শ্রদ্ধা ভালোবাসায় বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পালন

- আপডেট সময় : ০৩:০৫:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মার্চ ২০২৩ ১৮১ বার পড়া হয়েছে

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনকের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : ছবি সংগ্রহ
তার জন্ম না হলে বাংলাদেশ হতো
অনিরুদ্ধ
বঙ্গবন্ধুর ১০৩তম জন্মদিন ঘিরে আনন্দ-উৎসব আর নানা আয়োজনে দিনটি পালন করা হয়। সকালে ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু বাসভবনের সামনে প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সর্বস্তরের মানুষ। এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো পর সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে। এদিন জন্মস্থান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা ও বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রী পরিষদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ছাড়াও স্থানীয় সাধারণ মানুষ জন্মদিনের আয়োজনে অংশ নেন।
ধানমন্ডি লেকের তীরে বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ প্রতিকৃত। গ্রীষ্মের ঝিরিঝিরি বাতাসে লেকে জলে হাল্কা ঢেউ নেচে চলে। মোলায়েম পরিবেশ।
প্রতিকৃতিতে লেখা অন্নদা শঙ্কর রায়ের কালজয়ী কবিতা-
‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান,
ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান’
আবক্ষ প্রতিকৃত ঘিরে সকাল থেকেই মানবঢল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লাইন দীর্ঘ হয়। কত মানুষ হবে? মাঝ বয়সী একজনের স্বাভাবিক উত্তর, অগুনতি।

বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার শপদে
সামনে এগিয়ে যেতে যেতে চোখে পড়ে দূরদুরান্ত থেকে আসা সংগঠনের নেতাকর্মীরা ব্যানারে পর ব্যানার নিয়ে সামনে এগিয়ে চলেছেন। তাদের চোখে মুখে সে কি উচ্ছ্বাস। এতোটা ভোর বেলায় এসেও ক্লান্তিহীন। অনেকেই তাদের অনুভূতি জানিয়ে বলেন, এই দিনটির জন্য তারা অপেক্ষায় থাকেন।
জাতিরজনেকের জন্মদিনে বাংলাদেশজুড়েই আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ নানা আয়োজন চলে।
ধীর পায়ে এসে বঙ্গবন্ধু প্রতিকৃতির সামনে দাঁড়ালেন এক নারী। চোখে মুখে তার দৃঢ় প্রত্যাশা। আজকের বাংলাদেশ নিয়ে তার গর্ব কিছুটা বেশিই। বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে এই আওয়ামী লীগ নেত্রী এস কে জাহান স্মৃতি বলেন, বঙ্গবন্ধু না হলে বাংলাদেশ হতো না। তার জন্মদিন মানেই বাংলার মানুষের মাথা উচু করে দাড়াবার দিন।
কথা বলতে গিয়ে অনেকটা স্মৃতির গলি পথে হাটেন, বলেন, মার্চ হচ্ছে অগ্নিগর্ভ একটি মাস। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে স্বাধিকার আদায়ের লড়াইয়ে ঝাপিয়ে পড়ার ডাক দেন। ৭১’র মার্চ মাস পাকিস্তানি স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে বাঙালির অধিকার আদায়ের মাস।
নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, ৩০ লাখ শহীদ ও অগণন মাবোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর লালসবুজ খচিত পতাকা অর্জন করে বীর বাঙলী। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাৎপর্যপূর্ণ এই দিনটিকে স্মরণ করে প্রতি বছর গভীর শ্রদ্ধা ও ভাবগম্ভীর্যের মাধ্যমে দিনটি পালন করে বাঙালি জাতি।
বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর একটি অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার কথা তিনি বলেছেন, তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ১০ই জানুয়ারীর বক্তব্যে। এস কে জাহানের মূল্যায়ন বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চের ভাষণই হচ্ছে বাঙালির মুক্তির সনদ।
গলা ধরে আসে তার। বলেন, মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল ১৯৪৮-এর ১১ মার্চ। এদিন রাষ্ট্রভাষার দাবিতে বাংলার ছাত্রসমাজ প্রথম প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। এরই ধারাবাহিকতায় ৪৮-৫২ ভাষা আন্দোলন, ৬২-তে শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬-তে ৬ দফা আন্দোলন এবং ৬৯-এর ১১দফা আন্দোলনের পথ বেয়ে ১৯৭১-এর ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জনসমুদ্রে হাজির হলেন গণনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেদিনের ভাষণই আজ বিশ্বহিরিটেজ।
ক্যালেন্ডারের পাতায় মার্চ মাসটি বাঙালির কাছে ‘অগ্নিঝরা মার্চ’ হিসাবে চিহ্নিত। আর বিশ্বে এক মানব দেবতার জন্ম ও সংগ্রামের ইতিহাস হিসাবে বিবেচিত। এই মার্চ মাসেই বাঙলার অবিসংবাদীত নেতা, বাঙলালি জাতির মুক্তির দিশারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম। দিনটি ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ। স্থান অবিভক্ত ভারতের পূর্ববঙ্গের ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি ভারত বিভাজন আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং পরবর্তীকালে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন। তিনি আমাদের জাতির পিতা, বাঙলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।