জুলাই সনদ: বাংলাদেশের ইতিহাস, আন্দোলন-গণতন্ত্রের নতুন মাইলফলক

- আপডেট সময় : ০৭:৪৮:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫ ২৬ বার পড়া হয়েছে
সনদের প্রারম্ভে স্থান পেয়েছে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান। এছাড়া ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও ১৯৭৫ সালে সাংবিধানিক সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ও গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরা হয়েছে।
আমিনুল হক ভূইয়া, ঢাকা
দীর্ঘ আট মাসের সংলাপ ও মতৈক্য প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে চূড়ান্ত হওয়া ঐতিহাসিক জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ স্বাক্ষরিত হলো। শুক্রবার বিকেল নাগাদ ঢাকার জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে সনদ স্বাক্ষরিত হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষরের পর প্রধান উপদেষ্টা এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। স্বাক্ষর অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে দিনভর উত্তেজনা, মতভিন্নতা এবং জুলাই যোদ্ধাদের বিক্ষোভের কারণে এক মিশ্র পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ও গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ধারাবাহিকতা তুলে ধরা হয়েছে জুলাই সনদে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানা গেছে, ৪০ পৃষ্ঠার এই নথিতে স্বাধীনতা-পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনাবলির বিশদ বিবরণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সনদের প্রারম্ভে স্থান পেয়েছে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান। এছাড়া ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও ১৯৭৫ সালে সাংবিধানিক সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ও গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরা হয়েছে।
নথিতে বলা হয়েছে, ১৯৭৮ সালে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তনের মাধ্যমে ১৯৭৯ সালের নির্বাচনের পর দেশ পুনরায় গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরলেও সেই যাত্রা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত নির্দিষ্ট ব্যক্তি, পরিবার ও গোষ্ঠীর পক্ষে স্বৈরাচারী অনুশীলন এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের রাজনীতিকরণকে সনদে কঠোরভাবে সমালোচনা করা হয়েছে।

সনদে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন নির্বাচনব্যবস্থাকে দুর্বল করেছে, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনকে প্রভাবিত করেছে এবং দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। একই সঙ্গে সনদে প্রতিফলিত হয়েছে গত ১৬ বছরের ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাস, যার মধ্যে রয়েছে ২০১৮ সালের সড়ক নিরাপত্তা আন্দোলন, কোটা সংস্কার আন্দোলন, ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণঅভ্যুত্থান।

এই সনদের শেষ অংশে সাত দফা প্রতিশ্রুতি উল্লেখ করে রাজনৈতিক দলগুলোকে গণতান্ত্রিক নীতি, জাতীয় ঐকমত্য এবং জুলাই বিদ্রোহে প্রকাশিত জনগণের ইচ্ছাকে সমুন্নত রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সনদ স্বাক্ষরের আগেই আজ সকালে সংসদ ভবন এলাকায় জুলাই যোদ্ধাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সনদ প্রণয়নে নিজেদের অবমূল্যায়ন ও আইনি ভিত্তি না থাকার অভিযোগ তুলে তারা মূল মঞ্চের সামনে অবস্থান নিলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। এই সংঘর্ষে আহত হন বেশ কয়েকজন যোদ্ধা।