তার প্রাণবন্ত উপস্থিতি ও উচ্ছল হাসি শুটিং স্পটের প্রাণ

- আপডেট সময় : ০৮:৩৩:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ২৯২ বার পড়া হয়েছে
অনিরুদ্ধ
অন্ধ বাবার হাত ধরে পথ চলা বছর দশকের ফুটফুটে মেয়েটির চোখে মুখে সফলতার হাত ছানি। এই বয়সের মেয়েটিই কিনা অন্ধ বাবার জীবনের একমাত্র ভরসা। বাবার দুঃখ ভুলিয়ে দেবার মন্ত্রে দীক্ষিত মেয়েটি অবশেষে সফলতার সড়কে পা রাখে। তার প্রাণবন্ত হাসি আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। গোটা শুটিং স্পটের প্রাণসঞ্চার করে চলেন তিনি । সহশিল্পীদের বড়ই আপন প্রতিথযশা এই অভিনয় শিল্পী।
মাত্র দশ বছর বয়সে থিয়েটারের সদস্য হয়ে মঞ্চে অভিনয় শুরু। কাজের গুণে মানুষের হ্রদ মন্দিরে স্থান করে নিয়েছেন। কিন্তু স্কুল পড়ুয়া বাবা হারা মেয়েটি চলাচলে সমস্যার প্রধান উৎস হয়ে ওঠে বখাটেদের উৎপাত। সমস্যার সমাধান হিসাবে বাঙালি সমাজে একটিই পথ বিয়ে। অজ্ঞতা তাই হলো, ষষ্ঠ শ্রেণির মেয়েটিকে বসতে হলো বিয়ের পিঁড়িতে। তবে পরিবারের তরফে কঠোর শর্ত ছিল, উচ্চমাধ্যমিক পাশের পর অনুষ্ঠান করে মেয়েকে তুলে দেওয়া হবে।

এ পর্যন্ত বলে থামলেন সময়ের আলোচিত অভিনয় শিল্পী সাবিনা রনি। তারপর খুলে দিলেন স্মৃতি জানালা। ঐতিহাসিক ভাওয়াল রাজার ইতিহাস আমাদের জানা। রাজা বেচে আছেন চলচ্চিত্র, নাটক, গল্প আর ইতিহাসে। রাজার বিশাল এলাকা। কালের স্বাক্ষী হয়ে আছে ভাওয়াল রাজবাড়ী। রাজবাড়ি স্টেটের বহু সম্পত্তি এখন বিভিন্ন জন লিজ নিয়ে বসবাস করছেন। রাজাদের জায়গায় গড়ে ওঠেছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে শুরু করে সব কিছু রয়েছে জনকল্যাণে।
রাজবাড়ির ছাদে মহড়া হতো ভাওয়াল থিয়েটারের। রনির বড় ভাইও সংস্কৃতি ভুবনের বাসিন্দা। তার হাত ধরেই ভাওয়াল থিয়েটারের মহড়ায় আসা। বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গের পরিচিত মুখ এজাজ আহমেদ। পেশায় একজন চিকিৎসক। ৯১ সালে ঢাকার অদূরে গাজীপুরে তার কর্মস্থল। তিনিও ভাওয়াল থিয়েটারের সঙ্গে জড়িত। রাজবাড়ির ছাদে মহাপুরুষ নাটকের মহড়ায় একদিন ঘটে যায় রনির জীবনের মোড় নেওয়া ঘটনা।

অভিনেত্রী জানালেন, এজাজ ভাই বড় ভাইকে বললেন, রনিকে আমার প্রয়োজন। ওর জন্য একটা চমৎকার চরিত্র রয়েছে। সংস্কৃতিপ্রেমী ভাই সঙ্গে সঙ্গে এজাজ ভাইকে বললেন অবশ্যই করবে। সেই মহাকাল পুরুষ নাটকের মাধ্যমে অভিনয় জগতে পা রাখা রনি আজ প্রতিথযশা অভিনয় শিল্পী হিসাবে বিরামহীন কাজ করে চলেছেন।
বিভিন্ন টেলিভিশনে চলছে একাধিক ধারাবাহিক নাটক। এছাড়াও বিশেষ নাটকে রনির উপস্থিতটা নিয়মে দাঁড়িয়েছে। অভিনয় জীবন তার ব্যস্ত হয়ে ওঠার কারিগর অভিনেতা ডা. এজাজ আহমেদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। কারণ তিনিই মাত্র দশ বছর বয়সে রনিকে হাত ধরে অভিনয়ের সড়কে তুলে দিয়েছেন। সেই পথ চলা শুরু যা আজ ব্যস্ততম জীবনের অংশ হয়ে গিয়েছে। অভিনয় তার একমাত্র সাধনায় পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি সমাজসেবায় নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছেন। রনির কথায় মানব সেবাই ধর্ম, কর্মই জীবন।

সাবিনা রনির ভাবনায় অভিনয় এমন এক শিল্প যা কিনা সমাজ গঠনে অন্যতম সহায়ক। কারণ নাটক, সিনেমা ছাড়াও বিভিন্ন শর্ট ফিল্ম এবং তথ্যচিত্র ইত্যাদি সমাজ গঠনে বড় ভূমিকা পালন করে থাকে।
সাবিনা রনি একটি সংস্কৃতি পরিবারে সদস্য।
সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কিছু করার ভাবনাটা অভিনয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বাস্তবেও পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য তার মন কাঁদে। সাধ্যানুযায়ী সহযোগিতার হাত বাড়ান। যে কোন সহশিল্পীর সমস্যায়ও এগিয়ে যান এই শিল্পী। তার মানবিক গুণের জন্যই তিনি আমাদের সমাজের শুভবোধের সারথি।