ঢাকা ০৮:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
জুলাই সনদ:  বাংলাদেশের ইতিহাস, আন্দোলন-গণতন্ত্রের নতুন মাইলফলক জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষরের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু: ড. ইউনূস ত্রিপুরায় তিন বাংলাদেশিকে পিটিয়ে হত্যায় ঘটনায় ঢাকার তীব্র নিন্দা জুয়েলার্স লুটের পেছনে পেশাদার চক্র, গোয়েন্দা জালে ৪ ভিসতা-ডিআরইউ ক্রীড়া উৎসব: নারী লুডুতে নাহিদ শিউলী চ্যাম্পিয়ন লালনের জীবনদর্শন ও সঙ্গীত ভারত-বাংলাদেশের হাজার বছরের সাংস্কৃতিক বন্ধন: প্রণয় ভার্মা তিন শর্ত না মানলে জুলাই সনদে সই নয়: এনসিপি ভারত-সমর্থিত ৩৪ সন্ত্রাসীকে হত্যা করলো পাকিস্তান চট্টগ্রাম ইপিজেডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, নিয়ন্ত্রণে ১৭ ইউনিট মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৫: আইনের কঠোর প্রয়োগে ব্যাপক সাফল্য

Kazi Nazrul : ‘চেতনায় নজরুল’

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:৪১:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ মে ২০২২ ২৬৭ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা

এ. এইচ. ঋদ্ধিমান, ঢাকা

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মবার্ষিকীতে গোটা জাতির শ্রদ্ধা। বাংলাদেশের কুমিল্লা জাতীয় কবির স্মৃতিধন্য শহর। সেখানেই জাতীয়ভাবে তিনব্যাপী ব্যাপক অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। এবছর বাড়তি পাওয়ানা হচ্ছে, বিদ্রোহী কবিতার শতবর্ষ পূর্ণতা। ১৯২২ সালের ১২ আগস্ট বিদ্রোহী কবিতাটি ‘ধূমকেতু পত্রিকা’ প্রকাশিত হলে ভারতের সাহিত্য সমাজে খ্যাতিলাভ করে। এই কবিতায় নজরুল নিজেকে বর্ণনা করেন—

“আমি বঞ্চিত ব্যথা পথবাসী চির গৃহহারা যত পথিকের,

আমি অবমানিতের মরম বেদনা, বিষ জ্বালা, চির লাঞ্ছিত বুকে গতি ফের

আমি অভিমানী চির ক্ষুব্ধ হিয়ার কাতরতা, ব্যথা সুনিবিড়,

চিত চুম্বন-চোর-কম্পন আমি থর-থর-থর প্রথম প্রকাশ কুমারীর!

আমি গোপন প্রিয়ার চকিত চাহনি, ছল করে দেখা অনুখন,

আমি চপল মেয়ের ভালবাসা তার কাকন চুড়ির কন-কন।

মহা-বিদ্রোহী রণক্লান্ত

আমি সেই দিন হব শান্ত।

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না,

অত্যাচারীর খড়ুগ কৃপাণ ভীম রণ, ভূমে রণিবে না-

বিদ্রোহী রণক্লান্ত

আমি সেই দিন হব শান্ত।

……………………..

আমি চির বিদ্রোহী বীর

বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির উন্নত শির!”

কবির সঙ্গে বাংলাদেশের জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান  ছবি সংগ্রহ

১৯২০-এর দশকে অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলন এক সময় ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। এর পরপর স্বরাজ গঠনে যে সশস্ত্র বিপ্লববাদের আবির্ভাব ঘটে তাতে ধূমকেতু পত্রিকার বিশেষ অবদান ছিল। এই পত্রিকাকে আশীর্বাদ করে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন,

“কাজী নজরুল ইসলাম কল্যাণীয়েষু, আয় চলে আয়রে ধূমকেতু।

আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু, দুর্দিনের এই দুর্গশিরে উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেত”

মানুষের চেতনা জাগিয়েই সাহিত্যের জগতে পা রাখেন কবি নজরুল। সাহিত্যকর্ম ও গানের নানা শাখায় তার পদচারণা ছিলো। চির যৌবনের কবি, প্রেম এবং দ্রোহ যার লেখনীতে মিলেছে এক সুরে, সেই ভালোবাসা কবি, বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী জমকালো আয়োজনে জাতীয়ভাবে পালিত হচ্ছে।

কবির স্মৃতিধন্য সাংস্কৃতিক শহর কুমিল্লার বীরচন্দ্র গণপাঠাগার মাঠে সংস্কৃতি মন্ত্রকের সহায়তায় জেলা প্রশাসন তিনব্যাপী বর্ণঢ্য আয়োজনে সর্বস্তরের মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়।
আয়োজনের উদ্বোধনী দিনে ‘শত কণ্ঠে বিদ্রোহী কবিতা’ পাঠ করা হবে।

অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ কবি নজরুল। তার লেখা সাহিত্য, গান জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তার সৃষ্টি কবিতা ও গান যুগে যুগে মানুষকে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখাচ্ছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণার উৎস ছিল নজরুলের গান ও কবিতা।

জাতীয় কবির ১২৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে জাতীয়ভাবে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

১৯৭২ সালের ২৪ মে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে কবিকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। বাংলাদেশ সরকার কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন এবং জাতীয় কবির মর্যাদা দেয়। তার জীবনকাল ৭৮ বছর হলেও ১৯৪২ সালের জুলাই মাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৪ বছর অসহনীয় নির্বাক জীবন কাটিয়েছেন।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

Kazi Nazrul : ‘চেতনায় নজরুল’

আপডেট সময় : ১১:৪১:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ মে ২০২২

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা

এ. এইচ. ঋদ্ধিমান, ঢাকা

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মবার্ষিকীতে গোটা জাতির শ্রদ্ধা। বাংলাদেশের কুমিল্লা জাতীয় কবির স্মৃতিধন্য শহর। সেখানেই জাতীয়ভাবে তিনব্যাপী ব্যাপক অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। এবছর বাড়তি পাওয়ানা হচ্ছে, বিদ্রোহী কবিতার শতবর্ষ পূর্ণতা। ১৯২২ সালের ১২ আগস্ট বিদ্রোহী কবিতাটি ‘ধূমকেতু পত্রিকা’ প্রকাশিত হলে ভারতের সাহিত্য সমাজে খ্যাতিলাভ করে। এই কবিতায় নজরুল নিজেকে বর্ণনা করেন—

“আমি বঞ্চিত ব্যথা পথবাসী চির গৃহহারা যত পথিকের,

আমি অবমানিতের মরম বেদনা, বিষ জ্বালা, চির লাঞ্ছিত বুকে গতি ফের

আমি অভিমানী চির ক্ষুব্ধ হিয়ার কাতরতা, ব্যথা সুনিবিড়,

চিত চুম্বন-চোর-কম্পন আমি থর-থর-থর প্রথম প্রকাশ কুমারীর!

আমি গোপন প্রিয়ার চকিত চাহনি, ছল করে দেখা অনুখন,

আমি চপল মেয়ের ভালবাসা তার কাকন চুড়ির কন-কন।

মহা-বিদ্রোহী রণক্লান্ত

আমি সেই দিন হব শান্ত।

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না,

অত্যাচারীর খড়ুগ কৃপাণ ভীম রণ, ভূমে রণিবে না-

বিদ্রোহী রণক্লান্ত

আমি সেই দিন হব শান্ত।

……………………..

আমি চির বিদ্রোহী বীর

বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির উন্নত শির!”

কবির সঙ্গে বাংলাদেশের জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান  ছবি সংগ্রহ

১৯২০-এর দশকে অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলন এক সময় ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। এর পরপর স্বরাজ গঠনে যে সশস্ত্র বিপ্লববাদের আবির্ভাব ঘটে তাতে ধূমকেতু পত্রিকার বিশেষ অবদান ছিল। এই পত্রিকাকে আশীর্বাদ করে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন,

“কাজী নজরুল ইসলাম কল্যাণীয়েষু, আয় চলে আয়রে ধূমকেতু।

আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু, দুর্দিনের এই দুর্গশিরে উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেত”

মানুষের চেতনা জাগিয়েই সাহিত্যের জগতে পা রাখেন কবি নজরুল। সাহিত্যকর্ম ও গানের নানা শাখায় তার পদচারণা ছিলো। চির যৌবনের কবি, প্রেম এবং দ্রোহ যার লেখনীতে মিলেছে এক সুরে, সেই ভালোবাসা কবি, বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী জমকালো আয়োজনে জাতীয়ভাবে পালিত হচ্ছে।

কবির স্মৃতিধন্য সাংস্কৃতিক শহর কুমিল্লার বীরচন্দ্র গণপাঠাগার মাঠে সংস্কৃতি মন্ত্রকের সহায়তায় জেলা প্রশাসন তিনব্যাপী বর্ণঢ্য আয়োজনে সর্বস্তরের মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়।
আয়োজনের উদ্বোধনী দিনে ‘শত কণ্ঠে বিদ্রোহী কবিতা’ পাঠ করা হবে।

অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ কবি নজরুল। তার লেখা সাহিত্য, গান জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তার সৃষ্টি কবিতা ও গান যুগে যুগে মানুষকে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখাচ্ছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণার উৎস ছিল নজরুলের গান ও কবিতা।

জাতীয় কবির ১২৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে জাতীয়ভাবে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

১৯৭২ সালের ২৪ মে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে কবিকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। বাংলাদেশ সরকার কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন এবং জাতীয় কবির মর্যাদা দেয়। তার জীবনকাল ৭৮ বছর হলেও ১৯৪২ সালের জুলাই মাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৪ বছর অসহনীয় নির্বাক জীবন কাটিয়েছেন।