হাজার জনতার সামনে মঞ্চ থেকে শিল্পীর ঘোষণা-আমার কোনো ধর্ম নেই

- আপডেট সময় : ০৯:০৭:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ৫৪ বার পড়া হয়েছে
’আমার কোনো জাত নেই।
আমার কোনো ধর্ম নেই।
আমার কোনো ভগবান নেই।
আমি মুক্ত, আমি কাঞ্চনজঙ্ঘা।’
আমিনুল হক, ঢাকা
ভারতের গুয়াহাটির আকাশ যেন আরও ভারী হয়ে উঠছে। শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো আসামে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী জুবিন গর্গ আর নেই, এই খবর যেন মানতেই পারছে না কেউ। শুক্রবার সিঙ্গাপুরে স্কুবা ডাইভিং করতে গিয়ে তার আকস্মিক মৃত্যু পুরো দেশকে স্তব্ধ করে দিয়েছে।
এই মহান শিল্পীর নাম জুবিন। জুবিন গর্গ। জেন-জির প্রাণের শিল্পী জুবিনদা। কিন্তু অসম এবং উত্তর-পূর্বের তিনি হৃদমন্দিরের সম্রাট। আজন্ম বোহেমিয়ান, বেহিসাবি মানুষটি কারও কাছে মাথা ঝুঁকিয়ে দাঁড়াননি কখনও। পিতৃকুলের পদবি ‘বরঠাকুর’ ছেড়ে হয়েছিলেন ‘গর্গ’। বিশ্বাস করেননি মানুষে মানুষে বিভাজনে। তার তেত্রিশ বছরের সফল কেরিয়ারে যে সৃষ্টি তিনি রেখে গিয়েছেন এর সবটাই ধর্ম-জাতি-ভাষার ঊর্ধ্বে ওঠার আহ্বান। এক উন্নত মানবতার অন্বেষণ। তিনি প্রচারক নন। যা বিশ্বাস করতেন তা নিজের জীবনে পালন করতেন। বলেননি কখনও। বলতেই পারতেন, আমার জীবনই আমার বাণী।
শেষবারের মতো প্রিয় শিল্পীকে একনজর দেখতে রাস্তায় নেমেছে হাজারো মানুষ। তবুও রয়ে গেছে অজানা প্রশ্ন, কীভাবে ঘটল এই মৃত্যু? ধোঁয়াশার মাঝেই আসাম সরকার নিয়েছে বিশেষ সিদ্ধান্ত। আসাম সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার ফের একবার ময়নাতদন্ত করা হবে প্রয়াত এই সংগীতশিল্পীর।

শিল্পী জুবিনের প্রয়ানের বিষয়ে লিখতে গিয়ে চোখের পাতা ভারী ওঠে। বার বার চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক মানবশিল্পীর মুখ-নাম তার এস এম সুলতান। বিশ্বনন্দিত চিত্র শিল্পী। বাংলাদেশের গৌরব। মহান এই শিল্পীর সঙ্গে তার নড়াইলের মাছিমদিয়ার বাড়িতে একপাতে খাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। আকাশের মতো উদার আর নদের মতো গভীর তার মন। আমৃত্যু মানববন্দনা করে গিয়েছেন তার চিত্র কর্মের ভাষায়। বিশ্বের মানবজাতিকে এক সূতোয় বেধেছেন শিল্পী এস এম সুলতান। মনে পড়ে বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক ভবন হবার পর এস এস সুলতানের বিশাল চিত্র কর্ম স্থান পেয়েছিলো ভবনের নিচতলায়। যেখানে প্রতিনিয়ত হাজারো মানুষ চিত্রকর্মটি প্রত্যক্ষ করেছেন। আন্ডাগ্রাউন্ডে শিল্পকর্মটির চূড়ান্ত কাজ করার সময় শিল্পীর সাক্ষাতকার নিয়েছিলাম।
আসাম রাজ্যের একাধিক সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত আমি। এক সময় সেখানকার টেলিভিশনেও কাজ করেছি। শিল্পী জুবিন গর্গ-এর শেষ বিদায়ে আসামের রাজপথে নেমে আসে মানব স্রোত। চোখের জলে জুবিনের শেষ যাত্রা ভেসে যায়। জুবিন যে সৃষ্টি রেখে গিয়েছেন তার পুরোটাই ধর্ম-জাতি-ভাষার ঊর্ধ্বে ওঠার আহ্বান। যা কিনা মানবিক স্পর্শ জাগিয়ে তোলে। জুবিনের জন্য প্রার্থনা কারো কাছে চাইতে হয়নি। আত্মার টানে লাখো লোকাতুর মানুষ নেমে আসেন রাজপথে। শেষ যাত্রার বিদায় জানান।

জুবিন গর্গ-এর প্রতি মানুষের ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে আমেরিকা প্রবাসী মোহিতুশ তালুকদার তাপস লিখেন, জানি না ক’জন শিল্পী এভাবে লক্ষ কোটি মানুষের মনে জায়গা করতে পেরেছে। গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে জুবিনময় সময় কাটাচ্ছি। আমি অভিভূত। একজন শিল্পী কিভাবে সাধারণ মানুষের মনে এভাবে জায়গা করতে পারলেন! আহা, স্বার্থক মানব জীবন। স্বার্থক শিল্পী জীবন। আসাম রাজ্যের প্রতিটি মানুষকে শ্রদ্ধা জানাই। ভাই, আপনারা দেখিয়ে দিলেন একজন শিল্পীকে কিভাবে শেষ বিদায় জানাতে হয়। ভালোবাসা আপনাদের জন্য। শ্রদ্ধা আপনাদের জন্য।
ভারতের সংবাদমাধ্যম জানায়, জুবিনের মৃত্যু নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি তুলেছেন, জুবিনের ফের একবার ময়নাতদন্ত করা হোক। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে একটি স্কুবা ডাইভিংয়ের ভিডিও। অনেকেই সেই ভিডিও দেখে প্রশ্ন তুলেছেন বিভিন্ন রকম। অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তার মৃত্যুর কারণ নিয়ে। জুবিন সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন একটি অনুষ্ঠান করতে। সেখানে গিয়ে স্কুবা ডাইভিং করতে গিয়েই ঘটে দুর্ঘটনা।
শোনা যাচ্ছে, জুবিন নাকি ভয় পেতেন পানিতে, তাহলে কেন তিনি স্কুবা ডাইভিং করতে নামলেন? তাকে কি কেউ জোর করেছিল? জুবিন যে স্কুবা ডাইভিং করতে নেমেছিলেন, সেখানে যথেষ্ট নিরাপত্তা ছিল তো? জুবিনের সঙ্গে একটা টিম গিয়েছিল সিঙ্গাপুর। সেখানে ছিলেন জুবিনের ম্যানেজার। এরই মধ্যে তার নামে এফআইআর দায়ের হয়েছিল। তবে জুবিনের স্ত্রী আবেদন করেন এই এফআইআর তুলে নেওয়ার জন্য।