Bangladesh-India connectivity network : বাংলাদেশ-ভারত কানেক্টিভিটি নেটওয়ার্ক নৌবাণিজ্য রুখে দিয়েছে নাব্যতাসংকট

- আপডেট সময় : ০৯:১৩:৩৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ মার্চ ২০২২ ৪৯০ বার পড়া হয়েছে
পর্ব-২
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ১০টি প্রোটোকল জলপথ উন্মুক্ত হলেও নাব্যতাসংকটে মুখ থুবড়ে পড়ে অর্থনীতির শঙ্কচিল। অপার সম্ভবনা আটকে যায় জলপথগুলোর গভীরতা তথা নাব্যতাসংকটে।
আমিনুল হক, ঢাকা
মাথার ওপরে সুনীল আকাশ। নিচে স্বচ্ছ জলের বুকে হাজারো জাহাজ। আন্তর্জাতিক জলপথে পণ্যপরিবহনে ব্যস্ত। একের এক পণ্যবোঝাই জাহাজ ছেড়ে যাচ্ছে গন্তব্যে। নৌবাণিজ্যে নতুন নতুন জলপথ উন্মুক্ত হচ্ছে। জলপথে শোনা যায় অপার সম্ভানার ডাক। উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম। সকল জলপথে বাণিজ্য নিয়ে দু’দেশের ব্যবসায়ীরা শোনান উজ্জ্বল সম্ভাবনার কথা। কিন্তু একে এককে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ১০টি প্রোটোকল জলপথ উন্মুক্ত হলেও নাব্যতাসংকটে মুখ থুবড়ে পড়ে অর্থনীতির শঙ্কচিল। অপার সম্ভবনা আটকে যায় জলপথগুলোর গভীরতা তথা নাব্যতাসংকটে।
ড. আতিউর রহমান
জলপথ নিয়ে অপার বাণিজ্যের যে হাতছানি রয়েছে, তাই ফের স্মরণ করিয়ে দিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, গবেষক এবং বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড, আতিউর রহমান। এক সাক্ষাতকারে এই অর্থনীতিবিদ সম্ভবনাময় জলপথগুলো খননে হাত লাগানোর কথা বলেন। জানান উভয় দেশের বাণিজ্যের সম্ভবনাও। ভারতের উত্তরপূর্বঞ্চলের রাজ্যগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের মাথা উচু সম্ভবনার কথাও জানান। (ভিডিও)
ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর মধ্যে অসম ও ত্রিপুরার সঙ্গে বাংলাদেশের পাচটি জলপথ রয়েছে। তার একটি হল ব্রহ্মপুত্র নদে বাংলাদেশের চিলমারী থেকে অসমের ধুবড়ি। কলকাতা থেকে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলে পণ্যবাহী জাহাজ যাতায়তের পথও এটি। অসমের সঙ্গে গুরুত্বপুর্ণ জলপথের মধ্যে বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ থেকে দইখাওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ ধুবড়ি সীমান্তের আগে পর্যন্ত ১৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ জলপথ। তবে এই জলপথটি ব্যবহার করে অসমের ধুবড়ি, পান্ডু ও শিলঘাট পর্যন্ত পণ্যপরিবাহিত হয়ে আসছে। অপর দিকে বাংলাদেশের আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে অসমের জকিগঞ্জ ও বদরপুর পর্যন্ত ২৯৫ কিলোমিটারের অধিক জলপথ রয়েছে। দাউদকান্দি থেকে ত্রিপুরার সোনামুড়া পর্যন্ত ৯১ কিলোমিটারের জলপথটি সর্বশেষ প্রটোকল রুট।

আন্তর্জাতিক জলপথ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে বিআইডব্লিটিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, অসমের সঙ্গে থাকা ব্রহ্মপুত্র নদ এবং আশুগঞ্জ থেকে করিমগঞ্জ পর্যন্ত কুশিয়ারা নদী এই দুই জলপথ খননে ভারত সরকার ৮০ শতাংশ অর্থের জোগান দিচ্ছে। বাকি ২০ শতাংশ বাংলাদেশের। ৮০ শতাংশ অর্থব্যয়ের কারণ, এই জলপথ দু’টো ভারত পণ্যপরিবহনে ব্যবহার করে থাকে। পাশাপাশি বাংলাদেশও ব্যবহার করে আসছে। এর ফলে রাজস্ব যাচ্ছে সরকারের কোষাগারে। এই দু’টি জলপথই ধুঁকছে নাব্যতাহীনতায়।
ড. সালাহ্ উদ্দিন
বাংলাদেশ থেকে উত্তরপূর্বাঞ্চলের রাজ্যে সিমেন্ট রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠান প্রিমিয়ার সিমেন্টের বৈদেশিক বাণিজ্য আধিকারীক ড. সালাহ্ উদ্দিন জানান, তারা ত্রিপুরার সোনামুড়া এবং অসমের করিমগঞ্জে দুটো ট্রায়াল রান করেছেন। তারপরই নদীর জল গিয়ে নিয়মিত পণ্যপরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। অথচ বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা জলপথ ব্যবহার করে বিশেষ ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্যপরিবহনে যথেষ্ট উৎসাহী ছিলেন। কিন্তু নাব্যসংকট সকল সম্ভবনাই আটকে যায়। (ভিডিও)
বাংলাদেশের জলপথ ব্যবহার করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর জন্য পণ্যপরিবহনে আগ্রহ প্রকাশ করে আসছিল ভারত। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালের জুনে ট্রান্সশিপমেন্টের আওতায় আশুগঞ্জ নৌবন্দর ব্যবহার করে প্রথম পণ্যপরিবহন শুরু হয়। এর আগেও মানবিক কারণে বিনা মাশুলে খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যপরিবহনের সুযোগ দেয় বাংলাদেশ। পরবর্তী পর্যায়ে ভারত-বাংলাদেশ জলপথ ব্যবহারে আন্তর্জাতিক নৌ-প্রোটোকলের আওতা বাড়তে থাকে, বর্তমানে যার মধ্যে রয়েছে ১০টি জলপথ। কিন্তু নাব্যতাসংকটের মুখে নৌবাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে।
২০১৮ সালের ১২ নভেম্বর বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রীপরিষদের বৈঠকে ওই দুটো জলপথ খননে ৮০ শতাংশ খরচ ভারত দেবে বলে জানানো হয়। পরবর্তী কালে নৌ-চলাচল সহজ করতে ৪৭০ কিলোমিটার জলপথ খননকাজে হাত লাগায় বাংলাদেশ ও ভারত সরকার। কিন্তু সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আন্তর্জাতিক জলপথ খননের কাজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২০২০ সালের ৯ মার্চ তাঁর কার্যালয়ে মন্ত্রীসভার বৈঠকে সংশোধনী খসড়ায় অনুমোদন দেওয়া হয়। সে দিনের বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম দুই দেশের মধ্যে নৌবাণিজ্য আরও গতিশীল করতে নতুন কয়েকটি ‘পোর্ট অব কল’ ঘোষণা করা ছাড়াও নতুন প্রোটোকল রুট সংযোজনের কথা জানিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, দু’দেশের নৌবাণিজ্য গতিশীল ও কার্যকর করতে নয়াদিল্লি ও ঢাকার মধ্যে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দু’দেশের সম্মতিক্রমে দ্বিতীয় সংশোধনীটি তৈরি করা হয়। প্রস্তাবিত সংশোধনী অনুযায়ী উভয় দেশের সম্মতিক্রমে ভারতের বদরপুর, সোনামুরা ও খোলাঘাট, ময়া ও জগিঘোপা এবং বাংলাদেশের ঘোড়াশাল, দাউদকান্দি, সুলতানগঞ্জ, আরিচা ও বাহাদুরাবাদকে প্রোটোকলের রুটে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
জাতীয় জলপথ ২ অসম রাজ্যের ব্রহ্মপুত্র নদে গঠন করা হয়েছে। নদীর শদিয়া থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত জাতীয় জলপথ ২ এর অন্তর্গত। এই জাতীয় জলপথের দৈর্ঘ্য ৮৯১ কিলোমিটার। এই জলপথে ১১ টি জেটি গড়ে তুলা হয়েছে। যার মধ্যে ১ টি জেটি স্থায়ী (পান্ডু বন্দর) ও বাকি ১০ টি ভাসমান বা অস্থায়ী। জলপথটি ১ সেপ্টেম্বর ১৯৮৮ সালে গঠন করা হয়। বর্তমানে জলপথটি অসমে পণ্যপরিবহনে গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই জলপথে ডিব্রুগড় ও বাংলাদেশ সীমান্তে সংকেত ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে এবং বাতিঘর গঠন করা হয়েছে।