উপদেষ্টাদের অনেকেই নিজেদের সেফ এক্সিটের কথা ভাবছেন: নাহিদ ইসলাম

- আপডেট সময় : ০৪:১৪:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫ ৪৫ বার পড়া হয়েছে
অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের অনেক সদস্য এখন নিজেদের ‘সেফ এক্সিট’ বা নিরাপদ প্রস্থান নিশ্চিত করার চিন্তায় ব্যস্ত। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ইতোমধ্যেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
সম্প্রতি বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলাম বলেন, “উপদেষ্টাদের অনেককেই বিশ্বাস করাটা ছিল আমাদের বড় ভুল। তাদের প্রতি আস্থা রেখে আমরা প্রতারিত হয়েছি। অনেকে গণঅভ্যুত্থানের চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, আবার কেউ কেউ নিজেদের আখের গুছিয়েছেন। সময় আসলে তাদের নামও প্রকাশ করা হবে।”
তিনি বলেন, “আমাদের বিশ্বাস ছিল, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা ও রাজনৈতিক দলগুলো গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ধরে রাখবেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, অনেকে সেই সুযোগে নিজেদের অবস্থান মজবুত করেছেন। যারা গণঅভ্যুত্থানের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করার কথা বলেছিলেন, তাদের অনেকেই এখন নানা সমীকরণে ব্যস্ত।”
নাহিদ ইসলামের অভিযোগ, “উপদেষ্টা পরিষদের অনেকে এখন নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে হিসাব-নিকাশ করছেন। কেউ কেউ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ শুরু করেছেন। তারা নিজেদের সেফ এক্সিটের কথা ভাবছেন। অথচ যদি তারা বিশ্বাস করতেন যে, তাদের নিয়োগদাতা গণঅভ্যুত্থানের শক্তি এবং এ দেশের সাধারণ মানুষ—তাহলে এ ধরনের বিচ্যুতি হতো না।”
তিনি বলেন, “যারা উপদেষ্টা হয়েছেন, তাদের অনেককেই বিশ্বাস করাটা আমাদের ভুল ছিল। আমাদের উচিত ছিল ছাত্র নেতৃত্বকেই শক্তিশালী করা। সরকারে গেলে সম্মিলিতভাবে যাওয়ার পরিকল্পনা করা দরকার ছিল। কিন্তু নাগরিক সমাজ বা তথাকথিত রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপর অতিরিক্ত আস্থা রেখে আমরা প্রতারিত হয়েছি।”
উপদেষ্টা হিসেবে ছাত্রনেতাদের অংশগ্রহণের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা কেউই সরকারের উপদেষ্টা হতে চাইনি। আমাদের আহ্বান ছিল জাতীয় সরকার গঠনের। যদি রাজনৈতিক দলগুলো সেই প্রস্তাবে সম্মত হতো, তাহলে ছাত্রদের এই দায়িত্ব নিতে হতো না। সময়ের বাস্তবতায় এ দায়িত্ব নিতে হয়েছে। কিন্তু আমরা দেখেছি, সরকারে যোগ দেওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন পক্ষ থেকে প্রতিবিপ্লবের চেষ্টা শুরু হয়। প্রথম ছয় মাস এ চেষ্টাই চলেছে, এখনও তার কিছুটা প্রভাব আছে।”
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়কার ঘটনাবলী স্মরণ করে নাহিদ বলেন, “৫ আগস্ট ক্যান্টনমেন্টে সেজদা দিয়েছেন রাজনৈতিক নেতারা, ছাত্ররা নয়।” তিনি মনে করেন, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের দিয়ে সরকার গঠন করাটা ছিল একটি কৌশলগত ভুল সিদ্ধান্ত। “যদি শুরুতেই জাতীয় সরকার গঠন করা হতো, তাহলে আজকের আক্ষেপ তৈরি হতো না,” মন্তব্য করেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “যে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই সরকার এসেছে, সেই আন্দোলনের প্রাণ ছিল ছাত্র-জনতা। কিন্তু সেই শক্তির প্রতিনিধিত্ব সরকারে সীমিত রাখা হয়েছে। এর ফলেই গণঅভ্যুত্থানের মূল চেতনা দুর্বল হয়েছে। অনেকে নিজেদের পদ ও প্রভাব ধরে রাখার রাজনীতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের মনে রাখতে হবে, এই সরকারের নিয়োগদাতা সাধারণ মানুষ। যারা রাজপথে রক্ত দিয়েছে, যারা শহীদ হয়েছে, তাদের আত্মত্যাগই এই পরিবর্তনের ভিত্তি। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে, উপদেষ্টাদের অনেকেই সেই মানুষদের ভুলে গেছেন। নিজেদের নিরাপদ প্রস্থান নিশ্চিত করতেই তারা নানা মহলে দৌড়ঝাঁপ করছেন।”
২০২৫ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। সেই সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা নাহিদ ইসলাম তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।
তবে পরবর্তীতে নানা মতপার্থক্য ও নীতিগত অসঙ্গতির কারণে তিনি ২৫ ফেব্রুয়ারি উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের পর তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের উদ্যোগে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর আহ্বায়কের দায়িত্ব নেন, যা বর্তমানে তার নেতৃত্বে সংগঠিত হচ্ছে।
এদিকে নাহিদের পদত্যাগের পর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় আরেক ছাত্র প্রতিনিধি মাহফুজ আলমকে। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন মাহফুজ আলম ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
নাহিদ ইসলামের মতে, “গণঅভ্যুত্থান ছিল জনগণের আন্দোলন। কিন্তু সেই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য পূরণে এখনো অনেক বাধা রয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের অনেকেই যদি নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার না করেন, তাহলে জনগণই একদিন তাদের বিচারের মুখোমুখি করবে।”