ঢাকা ০৫:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
গণতন্ত্র রক্ষার দাবিতে আমেরিকা জুড়ে ট্রাম্পবিরোধী ‘নো কিংস’ ঝড় লিবিয়া থেকে দেশে ফিরছেন আরও ৩০০ বাংলাদেশি পাটপণ্যের পুনর্জাগরণে ১০০ কোটি টাকার ফান্ড, টেকসই উন্নয়নে নতুন দিগন্তের আহ্বান কার্গো ভিলেজে আগুনে ছাই ১২ হাজার কোটি টাকার পণ্য, পুড়েছে স্বপ্নও ১ নভেম্বর থেকে এমপিও শিক্ষকদের নতুন বাড়িভাড়া ভাতা কার্যকর ভিসতা-ডিআরইউ ক্রীড়া উৎসব পুরুষ আর্চারিতে চ্যাম্পিয়ন তামিম হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত এক যুগের অগ্নিকাণ্ড ঢাকার প্রধান বিমানবন্দরে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড, ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ জুলাই সনদ অনুষ্ঠান ঘিরে সংঘর্ষ-উত্তেজনা,  মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের ঘটনায় ৯০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা বিশাখাপত্তনমে খুলছে ভারতের দীর্ঘতম গ্লাস স্কাইওয়াক, আকাশ, পাহাড় আর সমুদ্র মিলবে এক সেতুবন্ধনে

গণতন্ত্র রক্ষার দাবিতে আমেরিকা জুড়ে ট্রাম্পবিরোধী ‘নো কিংস’ ঝড়

ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০২:৪৪:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫ ১৯ বার পড়া হয়েছে

গণতন্ত্র রক্ষার দাবিতে আমেরিকা জুড়ে ট্রাম্পবিরোধী ‘নো কিংস’ ঝড়

ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে লাখো মানুষ রাস্তায় নেমেছেন। শনিবার দেশজুড়ে অনুষ্ঠিত এই ‘নো কিংস’ বা রাজা মানি নাআন্দোলনের আওতায় দুই হাজার ৬০০-এরও বেশি স্থানে সমাবেশ ও বিক্ষোভ হয়েছে। আয়োজক সংগঠন ‘ইনডিভিজিবল’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা লিয়া গ্রিনবার্গ বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ‘আমাদের কোনো রাজা নেই’ বলার চেয়ে বেশি আমেরিকান কিছু হতে পারে না।

জানুয়ারিতে ক্ষমতা নেওয়ার পর ট্রাম্প প্রশাসনের নানা পদক্ষেপ যে দ্রুত গণতান্ত্রিক চর্চাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে—এমন অভিযোগ তুলে এ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। আয়োজকরা জানান, এদিন যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ২০ থেকে ৩০ লাখ মানুষ সমাবেশে অংশ নিয়েছেন।

বিক্ষোভের পরিবেশ ছিল উৎসবমুখর। বিভিন্ন শহরে বেলুন, কার্টুন চরিত্রের পোশাক, এমনকি শিশু ও পোষা প্রাণীসহ পরিবারের অংশগ্রহণে সমাবেশগুলো রঙিন হয়ে ওঠে। নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে এক লাখেরও বেশি মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে সমবেত হলেও কোনো গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেনি। বোস্টন, ফিলাডেলফিয়া, ডেনভার, আটলান্টা, সিয়াটল ও লস এঞ্জেলেসসহ বড় শহরগুলোতেও হাজারো মানুষ অংশ নেন।

গণতন্ত্র রক্ষার দাবিতে আমেরিকা জুড়ে ট্রাম্পবিরোধী ‘নো কিংস’ ঝড়
গণতন্ত্র রক্ষার দাবিতে আমেরিকা জুড়ে ট্রাম্পবিরোধী ‘নো কিংস’ ঝড়

সিয়াটলে এক মাইলজুড়ে মানুষ ভরে যায় স্পেস নিডল এলাকার রাস্তায়। স্যান ডিয়েগোতে পুলিশের হিসাব অনুযায়ী ২৫ হাজারের বেশি মানুষ অংশ নেন। আটলান্টা ও ওয়াশিংটন ডিসিতেও একইভাবে বিপুল জনসমাগম দেখা গেছে।

বিক্ষোভকারীরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের অভিযোগ তোলেন। তারা বলেন, অভিবাসীদের দমন, ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন, গণমাধ্যমের ওপর চাপ ও প্রশাসনে অনুগত ব্যক্তিদের নিয়োগের মাধ্যমে ট্রাম্প গণতন্ত্রকে দুর্বল করছেন।

ওয়াশিংটন ডিসিতে বিক্ষোভকারীদের হাতে দেখা গেছে নানা ব্যঙ্গচিত্র ও প্ল্যাকার্ড—কেউ রিপাবলিকান নেতৃত্বকে ‘ইসরায়েলের দালাল’ বলেছেন, কেউ বা ট্রাম্পকে ‘স্বৈরাচারী’ আখ্যা দিয়েছেন।

সাবেক সেনা সদস্যরাও ছিলেন এই আন্দোলনে। হিউস্টনে মেরিন কর্পসের ভেটেরান ডেনিয়েল গামেজ বলেন, “এই মুহূর্তে দেশ কী পথে যাচ্ছে তা বুঝতে পারছি না।” অরেগনের পোর্টল্যান্ডে ৭০ বছর বয়সী কেভিন ব্রাইসের গায়ে লেখা ছিল—No Kings Since 1776। তিনি বলেন, “আমি আজীবন রিপাবলিকান, কিন্তু এখন দলের পথকে সমর্থন করতে পারছি না।”

তেল শিল্পে কর্মরত সাবেক রিপাবলিকান স্টিভ ক্লপ বলেন, “আমাদের দল আজ যেভাবে এক ব্যক্তির স্বার্থে কাজ করছে, তা দেখা কষ্টের।”

গণতন্ত্র রক্ষার দাবিতে আমেরিকা জুড়ে ট্রাম্পবিরোধী ‘নো কিংস’ ঝড়
গণতন্ত্র রক্ষার দাবিতে আমেরিকা জুড়ে ট্রাম্পবিরোধী ‘নো কিংস’ ঝড়

ডেনভারের কেলি কিনসেলা লেডি লিবার্টির পোশাক পরে অংশ নেন বিক্ষোভে। তার মতে, “মূল্যস্ফীতি ও আর্থিক চাপের জন্য ট্রাম্পের নীতি দায়ী।”

শনিবারের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে কোথাও বড় কোনো সংঘর্ষ হয়নি। ট্রাম্প এ বিষয়ে নীরব থাকলেও শুক্রবার ফক্স বিজনেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “ওরা আমাকে রাজা বলতে চায়, কিন্তু আমি রাজা নই।”

ডেমোক্র্যাট নেতারা এই আন্দোলনে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছেন। সিনেট নেতা চাক শুমার ও কংগ্রেস সদস্য আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ একে ‘গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলন’ বলে অভিহিত করেছেন।

অন্যদিকে রিপাবলিকান নেতারা একে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী কর্মসূচি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন বলেন, “এই বিক্ষোভ দেশবিরোধী ঘৃণার প্রতিফলন।”

তবে আয়োজকরা বলছেন, ‘নো কিংস’ বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের মূল চেতনা—ক্ষমতার ভারসাম্য ও গণতন্ত্রের পক্ষেই এক দৃপ্ত ঘোষণা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

গণতন্ত্র রক্ষার দাবিতে আমেরিকা জুড়ে ট্রাম্পবিরোধী ‘নো কিংস’ ঝড়

আপডেট সময় : ০২:৪৪:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে লাখো মানুষ রাস্তায় নেমেছেন। শনিবার দেশজুড়ে অনুষ্ঠিত এই ‘নো কিংস’ বা রাজা মানি নাআন্দোলনের আওতায় দুই হাজার ৬০০-এরও বেশি স্থানে সমাবেশ ও বিক্ষোভ হয়েছে। আয়োজক সংগঠন ‘ইনডিভিজিবল’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা লিয়া গ্রিনবার্গ বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ‘আমাদের কোনো রাজা নেই’ বলার চেয়ে বেশি আমেরিকান কিছু হতে পারে না।

জানুয়ারিতে ক্ষমতা নেওয়ার পর ট্রাম্প প্রশাসনের নানা পদক্ষেপ যে দ্রুত গণতান্ত্রিক চর্চাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে—এমন অভিযোগ তুলে এ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। আয়োজকরা জানান, এদিন যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ২০ থেকে ৩০ লাখ মানুষ সমাবেশে অংশ নিয়েছেন।

বিক্ষোভের পরিবেশ ছিল উৎসবমুখর। বিভিন্ন শহরে বেলুন, কার্টুন চরিত্রের পোশাক, এমনকি শিশু ও পোষা প্রাণীসহ পরিবারের অংশগ্রহণে সমাবেশগুলো রঙিন হয়ে ওঠে। নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে এক লাখেরও বেশি মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে সমবেত হলেও কোনো গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেনি। বোস্টন, ফিলাডেলফিয়া, ডেনভার, আটলান্টা, সিয়াটল ও লস এঞ্জেলেসসহ বড় শহরগুলোতেও হাজারো মানুষ অংশ নেন।

গণতন্ত্র রক্ষার দাবিতে আমেরিকা জুড়ে ট্রাম্পবিরোধী ‘নো কিংস’ ঝড়
গণতন্ত্র রক্ষার দাবিতে আমেরিকা জুড়ে ট্রাম্পবিরোধী ‘নো কিংস’ ঝড়

সিয়াটলে এক মাইলজুড়ে মানুষ ভরে যায় স্পেস নিডল এলাকার রাস্তায়। স্যান ডিয়েগোতে পুলিশের হিসাব অনুযায়ী ২৫ হাজারের বেশি মানুষ অংশ নেন। আটলান্টা ও ওয়াশিংটন ডিসিতেও একইভাবে বিপুল জনসমাগম দেখা গেছে।

বিক্ষোভকারীরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের অভিযোগ তোলেন। তারা বলেন, অভিবাসীদের দমন, ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন, গণমাধ্যমের ওপর চাপ ও প্রশাসনে অনুগত ব্যক্তিদের নিয়োগের মাধ্যমে ট্রাম্প গণতন্ত্রকে দুর্বল করছেন।

ওয়াশিংটন ডিসিতে বিক্ষোভকারীদের হাতে দেখা গেছে নানা ব্যঙ্গচিত্র ও প্ল্যাকার্ড—কেউ রিপাবলিকান নেতৃত্বকে ‘ইসরায়েলের দালাল’ বলেছেন, কেউ বা ট্রাম্পকে ‘স্বৈরাচারী’ আখ্যা দিয়েছেন।

সাবেক সেনা সদস্যরাও ছিলেন এই আন্দোলনে। হিউস্টনে মেরিন কর্পসের ভেটেরান ডেনিয়েল গামেজ বলেন, “এই মুহূর্তে দেশ কী পথে যাচ্ছে তা বুঝতে পারছি না।” অরেগনের পোর্টল্যান্ডে ৭০ বছর বয়সী কেভিন ব্রাইসের গায়ে লেখা ছিল—No Kings Since 1776। তিনি বলেন, “আমি আজীবন রিপাবলিকান, কিন্তু এখন দলের পথকে সমর্থন করতে পারছি না।”

তেল শিল্পে কর্মরত সাবেক রিপাবলিকান স্টিভ ক্লপ বলেন, “আমাদের দল আজ যেভাবে এক ব্যক্তির স্বার্থে কাজ করছে, তা দেখা কষ্টের।”

গণতন্ত্র রক্ষার দাবিতে আমেরিকা জুড়ে ট্রাম্পবিরোধী ‘নো কিংস’ ঝড়
গণতন্ত্র রক্ষার দাবিতে আমেরিকা জুড়ে ট্রাম্পবিরোধী ‘নো কিংস’ ঝড়

ডেনভারের কেলি কিনসেলা লেডি লিবার্টির পোশাক পরে অংশ নেন বিক্ষোভে। তার মতে, “মূল্যস্ফীতি ও আর্থিক চাপের জন্য ট্রাম্পের নীতি দায়ী।”

শনিবারের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে কোথাও বড় কোনো সংঘর্ষ হয়নি। ট্রাম্প এ বিষয়ে নীরব থাকলেও শুক্রবার ফক্স বিজনেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “ওরা আমাকে রাজা বলতে চায়, কিন্তু আমি রাজা নই।”

ডেমোক্র্যাট নেতারা এই আন্দোলনে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছেন। সিনেট নেতা চাক শুমার ও কংগ্রেস সদস্য আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ একে ‘গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলন’ বলে অভিহিত করেছেন।

অন্যদিকে রিপাবলিকান নেতারা একে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী কর্মসূচি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন বলেন, “এই বিক্ষোভ দেশবিরোধী ঘৃণার প্রতিফলন।”

তবে আয়োজকরা বলছেন, ‘নো কিংস’ বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের মূল চেতনা—ক্ষমতার ভারসাম্য ও গণতন্ত্রের পক্ষেই এক দৃপ্ত ঘোষণা।