনিয়নের ২২ জন নারী-পুরুষ ইউসিবি ব্যাংক থেকে ঋণ পরিশোধের নোটিশ পেতে থাকেন। তাঁরা সবাই দিনমজুর, ভূমিহীন ও অশিক্ষিত। ব্যাংকের নোটিশে তাঁদের নামে ৬ কোটি থেকে ১৩ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দেখানো হয়। অথচ এঁদের কেউ কোনো ব্যাংক হিসাব পর্যন্ত খুলেননি।

করোনাকালে স্থানীয় দালালেরা আর্থিক ও খাদ্যসহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে। পরে চট্টগ্রামের পটিয়া সাবরেজিস্ট্রি অফিসের পাশে একটি দোকানে নিয়ে গিয়ে ২০-৩০ হাজার টাকা দিয়ে ইংরেজিতে লেখা নথিতে স্বাক্ষর ও টিপসই নেওয়া হয়। সেই নথিতেই তাঁদের নামে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে ইউসিবি ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়।

বান্দরবানের হলদ্যাশিয়া গ্রামের দিনমজুর মোহাম্মদ আয়ুবের নামে নেওয়া হয়েছে ৬ কোটি ১২ লাখ টাকার ঋণ। তিনি বলেন, জীবনে এক লাখ টাকাও দেখিনি, অথচ আমার নামে ব্যাংকের নোটিশ আসছে কোটি টাকায়। একই গ্রামের ফরিদুল আলমের নামে নেওয়া হয়েছে ১০ কোটি ৮২ লাখ টাকা। নোটিশে তাঁকে ইউনিক এন্টারপ্রাইজ-এর মালিক দেখানো হয়, অথচ তিনি বাঁশের বেড়া বানিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।

রামুর ঈদগড়ের নুরুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী মায়মুনা আক্তারের নামে ঋণ দেখানো হয়েছে ১৩ কোটি টাকার। তাঁদেরও কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নেই। নুরুল ইসলাম বলেন, অর্থসহায়তার কথা বলে এনআইডি নিয়েছিল। এখন বুঝতে পারছি প্রতারণার শিকার হয়েছি।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, এসব মানুষ এখন ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন। ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম বলেন, দিনমজুররা ইউপি অফিসে এসে কাঁদছে। তারা জানেই না, কিভাবে ব্যাংকের গ্রাহক হলো।

 জানা গেছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ইউসিবি ব্যাংক ছিল সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর পরিবারের নিয়ন্ত্রণে। তাঁর স্ত্রী রুখমিলা জামান ছিলেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং ছোট ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনি নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান। তাঁদের নির্দেশেই নামে-বেনামে প্রতিষ্ঠান খুলে ঋণ অনুমোদন করা হতো। ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা এই জালিয়াতির সহযোগী ছিলেন।

পটিয়া ও আশপাশের এলাকায় বসবাসকারী মোস্তাফিজুর রহমান, মো. শাহজাহান ও নুরুল আনোয়ার নামের তিন ব্যক্তি পরিবারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তাঁরা দালাল হিসেবে হতদরিদ্রদের কাছ থেকে এনআইডি সংগ্রহের দায়িত্বে ছিলেন। এখন সবাই আত্মগোপনে।

সরকার পরিবর্তনের পর থেকে সাইফুজ্জামান পরিবার ও তাঁদের ঘনিষ্ঠ ব্যাংক কর্মকর্তারা পলাতক। ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্যে পরিবারটির কিছু সম্পদ জব্দ করা হয়েছে বলে  খবর পাওয়া গেছে।

ইউসিবি ব্যাংকের প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা জীশান কিংশুক হক জানান, এই অনিয়মগুলো ঘটেছে পূর্ববর্তী পরিচালনা পর্ষদের সময়ে। বর্তমান কর্তৃপক্ষ আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে যাঁদের নামে ঋণ নেওয়া হয়েছে, তাঁরা যদি সামান্য টাকাও পেয়ে থাকেন, আইন তাঁদেরও ছাড় দেবে না।

এই ঘটনার পর চট্টগ্রাম অঞ্চলে ব্যাংকিং খাতের ওপর নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। দিনমজুরদের নামে শত কোটি টাকার ঋণ কীভাবে অনুমোদন পেল, তার ব্যাখ্যা দিতে এখন হিমশিম খাচ্ছে ইউসিবি। এদিকে পাহাড়ের দরিদ্র গ্রামগুলোয় আতঙ্ক আর অবিশ্বাস, মানুষ বলছে, এখন কেউ সাহায্যের কথা বললেও ভয় লাগে।