ক্ষ্যাপা যমুনার গ্রাস থেকে রক্ষায় শাহজাদপুরের ৯ গ্রামের মানুষ
- আপডেট সময় : ১১:৪৯:৩০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫ ৪৭ বার পড়া হয়েছে
বহু মানুষের জীবনের হিসাব যেন নদীর খাতায় মুছে যাচ্ছে একে একে।
যমুনা যখন ক্ষমাহীন, তখন শাহজাদপুরের মানুষ শুধু প্রার্থনা করছে,
নদী যদি নেয়, তবে একদিন ফেরতও দিক-এক টুকরো ভিটে, একটুখানি জীবন।
যমুনার পাড়ের মানুষের মুখে এখন শুধু একটাই প্রশ্ন, কবে থামবে এই ক্ষমা না জানা নদীর ভাঙন?
আমিনুল হক ভূইয়া, ঢাকা
অসময়ের যমুনা যেন এক উন্মত্ত জন্তুর মতো। বর্ষা-শরৎ পেরিয়ে হেমন্ত এলেও শান্ত হয়নি তার প্রবল স্রোত, থামেনি ভয়াবহ ভাঙন। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার সোনাতনী ও গালা ইউনিয়নের ৯টি গ্রামে প্রতিদিন যমুনার খেয়ালি ঢেউ গিলে নিচ্ছে জমি, ঘরবাড়ি, মানুষজনের আশ্রয় ও আশা।
চলতি বছর বর্ষার শুরুতেই ভাঙন শুরু হয়। নদীর ভাঙন রোধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় এখন শুষ্ক মৌসুমেও চলছে ধ্বংসযজ্ঞ। এরই মধ্যে ৫০০-র বেশি বাড়িঘর, দুটি মসজিদ, দুটি মাদরাসা, একটি কবরস্থান এবং শ’ শ’ বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ধীতপুর-কুরসি গ্রামের হাট-বাজারগুলোও অর্ধেক নদীর পেটে চলে গেছে।
যমুনার পাড় ঘেঁষে দাঁড়ালে দেখা যায়—যেখানে এক মাস আগেও ছিল ফসলের ক্ষেত আর মানুষের ঘরবাড়ি, এখন সেখানে অথৈ পানি।
ধীতপুর গ্রামের কৃষক আব্দুস সাত্তার প্রামাণিক বললেন, আমরা ১৯৮৮ সাল থেকেই এই ভাঙন দেখছি। ১০-১২ বার ঘর তুলেছি, আবার যমুনা কেড়ে নিয়েছে। নদীর তীরে দিন কাটে ভয়ে, রাত কাটে আতঙ্কে।
স্থানীয় নারী চম্পা বেগম কণ্ঠরোধ করে বলেন, এই মাঠেই ছিল আমাদের ধান আর বাদামের ফসল। সব গেছে নদীর তলায়। এখন ভাঙনের শব্দ শুনলেই বুক কেঁপে ওঠে।

সোনাতনী ইউনিয়নের বিএনপি সভাপতি শামছুল হক জানান, শ্রীপুর থেকে বারপাখিয়া পর্যন্ত প্রায় পাঁচশ’ ঘরবাড়ি, দুটি মসজিদ ও দুটি মাদরাসা নদীতে চলে গেছে। মানুষ আজ দিশেহারা। ভাঙন ঠেকাতে এখানে দ্রুত বাঁধ নির্মাণ ছাড়া উপায় নেই।
শাহজাদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, গত পাঁচ-ছয় বছরে এ দুটি ইউনিয়নের প্রায় ২৭০ হেক্টর ফসলি জমি নদীগর্ভে হারিয়েছে। শুধু গত কয়েক মাসেই ভাঙনে বিলীন হয়েছে ৭০ থেকে ১০০ হেক্টর আবাদি জমি। ফলে কৃষকের ক্ষতি অপূরণীয়। নদীর বিপরীত তীরে ৮০-৯০ হেক্টর চর জেগে উঠেছে, কিন্তু তা এখনো আবাদযোগ্য নয়।
তিনি আরও জানান, কৃষি বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা দিচ্ছে—যাতে তারা অন্তত পরের মৌসুমে আবার নতুন করে চাষ শুরু করতে পারে।
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, কুরসি-ধীতপুর ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জিও ব্যাগ ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা দ্রুত কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছে।
তবুও যমুনার পাড়ের মানুষের মুখে এখন শুধু একটাই প্রশ্ন, কবে থামবে এই ক্ষমা না জানা নদীর ভাঙন? যেখানে একসময় শিশুরা খেলত, কৃষকরা ফসল তুলত, সেখানেই আজ গিলে খাচ্ছে নদী তাদের ভবিষ্যৎ।











