শত বছরের পুরনো নদীপথ ফেরাতে খনন কাজের মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন শেখ হাসিনা সরকার
- আপডেট সময় : ০৪:০৯:১৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ নভেম্বর ২০২০ ৪৭৬ বার পড়া হয়েছে
শেখ হাসিনার দূরদর্শিতার ফলে করোনা মহামারিকালেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অর্জন থেমে থাকেনি। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বৃদ্ধি পেয়ে ৪১ বিলিয়ন হয়েছে। দেশে কোন গৃহহিন থাকবেনা বলেও ডাক দিয়েছেন শেখ হাসিনা। নদী খননের মাধ্যমে অভ্যন্তরীন নয়, আন্তর্জাতিক জলপথেও নৌ-বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে। নৌবাণিজ্য আলো ছড়াচ্ছে। এতে করে কর্মসংস্থান হচ্ছে। হঠানো হচ্ছে বেকারত্ব।
আমিনুল হক, ঢাকা
ইতিহাস ঐতিহ্যকে সঙ্গী করে বাংলার আমজনতার জন্য ঘরসংসার ফেলে রাজপথে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন তিনি। কুপি-হ্যারিকেনের দেশের খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্যদেবতা হিসেবে আবির্ভাব হয়েছিলো তাঁর। বড়ই আপন ছিলো বাংলার নদ-নদী খালবিল। নদী বাঁচনোর ডাক দিয়েছিলেন বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গববন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে নদীপথের নব্যতা ধরে রাখতে একাধিক ড্রেজার ক্রয় করেন। তিনি বলতেন, আমার কৃষক ভাইরা ফসল ফলায়, তা যদী নদীপথে পণ্যপরিবহন করে, তাহলে খরচ কমবে। তারা অর্থের মুখ দেখবে। তাই নৌপথ সচলে বঙ্গবন্ধুর আগ্রহের কোন কমতি ছিলো না। বঙ্গবন্ধুর পর শেখ হাসিনার দূরদর্শিতায় ফের জেগে ওঠেছে বাংলার জলপথ। ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খননের মহাপরিকল্পর কাজ হাতে নিয়েছেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রহ করা ৭টি ড্রেজারের স্থানে বাংলাদেশ আজ শ’ শ’ আধুনিক ড্রেজারের মালিক। সবটাই এসেছে শেখ হাসিনার হাত ধরে। শুধু তাই নয়, বিশ্বকে তাক লাগানো নৌবন্দর এবং জলপথ সচল রাখতে দেশজুড়ে শত বছরের পুরনো নদীর গতিপথ ফেরাতে খনন মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন শেখ হাসিনা। এই মহাকর্মযজ্ঞে বিশ্বস্ত কর্মী হিসেবে নিরলস দায়িত্ব পালন করে চলেছেন, বাংলাদেশের নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
একটি কথা অনায়াসেই উল্লেখ যায়, ‘এই বাংলার আকাশ বাতাস, সাগর, গিরি ও নদী/ডাকিছে তোমায় বঙ্গবন্ধু, ফিরিয়া আসিতে যদি/ হেরিতে এখনও মানব হৃদয়ে তোমার আসন পাতা/ এখনও মানুষ স্মরিছে তোমারে, মাতা পিতা বোন ভ্রাতা।’ ‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা/গৌরী মেঘনা বহমান/ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান..’। নদী মাতৃক আবহমান বাংলাদেশ। এখানে আজও দেখা মেলে শেষ বিকালে পালতোলা নৌকায় বাড়ি ফেরার পথে দরদী সুরে গান গাওয়ার দৃশ্য। এটিইতো আবহমান বাংলার শ্বাশতচিত্র। যাকে জীবন দিয়ে ভালোবেসেছিলেন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই ধারাবাহিকতা রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গিকার ‘শত বছরের পুরনো নদীর গতি পথ ফিরিয়ে আনা’।
বাংলাদেশে বৃহত্তর ময়মনসিংহের শেরপুর জেলা ওপর দিয়ে প্রবাহিত পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ। এরই একটা বিশাল অংশের ড্রেজিং কার্যক্রমের উদ্বোধন করতে এসে হয়তো উল্লেখিত কথাগুলোই অনুরণিত হচ্ছিল, নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিত মাহমুদ চৌধুরীর মনে প্রাণে। শনিবার শেরপুরে ব্রহ্মপুত্র ব্রীজ সংলগ্ন স্থানে এই ড্রেজিং কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন তিনি। এসময় মুজিববর্ষে দেশগড়ার শপথ নিয়ে এলাকাবাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান খালিদ। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র জলপথটি খনন হলে তাতে বারো মাস জল থাকবে। কৃষক তার উৎপাদিত ফসল সাশ্রয়ীমূল্যে সহজেই এপথে পরিবহণ করতে পারবেন।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের তাক লাগানো বর্তমান উন্নয়নের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি আন্তর্জাতিকভাবেই স্বীকৃত। তিনি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশ ও জনগণের জন্য নিরলস কাজ করে চলেছেন। খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনার দূরদর্শিতার ফলে করোনা মহামারিকালেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অর্জন থেমে থাকেনি। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বৃদ্ধি পেয়ে ৪১ বিলিয়ন হয়েছে। দেশে কোন গৃহহিন থাকবেনা বলেও ডাক দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এসময় নৌ-প্রতিমন্ত্রী এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, নদী খননের কারণে যদি জনগণের কোন ক্ষতি হয়ে যায়, সরকার তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দেবে। পুরাতন ব্রম্মপুত্র নৌপথ খননের মাধ্যমে শেরপুর এলাকার বিশেষ করে জামালপুর-শেরপুর জেলার সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জেলার নৌবাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে।
খনন কাজের আওতা হচ্ছে, শেরপুর সদর উপজেলার ব্রম্মপুত্র ব্রীজ হতে জঙ্গলদীচর হয়ে ভাটিপাড়াচর পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার জলপথের ৫৫.৭৮ লক্ষ ঘনমিটার ক্যাপিটাল ড্রেজিং এবং ৪১.৮৪ লক্ষ ঘনমিটার মেইনটেনেন্স ড্রেজিং করতে ১৬৯ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয় হবে। যার কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালের জুন মাসে। তাতে করে সারাবছর পণ্য ও যাত্রীবাহী নৌযান নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ থাকবে। পাশাপাশি কৃষি, সেচ ও মৎস্য চাষে সহায়ক হবে। নৌ-প্রতিমন্ত্রী বলেন, নাব্যতা রক্ষা ছাড়াও অভ্যন্তরীণ নৌপথ পুনরুদ্ধারে ‘পুরাতন ব্রম্মপুত্র, ধরলা, তুলাই এবং পুনর্ভবা নদীর নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার’ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। উক্ত প্রকল্পের আওতায় শেরপুর জেলার পুরাতন ব্রম্মপুত্র নদের ১৮ কিলোমিটার ড্রেজিং করা হচ্ছে।
এসময় খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নদী খননের মাধ্যমে অভ্যন্তরীন নয়, আন্তর্জাতিক জলপথেও নৌ-বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে। নৌবাণিজ্য আলো ছড়াচ্ছে। এতে করে কর্মসংস্থান হচ্ছে। হঠানো হচ্ছে বেকারত্ব। পাশাপাশি বৃদ্ধি পাচ্ছে কৃষি নির্ভর কার্যক্রম। সাশ্রয়ী মূল্যে যাত্রী এবং পণ্য পরিবহন সহজ হচ্ছে। যার সবটাই হচ্ছে এসেছে শেখ হাসিনার হাত ধরে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমোডোর গোলাম সাদেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আতিউর রহমান আতিক, আধিকারীক আনোয়ার খান, নৌ পরিবহন মন্ত্রকের সাবেক সচিব আব্দুস সামাদ, শেরপুর পৌরসভার মেয়র গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লিটন প্রমুখ বক্তব্যে রাখেন।