সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের জীবনে আলো জ্বালাতে চান ডা. পার্থ কর্মকার
- আপডেট সময় : ০৭:২৯:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২৪০ বার পড়া হয়েছে
আমিনুল হক ভূইয়া, ঢাকা
আবরণ সরিয়ে কক্ষে ঢুকতেই দীর্ঘ অপেক্ষার ক্লান্তি মুছে গেলো তার স্মিত হাসিতে। কেমন আছেন, প্রশ্ন করে কবে আসলেন জানতে চেয়ে পরীক্ষার কাগজপত্রের জন্য হাত বাড়ালেন। সব কিছু দেখে একমুখ হাসি ছড়িয়ে বলেন, চমৎকার। এর আগেও তাকে দেখিয়েছি। তার পরামর্শ চমৎকার। ৫ সেপ্টেম্বর (২০২৫) সব রিপোর্ট দেখে নিয়ে বললেন, কিডনির জন্য একটি দামি ওষুধ দিচ্ছি। একমাস পর ফলোআপ। আর লাল মাংস এড়িয়ে চলতে হবে। আশা রাখছি ভালো থাকবেন।
সহকারী তমালিকার সহায়তায় ডাক্তার বাবু দেখিয়ে প্রেসক্রিপশন হাতে বেড়িয়ে এলাম। তখন বিকাল গড়িয়ে। কক্ষের সামনে তখনো লম্বা লাইন। দূরদুরান্ত থেকে নারী-পুরুষ এসেছেন ডাক্তার বাবুকে দেখাতে। তার চোখে-মুখে নেই কোন বিরক্তির ছাপ। রোগ মুক্তির অন্যতম মেডিসিন হচ্ছে হাসি-খুশি থাকা। রোগীর সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করা। তার মধ্যে এই বিষয়টি ষোল আনাই রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থান থেকে অসুস্থ ব্যক্তিরা বিশেষ করে কিডনি জটিলতায় ভুগছেন, এমন ব্যক্তিরা তার পরামর্শ নিতে আসেন এবং বেশ স্বাচ্ছন্দবোধ করেন।

মানবিক এই চিকিৎসকের নাম ডাক্তার ‘পার্থ কর্মকার’। বর্তমানে পশ্চিবঙ্গের মুকন্দপুর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-নারায়ণা হাসপাতালের নেফ্রোলজি তথা কিডনি বিভাগের একজন সুপরিচিত চিকিৎসক।
ডা. পার্থ বাবুর প্রথম পরমর্শ নেই ২০২২ সালে। সময়টা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ। শীতের হাল্কা আমেজ। বন্ধু রায়হানের সঙ্গে প্রথম দেখাতে যাই। রায়হানের একটি কিডনির সফল ট্রান্সপ্লান্ট করেছেন ডা. পার্থ কর্মকার। এরপর সুস্থ হয়ে ঢাকায় ফেরেন এবং তার ঘর আলো করে সন্তান আসে। কলকাতায় যাবার পথে রায়হানই তার জীবনের কথা বলতে গিয়ে এই চিকিৎসকের গল্প শুনয়েছিলো। তার কথায় আমার মাঝে এক প্রকার উত্তেজনা কাজ করতে থাকে। রায়হান এও বলেছিলেন, কিডনি পরিবর্তনের পর কয়েকদিন আমার জ্ঞান ছিলো না। সেই সময়টাতে ডাক্তার বাবু রাত-দিন পর্যবেক্ষণে রেখেছেন, হাসপাতালে থেকেছেন। এই ঋণ শোধ করার শক্তি আমার নেই। রায়হানের গলার স্বর ভারী হয়ে ওঠে।

পরদিন বেলা ১২টা নাগাদ হাসপাতালে গিয়ে ডা. পার্থ বাবুকে দেখালাম। প্রথম সাক্ষাতেই মানবিকতার প্রমাণ মিললো। তিনিই আমাকে রক্তচাপের ‘হাই পাওয়ারের’ ওষুধ থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। সেদিনও তার কক্ষের সামনে অপেক্ষামান মানুষের ভিড় ছিলো। সবার হাতে কাগপত্রের ফাইল। এগুলো ব্যবস্থাপত্র এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাগজ। যত্নসহকারে সঙ্গে নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন, কখন ডাকবেন ডাক্তার বাবু। পায়ে পায়ে এগিয়ে গিয়ে দেখা গেল দরজায় লেখা ডা. পার্থ কর্মকার।
অনেকটা সময় নিয়ে একজন রোগী কক্ষ থেকে বেড়িয়ে আসছেন, ফের অপরজনের ডাক পড়ছে। ডাক্তার বাবুর চিকিৎসা নিচ্ছেন এমন একজন বলেন, তিনি বেশ কিছুদিন যাবত পার্থ বাবুর পেশেন্ট। ডাক্তার বাবু সময় নিয়ে দেখেন, সুবিধা-অসুবিধা সব শোনে এবং তারপর চিন্তাভাবনা করে পরামর্শ ও ব্যবস্থাপত্র দিয়ে থাকেন। একারণে অপক্ষো করেও ডাক্তার বাবুকে দেখানোর আগ্রহ অনেকের।
ইমপেথি
পার্থ কর্মকার একজন বিশিষ্ট কিডনী বিশেষজ্ঞ। দেশ-বিদেশের অনেক রোগী তার চিকিৎসা নিয়ে সন্তুষ্ট। তিনি যে কোন রোগীকে ‘ইমপেথি’ তথা সমব্যথি বা সমানুভূতির সঙ্গে দেখে থাকেন। তিনি মনে করেন, কোন ব্যক্তির আবেগ-অনুভূতি বোঝার ও তার অংশীদার হবার মানুষিকতা থাকতে হবে। একজন চিকিৎসকের এটি অন্যতম গুণাবলি।

সমাধান খোঁজেন
মুখে তার স্মিত হাসি। রোগীর কাছ থেকে মোলায়েম কণ্ঠে নানা দিক জেনে নিয়ে রোগীর অসুবিধারগুলো ব্যবস্থাপত্র দেন। তার সঙ্গে পরিচয় হয়ে মনে হয়েছে, সমস্যা খুঁজতে তিনি অধ্যাত্মিকতায় ডুব দেন। কারণ সমস্যার মূলে প্রবেশ করেই তো সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। তিনিও তার ব্যাতিক্রম নন। তার সন্তুষ্টি হলেই স্মিত হেসে পরামর্শ দিয়ে ব্যবস্থাপত্র লিখেন। নিজের আত্মসন্তুষ্টি চিকিৎসা পেশার বড় সম্পদ মনে করেন পার্থ বাবু।
হাজারও ব্যস্ততায়ও সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কাজ করা থেকে পিছিয়ে নেই মানবিক এই চিকিৎসক। জানালেন, নানা রকমের সামাজিক কাজকর্মতো রয়েছেই। দায়িত্ব থেকেই তাকে এটি করতে হয়। সেমিনার-সিম্পোজিয়াম ও পেশাগত নানা আয়োজনে উপস্থিত হয়ে কথা বলতে হয় তাকে।
সমাজ সেবা
চিকিৎসকের পরামর্শের পাশাপাশি রোগীদেরও দায়িত্ব রয়েছে। কোন রোগী যদি পরামর্শ মেনে না চলেন, তা হলে চিকিৎসাসেবার ফল পাওয়াটা কষ্টকর। এক্ষেত্রে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। তাছাড়া রোগাক্রান্ত হবার আগেই যদি আমরা ক্ষতিকর দিকগুলো এড়িয়ে চলতে পারি, তাহলে কিন্তু অনেক কঠিন রোগ থেকেও মুক্ত থাকতে পারব, বলেন ডাক্তার পার্থ বাবু।
বর্তমান জলবায়ু সংকটের মুখে পৃথিবী। তথ্য-প্রযুক্তির যুগে মানুষের শারীরিক পরিশ্রম কমে আসার পাশাপাশি বে-হিসাবী লাইফ স্টাইল। তাতে করে সমাজিকভাবে নানা সমস্যার সঙ্গে রোগবালাইয়ের প্রার্দুভাবও বহুলাংশে বেড়েছে। কঠিন রোগ ছড়াচ্ছে আশঙ্কাজনক ভাবে। নানা রকমের রোগের চিকিৎসা নিতে গিয়ে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মানুষ।

পরামর্শ
এসব থেকে নিস্তার পেতে লাইফ স্টাইল পরিবর্তন ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভাসে মানিয়ে নিতে হবে। তারপরও দুনিয়ায় নানা রকমের রোগবালাই ছড়াচ্ছে। এটি কেবল এদেশেই নয়, উন্নত বিশ্বও পিছিয়ে নেই। ফলে স্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবন-যাপনে অভ্যস্ত এবং সচেতনতার কোন বিকল্প নেই।
আর যারা আক্রান্ত হয়েছেন এবং ডাক্তারের চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদেরকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মান্যতায় নিতে হবে। মনে রাখবেন সচেতনতাই আগামীর পরিচ্ছন্ন পথের দিশা দেবে। একজন চিকিৎসক প্রবলভাবে তার রোগীর কল্যাণ ও দীর্ঘায়ু কামনা করে থাকেন।
একজন রোগীকে সুস্থ করে তোলার বিষয়ে যার পর নাই ভাবতে হয়, চিন্তা করে পরামর্শ ও ব্যবস্থাপত্র দিতে হয়। তাই আসুন ডা. পার্থ বাবুর সঙ্গে আমরাও গলা মেলাই ‘চিকিৎসা নিয়ে সচেতন হবো, পরামর্শ মান্যতায় নিয়ে সুস্থ জীবন কাটাব।














