একস্টেপ ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়ার ‘আমার ভাষা’ সফটওয়্যার ‘বাংলাভাষার ক্ষেত্রে একটি মাইল মাইফ’
- আপডেট সময় : ০২:৪১:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২১ ৩৪৯ বার পড়া হয়েছে
আমিনুল হক, ঢাকা
২০২১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি তারিখটি আরও একটি ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকলো। ৫২’র ভাষা আন্দোলনে পৃথিবীর মধ্যে যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলো, যার পথ বেয়ে ৭১’র সালে স্বাধীনতা অর্জন করে বাংলাদেশ। আজ রক্তঝরানো স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করতে বাঙালিজাতি যখন মহা আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত ঠিক সেই সময়ে আবেগের মাস ‘ভাষা মাসেই’ নজির গড়লো ‘আমার ভাষা’ নামক একটি সফটওয়্যার। এই সফটওয়্যার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ ও রায়গুলি ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করতে সক্ষম। এটি নিঃসন্দেহে বাংলাভাষার ক্ষেত্রে এক নতুন মাইল ফলক হয়ে থাকবে।
বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ‘আমার ভাষা’ নামক অনুবাদ সফটওয়্যার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। একস্টেপ ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়ার এই সফটওয়্যারটি মূলত ‘অনুবাদ’ সফটওয়্যার। যা ভারতে একইভাবে ইংরেজি থেকে বাংলাসহ অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় অনুবাদ করার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই অনুবাদ সফটওয়্যারটিকে ২৬ নভেম্বর ২০১৯ থেকে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট অনুবাদের জন্য ঝটঠঅঝ (সুপ্রিম কোর্ট বিধিক অনুবাদ সফটওয়্যার) হিসেবে ব্যবহার করার নির্দেশ দেয়।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারোয়ার এবং ভারতীয় হাই কমিশনার শ্রী বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে ‘আমার ভাষা’ সফটওয়্যারটি নিয়ে একস্টেপ কর্তৃক নির্মিত একটি ভিডিও প্রদর্শিত হয়।
‘আমার ভাষা’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে ভারতীয় হাই কমিশনার শ্রী বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, ভারতে তৈরি এই অনন্য অনুবাদ সফটওয়্যার ইনস্টলেশনে অংশীদার হতে পেরে এবং শুভেচ্ছাস্বরূপ বিতরণ করতে পেরে ভারত অত্যন্ত সম্মানিত। তিনি আরও বলেন, এই ধরনের সহযোগিতা কেবল ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যেই সম্ভব হতে পারে। কারণ, বাংলা ভারতের অন্যতম স্বীকৃত ভাষা। এছাড়া, ভারত এবং বাংলাদেশের উভয় বিচারিক ব্যবস্থার উৎস, বিধান এবং ভাষা অভিন্ন।
মি. দোরাইস্বামী মহামারীকালীন ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণের জন্য ই-কোর্ট স্থাপনের মতো প্রযুক্তির ব্যবহারে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন। তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন যে, ২০২০ সালের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষভাবে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ও বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের বাংলায় বিচারের রায় প্রদানের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেছিলেন। তিনি একস্টেপ ফাউন্ডেশনের নির্দেশনা এবং প্রযুক্তিগত সহায়তায়, বাংলাদেশের মুক্তির ৫০তম বার্ষিকীতে এবং একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তিনদিন আগে এই সফটওয়্যারটি চালুর বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।
আইনমন্ত্রী বলেন
‘আমার ভাষা’ সফটওয়্যারের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে ইংরেজিতে প্রদত্ত আদালতের রায়গুলো সহজেই বাংলায় অনুবাদ করা যাবে। ফলে বিচারপ্রার্থী এবং সাধারণ জনগণের কাছে আদালতের রায়গুলো আরও সহজবোধ্য হবে। বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টে ভারতের সহযোগিতায় ইংরেজি থেকে বাংলা ভাষায় অনুবাদ সংক্রান্ত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সফটওয়্যার ‘আমার ভাষা’ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। আইনমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে ইংরেজি ভাষায় প্রদত্ত রায় বাংলা ভাষায় অনুবাদের এই প্রযুক্তিগত সহযোগিতা এদেশের বিচারপ্রার্থী মানুষের একসেস টু জাস্টিস নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মন্ত্রী বলেন, এতোদিনে বাংলাদেশের সকল আদালতের কার্যক্রম বাংলা ভাষাতেই হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিলো। প্রথম পর্যায়ে কেবল উচ্চ আদালতের রায়সমূহ বাংলায় আনুবাদ করার ক্ষেত্রে ‘আমার ভাষা’ সফটওয়্যারটি ব্যবহার করা শুরু হলেও পর্যায়ক্রমে নিম্ন আদালতের রায়ও বাংলায় অনুবাদ করার ক্ষেত্রে এই সফটওয়্যার ব্যবহার করা হবে।