খুলনার দাকোপে বেড়িবাঁধ ভেঙে ৮ গ্রাম প্লাবিত সংকট, ক্ষতির শতকোটি টাকা

- আপডেট সময় : ০১:০৫:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫ ১৩৩ বার পড়া হয়েছে
খুলনার দাকোপ উপজেলার তিলডাঙ্গা ইউনিয়নে ঢাকী নদীর পানির তোড়ে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধে দুর্ভোগে পড়েছেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ। টানা দুই দিন জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয় আটটি গ্রাম। এতে একদিকে যেমন খাদ্য ও সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে, অন্যদিকে পানির নিচে তলিয়ে গেছে শত শত বিঘা জমির ধান, মাছের ঘের ও সবজির ক্ষেত। ক্ষতির পরিমাণ প্রাথমিকভাবে শতকোটি টাকার কাছাকাছি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত ৭ অক্টোবর রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের বটবুনিয়া এলাকায় প্রায় ১৫০ ফুট বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। পরদিন রাতেই পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতায় বাঁধটি অস্থায়ীভাবে আটকানো হয়। কিন্তু জোয়ারের প্রবল স্রোত ও মাটির স্বল্পতার কারণে ৮ অক্টোবর রাতেই বাঁধটি আবারও ভেঙে যায়। ফলে উত্তর কামিনীবাসিয়া, বটবুনিয়া, নিশানখালী, আড়াখালী, দক্ষিণ কামিনীবাসিয়া, ভাদলা বুনিয়া, মশামারী, গড়খালী ও কাঁকড়া বুনিয়া এলাকা প্লাবিত হয়।
হঠাৎ জোয়ারের পানিতে এসব গ্রামের ঘরবাড়ি, স্কুল, মসজিদ ও বাজার তলিয়ে যায়। অনেকেই গৃহহারা হয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ঘরে পানি ঢুকে পড়লেও সেখানেই পানিবন্দি জীবনযাপন করছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ৩০২ বিঘা জমির আমন ধান পানিতে ডুবে গেছে, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ ও শাকসবজির ক্ষেত। কৃষকরা বলছেন, বছরের একমাত্র ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তারা এখন দিশেহারা।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, বছরের পর বছর বেড়িবাঁধ মেরামত না করায় ও টেকসইভাবে নির্মাণ না হওয়ায় প্রতি বছরই এমন ভাঙনের মুখে পড়তে হয়। এবারের ভাঙনে পানিবন্দি মানুষজন এখন সবচেয়ে বেশি ভুগছেন খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে। অনেক পরিবার এখনো পর্যাপ্ত ত্রাণ পায়নি।

বাঁধ মেরামতের কাজ তদারকি করছেন দাকোপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিজে। তিন দফা চেষ্টার পর ৯ অক্টোবর সকালে বাঁধটি আবারও আটকানো সম্ভব হয়। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম জানান, “স্রোতের তীব্রতা ও মাটির স্বল্পতার কারণে প্রথমে কাজ ব্যাহত হয়েছিল। কিন্তু গত রাতে আমরা বাঁধ আটকাতে সক্ষম হয়েছি।”
দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে খুলনার জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি পানিবন্দি মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাদের দুর্ভোগের কথা শোনেন এবং শুকনো খাবার—চিড়া, গুড়, চাল, ডাল, তেল, লবণ ও মসলাসহ ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন। জেলা প্রশাসক জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি হচ্ছে এবং সরকারি সহায়তা দ্রুত পৌঁছে দেওয়া হবে।
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, “বাঁধ আটকানোর ফলে অনেক ধান রক্ষা পেয়েছে। তবে অন্তত ১৫ বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা দিতে আঙিনায় সবজি চাষের জন্য বীজ ও প্রণোদনা দেওয়া হবে।”
বর্তমানে ১৬০ পরিবারের মধ্যে শুকনো খাবার এবং ১২০ পরিবারের মধ্যে চাল, ডাল, তেল, লবণ ও মসলার প্যাকেট বিতরণ করেছে উপজেলা প্রশাসন। তবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দাবি, এত বিশাল জনপদের তুলনায় এই ত্রাণ একেবারেই অপ্রতুল।
পানি কমলেও আশঙ্কা রয়ে গেছে নতুন ভাঙনের। স্থানীয়দের মতে, টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ না করলে এ অঞ্চলের মানুষ প্রতি বছরই নদীর ভাঙন ও জোয়ারে জীবিকা হারাবে। এখন তাদের একটাই চাওয়া—একটি স্থায়ী বাঁধ, যাতে পরের বছর আর এমন দুর্ভোগে পড়তে না হয়।