সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের কল্যাণে অন্তর্বর্তী সরকারের গুচ্ছ পদক্ষেপ
- আপডেট সময় : ১১:০৮:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫ ৪১ বার পড়া হয়েছে
নভেম্বরের মধ্যেই গণমাধ্যম সংস্কারের অধ্যাদেশ প্রণয়নের উদ্যোগ
আমরা বিশ্বাস করি, মুক্ত গণমাধ্যমই গণতন্ত্রের সহায়ক শক্তি
আমিনুল হক ভূইয়া, ঢাকা
সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের কল্যাণে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। জাতীয় গণমাধ্যম কমিশন গঠন, সাংবাদিকদের ন্যায্য বেতন-ভাতা নিশ্চিতকরণ, বিজ্ঞাপনের হার পুনর্র্নিধারণ ও প্রচারসংখ্যায় স্বচ্ছতা আনার উদ্যোগসহ অন্তত ১৩টি বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। সময়সীমা সীমিত থাকায় কিছু দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তাব পরবর্তী সরকারের হাতে যাবে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে এসব তথ্য জানান অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার নভেম্বরের মধ্যেই সংবাদমাধ্যম সংস্কার সম্পর্কিত বেশ কিছু অধ্যাদেশ প্রণয়ন করতে চায়। কারণ ২০২৬-এর ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে নভেম্বরে উপদেষ্টা পরিষদের শেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এরপর সরকার নির্বাচন কমিশনের অধীনে দায়িত্ব পালন করবে।

তথ্য উপদেষ্টা বলেন, সংবাদপত্র শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকার বিজ্ঞাপনের হার দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে। তবে সাংবাদিকদের সম্মানজনক বেতন নিশ্চিত না হলে এই সুবিধা দেওয়া হবে না। জনগণের টাকায় আমরা ৯০০ টাকার বিজ্ঞাপন ১৮০০ টাকা করতে পারি, কিন্তু যদি সাংবাদিকরা তার ন্যায্য অংশ না পান, তাহলে সেটি হবে নৈতিক সংকট।
রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) মিলনায়তনে মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে জাতীয় গণমাধ্যম কমিশন, সাংবাদিকদের সম্মানজনক বেতন-ভাতা, মানসম্মত সংবাদপত্র প্রকাশ, বিজ্ঞাপনের মূল্যবৃদ্ধিসহ সংবাদমাধ্যম তথা সাংবাদিকদের কল্যাণে সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। ডিআরইউ নিয়মিত আয়োজন মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ, ডিআরইউ’র সভাপতি আবু সালে আকন, সহসভাপতি গাযী আনোয়ার উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ডিআরইউ’র সাধারণ সম্পাদক মইনুল হাসান সোহেল।
উপদেষ্টা বলেন, এ কারণে অনেক সাংবাদিক অতিরিক্ত কাজ বা রাজনৈতিক প্রভাবে জড়িয়ে পড়েন। তাই সাংবাদিকদের ডিগনিফাইড লাইফ দিতে হবে, এটাই গণমাধ্যম সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য।

বিজ্ঞাপন নির্ধারণে প্রচারসংখ্যার স্বচ্ছতা অপরিহার্য উল্লেখ করে মাহফুজ আলম বলেন, কোনো পত্রিকা যদি ৩ লাখ কপির প্রচারের দাবি করে কিন্তু বাস্তবে দেড় লাখ কপি প্রকাশ করে, তাহলে তারা পূর্ণ বিজ্ঞাপন সুবিধা পাবে না। রাজনৈতিক প্রভাবে বাড়তি বিজ্ঞাপন পাওয়ার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে।
তিনি জানান, ভুয়া প্রচারসংখ্যা দেখিয়ে অনৈতিক সুবিধা নেওয়া বন্ধে তথ্য মন্ত্রণালয় নতুন যাচাই ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের ২৩টি প্রস্তাবের মধ্যে ১৩টি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাকি প্রস্তাবগুলো সময়সাপেক্ষ হওয়ায় পরবর্তী সরকারের মেয়াদে যাবে।
মাহফুজ আলম আরও জানান, নভেম্বরের শেষ বৈঠকের মধ্যেই নীতিমালা বা অধ্যাদেশ আকারে এসব বাস্তবায়ন করা হবে। নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে না।
তথ্য মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে নামসর্বস্ব পত্রিকার তালিকা তৈরি করেছে জানিয়ে মাহফুজ আলম বলেন, যেসব পত্রিকা গত এক বছরেও একটি সংস্করণ ছাপেনি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাংবাদিকদের সমর্থন পেলে নিবন্ধন বাতিলের পদক্ষেপও নেওয়া হবে।

গণমাধ্যমে দলীয় প্রভাব প্রসঙ্গে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গণমাধ্যমে আওয়ামী লীগের প্রভাব কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। যতটা সম্ভব নিরপেক্ষতা রক্ষা করা হয়েছে। শেখ মুজিবের সময়ের মতো কোনো মিডিয়া বন্ধ করা হয়নি, কারণ আমরা বিশ্বাস করি, মুক্ত গণমাধ্যমই গণতন্ত্রের সহায়ক শক্তি।
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ডিসেন্ট বেতন যেন সাংবাদিকরা পান, সে কথা বলে আসছেন তথ্য উপদেষ্টা। বেতনের সমস্যার কারণে আমরা ইউনিয়ন লিডারদের কাছে যাই। তারা আমাদের সেরের দরে বিক্রি করে। গুলশান বনানীতে নিজেদের বাড়ির মালিকানা পায়। ব্যঙের ছাতার মতো শত শত নিউজ পোর্টাল রয়েছে মন্তব্য করে প্রেস সচিব বলেন, যারা অন্যের আর্টিকেল চুরি করে। এদের বিরুদ্ধে কিছু করলে বলে যে গণমাধ্যমে হস্তক্ষেপ। সরকার ইথিকাল জার্নালিজম দেখতে চায়। কেউ যেন কপি না করে। ভালো জার্নালিজমে যারা বিনিয়োগ করে, সেটা প্রটেক্ট করা সরকারের দায়িত্ব।



















